রবিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

আবার যেন অন্ধকারে না পড়ি : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

আবার যেন অন্ধকারে না পড়ি : প্রধানমন্ত্রী

রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে গতকাল আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের যারা মন্ত্রী বানিয়েছিলেন, লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত পতাকা যারা এদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন, তাদের ব্যাপারে জাতিকে সচেতন থাকতে হবে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর স্বাধীনতা বিরোধীরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসে যে অবস্থা তৈরি করেছিল, আবার আমাদেরকে যেন সেই অন্ধকারের দিকে চলে যেতে না হয়, সেই ধরনের বিপদে যেন না পড়ে যাই, এ জন্য দেশবাসীকে সজাগ থাকতে হবে। গতকাল বিকালে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা, ভাষা আন্দোলনের পথ ধরে স্বাধীনতা অর্জন, বঙ্গবন্ধু দেশে ফেরার পর দেশ গড়ার সংগ্রামে তার নেওয়া নানা উদ্যোগ, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যাসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, জাতির পিতার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ নিম্নআয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিলাম। আজ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছি। এই অগ্রযাত্রা যেন অব্যাহত থাকে এটা আমাদের অঙ্গীকার। আগামী জাতীয় নির্বাচনের দিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পেয়ারে পাকিস্তানওয়ালাদের কাছ থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করে চলতে হবে। একটা সময় দেখেছি মানুষ নিজে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিতে সাহস পেতেন না। সরকারি চাকরি পেতে মুক্তিযোদ্ধা কথাটি লিখতেও ভয় পেতেন। কারণ, তাহলে চাকরি পাবেন না। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর এই অবস্থা বাংলাদেশে সৃষ্টি হয়েছিল। তবে, দীর্ঘ ৯ বছর আমরা সরকারে থাকার কারণে এখন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিতে মানুষ গর্ববোধ করেন। তিনি বলেন, মানুষের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ফিরে এসেছে। এই আত্মবিশ্বাসটা যেন হারিয়ে না যায়। এমন কোনো অন্ধকারে আমরা যেন আবার না পড়ি। এই পরিবেশ যেন বাংলার মাটিতে আর না আসে সে ব্যাপারে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমানের বহুদলীয় গণতন্ত্র হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের দল করার সুযোগ দেওয়া। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিদেশে দূতাবাসে চাকরি করার সুযোগ করে দেওয়া। যে শক্তিকে আমরা পরাজিত করলাম, সে শক্তির প্রতিই তোষামোদি, খোশামোদি, চাটুকারিতা আমরা দেখেছি। তিনি বলেন, যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার জাতির পিতা শুরু করেছিলেন, সে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার মার্শাল ল’ অর্ডিন্যান্স দিয়ে বন্ধ করে তাদেরকে মুক্ত করে দল করার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল।

খালেদা জিয়ার শাসনামলের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ৭৫ সালের ১৫ আগস্টের খুনিদের পার্লামেন্টে বসানো হয়েছিল। আর যারা স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী, যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বিচার হয়ে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছে, সাজা কার্যকর হয়েছে, তাদেরকে মন্ত্রী করা হয়েছিল। লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত পতাকা তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। জাতি যেন কোনো দিন তাদের ক্ষমা না করে। তিনি বলেন, যাদের হৃদয় থাকে পাকিস্তানে, তারা বাংলাদেশে থেকে সব রকমের আরাম আয়েশ ফল ভোগ করবে, আর অন্তরাত্মাটা পড়ে থাকবে ওখানে (পাকিস্তানে)। তাদের ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার ব্যবহারের গুরুত্ব কম দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাংলা সাবজেক্ট নাকি এখন সাবসিডিয়ারি। এই বিষয়টা আমি আগে জানতাম না। এটা কেন, খোঁজ নিতে হবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাংলা ডিপার্টমেন্ট থাকবে না, বাংলার চর্চা থাকবে না, এটা হতে পারে না। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নাকি বাংলা ভাষায় পড়ানো হয় না। এটা কেন? কেন বাংলায় পড়ানো হবে না। আমরা দাওয়াতের কার্ডও এখন বাংলা ভাষায় লিখতে চাই না। মনে হয়, এটা যেন ব্যাধির মতো ছড়িয়ে গেছে। এটা কেন হচ্ছে জানি না। বিয়ের কার্ডটাও কেন বাংলা ভাষায় লেখা হবে না। তিনি বলেন, ইংরেজি আন্তর্জাতিক ভাষা। কাজেই আমরা ইংরেজি শেখার বিপক্ষে নই। কিন্তু যে ভাষার জন্য আমরা রক্ত দিয়েছি তার চর্চা করব না কেন? কাজেই দ্বিতীয় ভাষা শিক্ষার ওপর অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। এতে দেশ-বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। তবে সঙ্গে সঙ্গে মায়ের ভাষার জন্য আমরা রক্ত দিয়েছি তার চর্চাও থাকতে হবে। এ বিষয়ে পরিবার থেকেই উৎসাহিত করতে হবে।

আদালতের রায় ইংরেজিতে লেখা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উচ্চ আদালতের রায় ইংরেজিতে লেখা হয়। আমাদের অনেকে আছেন ইংরেজি বোঝেন না। তার উকিল যা বোঝাবেন তাকে তা বুঝতে হচ্ছে। সেই উকিল সাহেব ঠিকমতো বোঝাতে পারছেন নাকি আরও কিছু টাকা খসানোর বা পকেট খালি করার জন্য অন্যভাবে বোঝাচ্ছেন তা কিন্তু তার মক্কেল বুঝতে পারেন না। তবে, এখন নিম্ন আদালতে মোটামুটি বাংলায় রায় লেখা শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের দেশে দেখা যায়, বাংলা ভাষা ইংরেজি টোনে বলা হয়, এটা কেন? ১৯৭৫ সালে আমাদের বিদেশে থাকতে হয়েছে, আমাদের ছেলেমেয়েরা তখন বিদেশে লেখাপড়া করেছে। তারা বিদেশে থেকেও ভালো বাংলা বলতে পারে। যারা বাংলাদেশে থেকে বড় হয়েছে তারা কেন ইংরেজি ঢংয়ে বাংলা বিকৃত করে বলবে? শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু জেলে বসে ভাষার আন্দোলন চালিয়ে নেওয়ার দিকনির্দেশনা দিতেন। ১৯৪৮ সাল থেকে ভাষার জন্য আন্দোলন শুরু হয়। ৫২ সালে বুকের রক্ত দিয়ে তা আদায় করে ছাত্র-জনতা। আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর বাংলা রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা পায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৯৫৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর পাকিস্তানের প্রথম শাসনতন্ত্র প্রণয়ন হয়। ওই শাসনতন্ত্রে বাংলা রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা পায়। ওই সময় ২১ ফেব্রুয়ারি সরকারি ছুটিও ঘোষণা করা হয়। তিনি বলেন, আমরা যা কিছু পেয়েছি সংগ্রামের মধ্য থেকে পেয়েছি। ভাষা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় জাতির পিতা আন্দোলনের পথ ধরে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেন। সেই সংগ্রামের পথ ধরে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি। প্রতিটি অর্জনের পেছনে এদেশের জনগণের ত্যাগ রয়েছে। অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আবদুল মতিন খসরু, আবদুর রাজ্জাক, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন, কেন্দ্রীয় সদস্য আনোয়ার হোসেন, ঢাকা মহানগরের সাদেক খান ও শাহে আলম মুরাদ। সভা পরিচালনা করেন দলের প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ ও উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর