বৃহস্পতিবার, ১ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

শীর্ষ ২৫ ঋণখেলাপির কাছেই পাওনা ১০ হাজার কোটি টাকা

সংসদীয় কমিটিতে তথ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে শীর্ষ ঋণখেলাপি ২৫টি প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্যাংকসমূহের বকেয়া ঋণের পরিমাণ ১০ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে ৯ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণের এ তথ্য সংসদীয় কমিটিকে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কমিটি ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে টাকা আদায় করে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে এবং ঋণ আদায়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান  বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সমন্বয়ে একটি কমিটি করার সুপারিশ করেছে। একই সঙ্গে আগামী দেড় মাসের মধ্যে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। সংসদ ভবনে গতকাল অনুষ্ঠিত অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উপস্থাপিত বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে খেলাপি ঋণ উল্লেখ করা হলেও কোনো ব্যাংক থেকে কী পরিমাণ অর্থ নেওয়া হয়েছে, তার উল্লেখ ছিল না। তাই কমিটি খেলাপি প্রতিষ্ঠানগুলো কোন কোন ব্যাংক থেকে কত টাকা ঋণ নিয়েছে, তাদের পারিবারিক পরিচয়সহ বিস্তারিত প্রতিবেদন চেয়েছে। একই সঙ্গে কমিটি খেলাপি ঋণ কমাতে সংশ্লিষ্ট আইন পরিবর্তনেরও সুপারিশ করেছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি আবদুর রাজ্জাক। কমিটির সদস্য নাজমুল হাসান, মোস্তাফিজুর রহমান, ফরহাদ হোসেন ও আখতার জাহান অংশ নেন। বৈঠকে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো নামে-বেনামে নানা ধরনের সার্ভিস চার্জ আদায়, ক্রেডিট কার্ডে অতিরিক্ত সুদ হার, সুপ্ত চার্জ আদায়সহ গ্রাহকদের নানা ধরনের অভিযোগ খতিয়ে দেখে প্রতিবেদন প্রদানের সুপারিশ করা হয়।

এ ছাড়া বাজারে চালসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে মন্ত্রণালয়কে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়।

