শিরোনাম
রবিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
পিলখানায় হত্যাযজ্ঞের ৯ বছর

বিস্ফোরক মামলায় ধীরগতি, সাক্ষী ৬৫৪ সাক্ষ্য ৫০ জনের

আরাফাত মুন্না

দেখতে দেখতে নয় বছর পেরিয়ে গেছে পিলখানায় বিডিআর (বিজিবি) বিদ্রোহের। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি গুলি ও বোমার বিকট শব্দে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে রাজধানী। ওই দিন ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ৭৪ জন নিহত হন বিপথগামী বিডিআর সদস্যদের হাতে। টানা এক দিন এক রাত শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি মোকাবিলা করে ২৬ ফেব্রুয়ারি বিদ্রোহ নিয়ন্ত্রণে আসে। এ ঘটনায় এরই মধ্যে বাহিনীর নিজস্ব আইনে দায়ের করা মামলার বিচার শেষ হয়েছে। আর পিলখানা ট্র্যাজেডির ঘটনায় গত বছর ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় দিয়েছে হাই কোর্ট। এখন রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপির জন্য অপেক্ষা। বিচারিক আদালতে এই মামলায় রায় এসেছিল ২০১৩ সালে। আর অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ের করা মামলা চলছে ধীরগতিতে। নারকীয় এ ঘটনার পর বিডিআর আইন, বাহিনীর নাম, পোশাক, পতাকা ও মনোগ্রামসহ অনেক কিছুতেই পরিবর্তন আনা হয়েছে। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারির ঘটনা শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বের ইতিহাসে একসঙ্গে এত সেনা কর্মকর্তা হত্যার কোনো নজির নেই। ঘটনার সময় ৪ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে অবস্থিত পিলখানায় ৬ হাজার ৯০৩ জন বিডিআর সদস্য কর্মরত ছিলেন। চাঞ্চল্যকর এই হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় অস্ত্র ও বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ের করা মামলার বিচার কার্যক্রম চলছে ঢিমেতালে। মাসে এক দুই দিন করে চলে কার্যক্রম। ৬৫৪ জন সাক্ষীর মধ্যে নয় বছরে মাত্র ৫০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করতে পেরেছেন বিচারক। আগামী ১৮ মার্চ এ মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য রাখা হয়েছে। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সাক্ষ্য গ্রহণের কথা থাকলেও বিচারক না আসায় সেদিন সাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি। বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা মামলার বিচার দীর্ঘায়িত হওয়ায় আসামিপক্ষের আইনজীবীরা হতাশ। পিলখানার ঘটনায় বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মাসে দুই দিন করে সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। বর্তমানে ৫০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। সাক্ষ্য গ্রহণে ধীরগতি থাকলেও চলতি বছরই এই মামলার বিচার কার্যক্রম সমাপ্ত হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, হত্যা মামলার বিচার দ্রুত শেষ হয়েছে। অথচ এই মামলার বিচার এখনো শেষ হয়নি। দীর্ঘদিনেও বিচার শেষ না হওয়ায় ন্যায়বিচার না পাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

হাই কোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপির অপেক্ষা : হত্যা মামলায় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর ঢাকার তৃতীয় দায়রা জজ আদালত ১৫২ জন আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পাশাপাশি ১৫৯ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে রায় দেয়। এরপর গত ২৭ নভেম্বর এ মামলার ডেথ রেফারেন্স ও জেল আপিল নিষ্পত্তি করে ১৩৯ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও ১৮৫ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে রায় দেয়। রায়ে ২২৮ আসামিকে ৩ থেকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি পেলে আপিল বিভাগে আপিল করবে বলে জানিয়েছে আসামিপক্ষ। রাষ্ট্রপক্ষও পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি পেলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাবে।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সংখ্যার দিক দিয়ে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এ মামলায় হাই কোর্টের প্রায় ১০ হাজার পৃষ্ঠার রায় ঘোষণা করা হয় দুই দিন ধরে। রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, আট বছর আগে সীমান্তরক্ষী বাহিনীতে সংঘটিত বিদ্রোহের পেছনে ছিল স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্র। বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করে। বেঞ্চের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার। জজ আদালতের মতো হাই কোর্টও বলেছে, ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রির মতো কাজে সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে জড়ানো ঠিক নয়। এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা এখনো রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি পাইনি। কোনো আসামির বিষয়ে আপিল করবেন কিনা, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, রায়ের কপি পাওয়ার পর সেটা যাচাই-বাছাই করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাব।

এদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা আপিলের সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। এখন রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি পেলেই রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করব।

বিচার হয়েছে নিজস্ব আইনেও : সূত্র জানায়, বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় সাজা হয় অধিনায়কদের সামারি ট্রায়ালে। এতে মোট ১১ হাজার ২৬৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। তাঁদের মধ্যে ১০ হাজার ৯৭৩ জনের বিভিন্ন ধরনের সাজা হয়। সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে ৮ হাজার ৭৫৯ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়। বাকিরা প্রশাসনিক দণ্ড শেষে আবার চাকরিতে যোগদান করেন। দ্বিতীয় পর্যায়ে বিশেষ আদালত গঠন করে ৬ হাজার ৪৬ জন জওয়ানকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়। এসব মামলায় ৫ হাজার ৯২৬ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়। তাদের প্রত্যেককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। আর বেকসুর খালাসপ্রাপ্ত ১১৫ জন চাকরি ফিরে পেয়েছেন।

কর্মসূচি : বিজিবির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এই দিনটি শাহাদাতবার্ষিকী হিসেবে পালন করবে। এদিন বিজিবির সব রিজিয়ন, সেক্টর ও ইউনিটের ব্যবস্থাপনায় বাদ ফজর কোরআন খতম এবং বিজিবির সব মসজিদে নিহতদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল করা হবে। সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় আজ সকাল ৯টায় বনানী সামরিক কবরস্থানে রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তিন বাহিনীর প্রধান, স্বরাষ্ট্র সচিব, বিজিবির মহাপরিচালক স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। কাল সোমবার বাদ আসর পিলখানায় বীরউত্তম ফজলুর রহমান মিলনায়তনে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মিলাদ মাহফিল করা হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এতে উপস্থিত থাকবেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর