বুধবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

জাতিসংঘের উদ্বেগ, খালেদা জিয়ার রায়ের নথি পৌঁছায়নি হাই কোর্টে

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বাসে বোমা হামলা মামলাও চলবে

কূটনৈতিক ও নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতিসংঘের উদ্বেগ, খালেদা জিয়ার রায়ের নথি পৌঁছায়নি হাই কোর্টে

জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফান ডোজারিক বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কারান্তরীণের ঘটনা অবশ্যই উদ্বেগজনক। গ্রেফতারের বিষয়ে ইতিমধ্যে আমরা আমাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছি। এখানে আমাদের অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট। আগামী নির্বাচনকে অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় অনুসারে সোমবার জাতিসংঘের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশি এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র এসব কথা বলেন। জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে বিফ্রিংয়ের ভিডিও ও লিখিত সংস্করণ উল্লেখ করা আছে। গত কয়েক দিনে একাধিকবার খালেদা জিয়ার গ্রেফতার ইস্যুতে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র বক্তব্য দিয়েছেন। গতকাল তিনি তার আগের বক্তব্য পুনরুল্লেখ করেন। মুখপাত্র বলেছেন, খালেদা জিয়ার গ্রেফতারের বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। এ বিষয়ে জাতিসংঘের উদ্বেগ জানানো হয়েছে। আমরা প্রত্যাশা করি অন্য সব দেশের মতো বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ  নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হবে। এটাই জাতিসংঘের নৈতিক অবস্থান।

এদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় নিম্ন আদালতে খালেদা জিয়ার রায়ের মূল নথি গতকালও হাই কোর্টে পৌঁছেনি। এ ছাড়া ২০১৫ সালে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে যাত্রীবাহী নৈশকোচে পেট্রলবোমা হামলায় হতাহতের ঘটনায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ ৭৮ জনের বিরুদ্ধে করা মামলায় হাই কোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত করে দিয়েছেন আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি। গতকাল রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এ আদেশ দেন। পাশাপাশি হাই কোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন (লিভ টু আপিল) আগামী ২৯ মার্চ শুনানির জন্য আপিলের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দিয়েছে আদালত। এই আদেশের ফলে ওই মামলা চলতে আপাতত কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। আদালতে এই মামলার শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তার সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ। আদেশের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘২০১৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে যাত্রীবাহী বাসে পেট্রলবোমা নিক্ষেপে হতাহতের ঘটনায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ প্রথমে ৫৬ জনের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হয়।’ গত বছরের ২ মার্চ চৌদ্দগ্রাম থানার উপ-পরিদর্শক মো. ইব্রাহিম আদালতে অভিযোগপত্র দেন খালেদা জিয়াসহ ৭৮ জনের বিরুদ্ধে। মামলাটি বাতিল চেয়ে গত বছরের ৩ অক্টোবর হাই কোর্টে আবেদন করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে গত বছরের ২৫ অক্টোবর মামলার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়ে রুল জারি করে বিচারপতি মো. মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি জাফর আহমেদের হাই কোর্ট বেঞ্চ।

এখনো নথি আসেনি হাই কোর্টে : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার নিম্ন আদালতের মূল নথি গত ছয় দিনেও পৌঁছায়নি হাই কোর্টে। এর আগে বৃহস্পতিবার আপিল আদালত থেকে নিম্ন আদালতের মূল নথি তলব করেছিল হাই কোর্ট। ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের পেশকার মোকাররম হোসেন জানান, উচ্চ আদালতের আদেশ আমাদের কাছে এসে পৌঁছেছে। আদেশে বলা হয়েছে ১৫ দিনের মধ্যে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার মূল নথি উচ্চ আদালতে পাঠাতে। সে অনুযায়ী ১৫ দিনের মধ্যে আমরা মূল নথি উচ্চ আদালতে পাঠিয়ে দেব।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পাঁচ বছর কারাদণ্ড এবং তার বড় ছেলে তারেক রহমানসহ আরও পাঁচজনকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত। রায় ঘোষণার পরপরই খালেদা জিয়াকে নিয়ে যাওয়া হয় রাজধানীর পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে। বর্তমানে তিনি সেখানেই রয়েছেন।

সর্বশেষ খবর