 বাংলাদেশের ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২৫ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে মোহাম্মদ ইলিয়াস ব্রাদার্স। প্রতিষ্ঠানটি বকেয়া ঋণের পরিমাণ ৮৮৯ কোটি ৪৯ লাখ টাকা, যার পুরোটাই খেলাপি হয়ে গেছে। এরপর রয়েছে কোয়ান্টাম পাওয়ার সিস্টেমস লিমিটেড নামক প্রতিষ্ঠান। তাদের বকেয়া ঋণের পরিমাণ ৭৪৪ কোটি টাকা ৯৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপির পরিমাণ ৫৫৮ কোটি ৯ লাখ টাকা। জাসমির ভেজিটেবল ওয়েল লিমিটেড বকেয়া ঋণের পরিমাণ ৫৪৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকা, যার পুরোটাই খেলাপি। ম্যাক্স স্পিনিং মিলসের বকেয়া ও খেলাপি ঋণ ৫২৫ কোটি ৬০ লাখ। বেনেটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের বকেয়া ঋণের পরিমাণ ৫৩৩ কোটি টাকা, যার মধ্যে খেলাপি ৫১৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। ঢাকা ট্রেডিং হাউসের বকেয়া এবং খেলাপি ঋণ ৪৮৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা, আনোয়রা স্পিনিং মিলসের বকেয়া এবং খেলাপি ঋণ ৪৭৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। সিদ্দিক ট্রেডার্সের বকেয়া ঋণ ৫৯৯ কোটি ৯৮ লাখ টাকা, যার মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে ৪২৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। ইয়াসির এন্টারপ্রাইজ নামক প্রতিষ্ঠানের বকেয়া ঋণের পরিমাণ ৪১৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা। আলফা কম্পোজিট টাওয়েলস লিমিটেড ৪০১ কোটি ৭৩ লাখ, লিজেন্ড হোল্ডিংস ৩৪৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, হলমার্ক ফ্যাশন লিমিটেড ৩৩৯ কোটি ৩৪ লাখ, ম্যাক ইন্টারন্যাশনাল ৩৩৮ কোটি ৭৪ লাখ, মুন্নু ফেব্রিকস ৩৩৮ কোটি ৩৭ লাখ, ফেয়ার ট্রেড ফেব্রিকস লিমিটেড ৩২২ কোটি ৪ লাখ। শাহারিশ কম্পোজিট টাওয়েল লিমিটেডের বকেয়া ঋণের পরিমাণ ৩১৩ কোটি টাকা, যার মধ্যে খেলাপি ৩১২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। নুরজাহান সুপার ওয়েল লিমিটেডের বকেয়া ঋণ ৬৯৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা, যার মধ্যে খেলাপি ৩০৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। কেয়া ইয়ার্ন লিমিটেডের বকেয়া ঋণ ৩৬৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা, যার মধ্যে খেলাপি ঋণ ২৯২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। সালেহ কার্পেট মিলস লিমিটেডের বকেয়া ঋণ ২৮৭ কোটি ১ লাখ টাকা। এ ছাড়া খেলাপির তালিকায় আরও রয়েছে ফেয়ার ইয়ার্ন প্রসেসিং লিমিটেড ২৭৩ কোটি ১৬ লাখ, এসকে স্টিল ২৭১ কোটি ৪৮ লাখ, চৌধুরী নিটওয়্যার লিমিটেড ২৬৯ কোটি ৩৮ লাখ, হেল্পলাইন রিসোর্সেস লিমিটেড ২৫৮ কোটি ৩০ লাখ, সিক্স সিজন অ্যাপার্টমেন্ট লিমিটেড ২৫৪ কোটি ৫৭ লাখ, বিসমিল্লাহ টাওয়েলস লিমিটেড ২৪৩ কোটি ৮৪ লাখ। এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৯ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা ৮৯ লাখ টাকা। বৈঠক শেষে সংসদীয় কমিটির সভাপতি মো. আবদুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের বলেন, খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে এ-সংক্রান্ত আইনের যদি দুর্বলতা থাকে তা খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। ব্যাংকগুলোও তাদের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরেছে। তারা বলছে, ঋণ খেলাপি প্রতিষ্ঠানগুলো উচ্চ আদালতে গিয়ে ‘স্টে অর্ডার’ নিয়ে আবার অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়। এ জন্য কমিটি আইন মন্ত্রণালয় ও উচ্চ আদালতের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে বসবে। কমিটির কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, ঋণের টাকা আদায়ের জন্য ব্যাংকগুলো আদায় কাজ জোরদারের জন্য উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন, কিছু ঋণ পুনঃতফসিলীকরণের মাধ্যমে নিয়মিত করা, ঋণ অবলোপন, খেলাপি গ্রাহকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। কমিটির সদস্য ফরহাদ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, সামনে নির্বাচন। এটি নির্বাচনের বছর। এ সময় পুঁজিবাজারে যাতে কোনো অস্থিরতা তৈরি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে ২০১০ সালে যেসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম হঠাৎ করে বেড়ে গিয়েছিল সেসব প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে সতর্ক থাকার জন্য বলা হয়েছে বলেও জানান তিনি। সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কার্যকরী ও সুষ্ঠু শেয়ারবাজার গড়ে তোলার লক্ষ্যে আধুনিক সারভেইলেন্স সিস্টেম সংযোজন এবং সুপারভিশন ও মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করার ফলে শেয়ারবাজারে বড় ধরনের বিপর্যয়ের সম্ভাবনা নেই বলে কমিটিকে জানানো হয়। পশাপাশি সিকিউরিটিস অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে নতুন জনবল নিয়োগ প্রশাসনিক জটিলতায় আটকে থাকায় নিয়মিত পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করা যাচ্ছে না বলে জানানো হয়। কমিটি জরুরি ভিত্তিতে জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার সুপারিশ করে।

সর্বশেষ খবর