সোমবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
পিলখানা হত্যার ৯ বছর

শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় স্মরণ

আলী আজম

শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় স্মরণ

বনানী কবরস্থানে গতকাল স্বজনের কান্না

২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দফতর, পিলখানায় সংঘটিত বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডে নিহত সেনা কর্মকর্তাদের শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় স্মরণ করা হচ্ছে। এতদিন পরে হলেও নির্মম ওই হত্যাযজ্ঞের শিকার সব সেনা কর্মকর্তার স্বজনরা হত্যাযজ্ঞের কারণ জানতে ও পরিকল্পনাকারীদের দেখতে চান। তারা বিয়োগান্তক এই দিনটিকে ‘শহীদ সেনা দিবস’ ঘোষণারও দাবি জানান। গতকাল সকালে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ৯ বছর পূর্তিতে নিহত সেনা কর্মকর্তাদের কবরে শ্রদ্ধা জানাতে এসে আবেগাপ্লুত কণ্ঠে স্বজনরা এ দাবি জানান। নিহত লে. কর্নেল গোলাম কিবরিয়া মোহাম্মদ নিয়ামতউল্লাহর মেয়ে ইফরিত জানায়, বাবা মারা যাওয়ার সময় আমি প্রথম শ্রেণিতে পড়তাম। বর্তমানে ১০ম শ্রেণিতে পড়ছি। বাবার স্বপ্ন ছিল আমি ব্যারিস্টার হব। আমিও বাবার সেই স্বপ্নপূরণের চেষ্টা করছি। ইফরিতের মা শারমিন জাহান কান্না বিজড়িত কণ্ঠে বলেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে এখনো আমরা কেউ কিছু জানি না। খুব জানতে ইচ্ছা করে কাদের পরিকল্পনায় কী কারণে আমার স্বামীকে হত্যা করা হলো। এ ছাড়া বনানী সামরিক কবরস্থানে জড়ো হয়েছিলেন পিলখানার ঘটনায় নিহত অন্যান্য সেনা সদস্যের পরিবারও। শোকে, শ্রদ্ধায় ও ভালোবাসায় প্রিয়জনরা নিহতদের স্মরণ করেন। এ সময় সেখানকার পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। কেউ মোনাজাতের সময় কাঁদছিলেন, কেউবা দাঁড়িয়েছিলেন শোকে পাথর হয়ে। তাদের কেউ হারিয়েছেন স্বামী, কেউ সন্তান, কেউ বাবা, কেউবা ভাইকে। পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে বিজিবি মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল আবুল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, মামলার বিষয়ে আমরা খোঁজখবর রাখছি। এরই মধ্যে একটি মামলার রায় হয়েছে। বাকি বিস্ফোরক মামলাটির রায় এ বছরই হবে বলে আমরা আশা করছি। আমাদের আইনজীবীরাও বলছেন এবারই কার্যক্রম শেষ হবে। তবে এ জন্য সবার সহযোগিতা কাম্য। এদিকে বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডে শহীদ ব্যক্তিবর্গের স্মরণে শাহাদাতবার্ষিকী পালন করেছে বিজিবি। দিনের কর্মসূচি অনুযায়ী শহীদ ব্যক্তিবর্গের রুহের মাগফেরাতের উদ্দেশে পিলখানাসহ বিজিবির সব রিজিয়ন, সেক্টর, প্রতিষ্ঠান ও ইউনিটের ব্যবস্থাপনায় বাদ মাগরিব খতমে কোরআন, বিজিবির সব মসজিদে এবং বিওপি পর্যায়ে শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। সকাল ৯টায় সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় বনানী সামরিক কবরস্থানে শহীদদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শাহাদাতবরণকারীদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতির পক্ষে রাষ্ট্রপতির উপ-সামরিক সচিব, প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, তিন বাহিনীর প্রধানরা (সম্মিলিতভাবে), স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব ও বিজিবির মহাপরিচালক (একত্রে)। পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে শহীদদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এ সময় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা স্যালুট প্রদান করেন। পরে শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। আজ বাদ আসর পিলখানার বীরউত্তম ফজলুর রহমান খন্দকার মিলনায়তনে শহীদ ব্যক্তিবর্গের আত্মার মাগফেরাতের উদ্দেশে বিশেষ দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উপস্থিত থাকবেন। এ ছাড়া স্বরাষ্ট্র সচিব, বিজিবি মহাপরিচালক, শহীদ ব্যক্তিবর্গের নিকটাত্মীয়রা, পিলখানায় কর্মরত সব অফিসার, জুনিয়র কর্মকর্তা, অন্যান্য পদবির সৈনিক এবং বেসামরিক কর্মচারীরা অংশ নেবেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর