রবিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

এসএসসির বেশির ভাগ পরীক্ষাতেই প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ

আকতারুজ্জামান

মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) লিখিত অংশের পরীক্ষা শেষ হয়েছে গতকাল। মাধ্যমিক পর্যায়ের এই পরীক্ষার অধিকাংশ দিনেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে পরীক্ষা শুরুর প্রায় এক ঘণ্টা আগেই। মাত্র কয়েকটি পরীক্ষা প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগের বাইরে ছিল। এ পরীক্ষাগুলোর মধ্যে কৃষি শিক্ষা, গার্হস্থ্য বিজ্ঞান, ভূগোল ও পরিবেশ বিষয়ের নাম রয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, এসব বিষয়ে প্রশ্ন ফাঁস চক্রের আগ্রহের কমতি থাকাতেই প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ ছিল।

কয়েক বছর ধরে পাবলিক পরীক্ষাগুলোয় প্রশ্ন ফাঁসের ধারাবাহিকতা চলে এলেও এ বছরের এসএসসি পরীক্ষায় তা বড় প্রভাব ফেলেছে। মাধ্যমিক এই পরীক্ষার প্রায় সব কটিতেই প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে পরীক্ষা শুরুর আগেই। আগের বছরগুলোয় বরাবরই সরকারের পক্ষ থেকে প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টি অস্বীকার করা হলেও এবার শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসাইনসহ সংশ্লিষ্ট অনেকেই প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। একই সঙ্গে বর্তমান পদ্ধতিতে প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ করা সম্ভব নয় উল্লেখ করে অসহায়ত্বও প্রকাশ করেছেন।

১ ফেব্রুয়ারি এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়। সকাল ১০টায় পরীক্ষা অনুষ্ঠানের কথা থাকলেও এর অনেক আগ থেকেই ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয় প্রথম দিনের বাংলা প্রথম পত্রের এমসিকিউ অংশের প্রশ্ন ও উত্তর। সাংবাদিকরা বাংলা বিষয়ের প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীকে অবহিত করলে তিনি সেসব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেছিলেন, ফাঁস হওয়া প্রশ্নের সঙ্গে মূল প্রশ্নের কোনো মিল নেই। অথচ দুপুর ১টায় পরীক্ষা শেষে দেখা গেছে ফাঁস হওয়া প্রশ্নের সঙ্গে হুবহু মিল রয়েছে মূল প্রশ্নের। এরপর প্রায় প্রতিটি পরীক্ষা শুরুর আগে প্রশ্ন ফাঁস হয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সূত্রমতে, বাংলা দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষার দিনও এমসিকিউ প্রশ্ন উত্তরসহ পাওয়া যায় ফেসবুকে। এরপর ইংরেজি প্রথম, দ্বিতীয়; ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা, গণিত, আইসিটি, পদার্থবিজ্ঞান, ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং, রসায়ন, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়, জীববিজ্ঞান পরীক্ষার প্রশ্ন ছড়িয়ে পড়ে প্রায় এক ঘণ্টা আগে। বিজ্ঞান বিভাগে গত বৃহস্পতিবার শেষ পরীক্ষা উচ্চতর গণিত নির্ধারিত ছিল। এ পরীক্ষার প্রশ্নও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল ঘণ্টাখানেক আগে। গণমাধ্যমগুলো প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে দফায় দফায় সংবাদও প্রকাশ করে। ইন্টারনেটে প্রশ্ন ফাঁস ছড়িয়ে পড়া রোধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পরীক্ষার আগে দুই ঘণ্টা ইন্টারনেট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। পরে ব্যবসায়ী, সরকারের নানা মহলসহ ইন্টারনেট-সংশ্লিষ্টদের সমালোচনা ও দাবির মুখে এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে।

প্রশ্নপত্র ফাঁসের ধারাবাহিকতায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিয়ে একাধিক বৈঠকে বসে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ২০ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত এক সমন্বয় সভায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ছয়টি কারণ শনাক্ত করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। সভা শেষে শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসাইন সাংবাদিকদের জানান, বর্তমান পদ্ধতিতে কোনোভাবেই প্রশ্ন ফাঁস ঠেকানো সম্ভব হবে না। তাই একটি প্রশ্নব্যাংক তৈরি ও ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে পেপারলেস পদ্ধতিতে কীভাবে পরীক্ষা নেওয়া যায় তাই ভাবনার মধ্যে রয়েছে। সচিব আরও বলেন, পাবলিক পরীক্ষায় এমন পদ্ধতি তৈরি করা প্রয়োজন যে পদ্ধতিতে প্রশ্নপত্র ছাপানো হবে না ও বিতরণ করাও হবে না। তাহলেই ফাঁস হওয়ার সুযোগ থাকবে না।

এদিকে গত শুক্রবার এফডিসিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী নাহিদ বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় একা পাহারা দিয়ে প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ করতে পারবে না। এর জন্য শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ সবার সহায়তা চান তিনি। একই সঙ্গে আগামী বছর থেকে নতুন পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়ার আভাস দেন। নাহিদ বলেন, পরীক্ষা পদ্ধতিতে বড় পরিবর্তনের দিকেই যাচ্ছি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে ২০১৫ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সৃজনশীল (লিখিত) অংশে ১০ নম্বর বাড়িয়ে এমসিকিউ অংশের ১০ নম্বর কমিয়ে ৩০ নির্ধারণ করে দেয়। এর পরও এমসিকিউ প্রশ্ন ফাঁস ঠেকানো যায়নি। এবার সরকার এই এমসিকিউ একেবারে বাতিল করার পথেই হাঁটছে। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি সংবাদ সম্মেলনে এসে বিষয়টি পরিষ্কার করেছেন। আর শিক্ষা মন্ত্রণালয় সরকারের সেই নির্দেশ অবিলম্বে বাস্তবায়নের ব্যাপারে ভাবছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর