বৃহস্পতিবার, ১ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

অবশেষে গলছে ডাকসুর বরফ

ঝর্ণা মনি ও জয়শ্রী ভাদুড়ী

অবশেষে গলছে ডাকসুর বরফ

অবশেষে বরফ গলছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের। অবসান হতে যাচ্ছে দীর্ঘ ২৮ বছরের প্রতীক্ষার। তবে অপেক্ষা করতে হবে আরও এক বছর। আগামী বছরের ৩০ মার্চের  মধ্যে এ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিতে সব হল ও সংশ্লিষ্ট দফতরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শুরু হয়েছে ভোটার তালিকা প্রণয়নের কাজও। জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘২০১৯ সালের মার্চে ডাকসু নির্বাচন হবে। বিষয়টি চ্যালেঞ্জ নয়, বাস্তবতা। কারণ আমাদের টার্গেট নির্বাচন। আর এজন্য আমরা কিছু কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেছি। সে অনুযায়ীই কাজ চলবে।’ তিনি জানান, কাজ শুরু হলে অনেক প্রশ্ন তৈরি হবে, সমস্যা তৈরি হবে এবং সমাধানও বেরিয়ে আসবে। পুরো প্রক্রিয়া শেষ করার জন্য অনেক উপকমিটি তৈরি করা হবে। ঢাবি ভিসি বলেন, নির্বাচনের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে ইতিমধ্যেই হলগুলোয় শিক্ষার্থীদের নতুন করে তালিকা করতে হল প্রাধ্যক্ষদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সে মোতাবেক কাজও শুরু করে দিয়েছেন হল প্রাধ্যক্ষরা। সংশ্লিষ্টরা জানান, ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়ায় দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব সৃষ্টি হচ্ছে না। ডাকসু হচ্ছে রাজনৈতিক আন্দোলনের সূতিকাগার। রাজনীতির ডাকসাইটে নেতাদের অনেকেরই হাতেখড়ি ডাকসু থেকে। শুধু ডাকসু নয়, তখনকার সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন হতো। তাই ডাকসু নির্বাচন এখন সময়ের দাবি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে ডাকসু নির্বাচন না হওয়ায় একটি জট লেগে আছে। তারা এ জট নিরসনের চেষ্টা চালাচ্ছেন। গত মঙ্গলবারের সিন্ডিকেট সভায়ও এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সব হলের প্রাধ্যক্ষকে চলতি বছরের ৩০ মের মধ্যে ভোটার তালিকা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সিন্ডিকেট সদস্য প্রফেসর ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ‘মঙ্গলবার রাতে ঢাবির সিন্ডিকেট সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরের ৩০ মার্চের মধ্যেই নির্বাচন হবে বলে আশা করি।’ প্রসঙ্গত, ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরের বছর যাত্রা করে ডাকসু। প্রথমে পরোক্ষ হলেও পরে শিক্ষার্থীদের প্রত্যক্ষ ভোটে ডাকসু নির্বাচন হয়। ডাকসুর বিধান অনুযায়ী প্রতি বছর নির্বাচন হওয়ার কথা। কিন্তু দেশ স্বাধীনের পর ভোট হয়েছে মাত্র ছয়বার। ১৯৯০ সালের ৬ জুলাই ডাকসুর সর্বশেষ নির্বাচন হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ছাত্র সংগঠনগুলোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও প্রতিবারই তা ভেস্তে যায়। ছাত্র সংগঠনগুলোর অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যর্থতার কারণে হাজার হাজার শিক্ষার্থী তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এমনকি ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে তাগিদ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। গত বছর ৪ মার্চ ঢাবির ৫০তম সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচন ইজ মাস্ট। এটা না হলে ভবিষ্যতে নেতৃত্বের শূন্যতা সৃষ্টি হবে।’ ডাকসু নির্বাচনের বরফ গলাতে ২০১২ সালে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন ঢাবির ২৫ জন শিক্ষার্থী। ওই বছর ১১ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রক্টর ও ট্রেজারারকে লিগ্যাল নোটিস দেন রিট আবেদনকারী-পক্ষের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই নোটিসের কোনো জবাব দেয়নি। এরপর গত বছরের ৮ এপ্রিল হাই কোর্ট নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন করার ব্যর্থতা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না— তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে। বিবাদী ছিলেন শিক্ষা সচিব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ট্রেজারার, রেজিস্ট্রার ও প্রক্টর। এ রুলের ওপর শুনানি শেষে গত ১৭ জানুয়ারি ছয় মাসের মধ্যে ডাকসু নির্বাচনের ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়ে দেয় হাই কোর্ট। আর ওই নির্বাচনের সময় যদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তার দরকার হয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সে বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বলা হয় রায়ে। জানা গেছে, হাই কোর্টের রায়ের পরই নড়েচড়ে বসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গত মঙ্গলবার রাতের সিন্ডিকেট সভার প্রধান আলোচ্যসূচিই ছিল ডাকসু নির্বাচন। এ ব্যাপারে ঢাবি প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নির্বাচনের জন্য প্রথম প্রয়োজন সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করা। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ছাত্র সংগঠনের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটা সুষ্ঠু, সুন্দর ও স্বাভাবিক নির্বাচন। এজন্য কর্তৃপক্ষের যেমন দায়িত্ব রয়েছে, তেমন ছাত্র সংগঠনগুলোর উচিত দায়িত্বশীল আচরণ করা। আমাদের শিক্ষার্থীরা নির্বাচনে অংশ নেবে উৎসবমুখর পরিবেশে। আর সেটুকু নিশ্চিত করার দায়িত্ব আমাদের।’ তিনি জানান, ছাত্র সংগঠনসহ নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত সব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় করার জন্য নিয়মিত বৈঠক করা হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর