বৃহস্পতিবার, ১ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

দুর্নীতিতে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘দুর্নীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের সঙ্গে যে-ই জড়িত থাক, শাস্তি তাকে পেতেই হবে। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদকে আমরা কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেব না। দুর্নীতি করলে কোনো ছাড় নেই।’

গতকাল দশম  জাতীয় সংসদের ১৯তম অধিবেশনের সমাপনী বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) স্বাধীনভাবে কাজ করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুর্নীতিকে আমরা প্রশ্রয় দিতে চাই না। আমাদের এমপি-মন্ত্রী কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে, তাদের (দুদকের) যদি সন্দেহ হয়, তাহলে তাদের ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসা করতে পারে। আমরা কোনো হস্তক্ষেপ করি না, করব না।’ তিনি বলেন, ‘কারও দুর্নীতি প্রমাণ হলে সে সাজা পাবে। কোর্ট      আদেশ দিলে আমাদের মন্ত্রীরা সেখানে গিয়ে হাজির হচ্ছেন।’ প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আজকে বিএনপি নেত্রীর সাজা হয়েছে। এই মামলা করেছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে বিদেশ থেকে টাকা আসে। কিন্তু সেই টাকা এতিমরা পায়নি। সেই টাকা তিনি (খালেদা জিয়া) আত্মসাৎ করেছেন।’ তিনি বলেন, ‘যারা গঠনতন্ত্রে দুর্নীতিকে আশ্রয় দেয় আর দুর্নীতিবাজকে নেতা হিসেবে গ্রহণ করে, তারা জনগণের জন্য কী কাজ করবে? তারা লুটপাট করতে পারবে। মানুষ খুন করতে পারবে। দুর্নীতি করতে পারবে। কিন্তু মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারবে না।’ বিএনপি সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে দলের নেতা হিসেবে মেনে নিয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘একজন সাজাপ্রাপ্ত হয়ে জেলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সাজাপ্রাপ্ত আরেকজনকে দায়িত্ব দিল, তিনি আবার দেশেও থাকেন না, পলাতক। দেশের ভিতর বিএনপিতে কি একজন লোকও নেই, যাকে দায়িত্ব দেওয়া যায়? অবশ্য বিএনপির প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই তো দুর্নীতির মামলা রয়েছে। এই যদি রাজনৈতিক দলের অবস্থা হয় তাহলে সেই দল দেশকে কী দেবে?’ তিনি বলেন, ‘বিএনপি নেত্রী কারাগারে যাবেন, এটা বোধহয় তিনি আগেই টের পেয়েছিলেন। তাই রায়ের আগেই দলের গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করে দুর্নীতিকেই নীতি হিসেবে গ্রহণ করে বিএনপি। অপরাধীকেই নেতা হিসেবে মেনে নেয়। যাকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করল সেও সাজাপ্রাপ্ত।’

‘কৃষি বাতায়ন’ ও ‘কৃষকবন্ধু’ সেবার উদ্বোধন : দেশব্যাপী ই-কৃষি সেবা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ডিজিটাল প্লাটফরম ‘কৃষি বাতায়ন’ ও ‘কৃষকবন্ধু’ সেবার উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ দুটি সেবার উদ্বোধন করেন তিনি। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এর মাধ্যমে দেশের মানুষ কৃষিবিষয়ক সব ধরনের তথ্য পাবে। কোনো সমস্যা হলে তা সঙ্গে সঙ্গে সমাধান করতে পারবে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ৩৩৩১ নম্বরে ফোন করে যে কোনো একজন কৃষক আমাদের কৃষি কর্মকর্তার কাছ থেকে তথ্য নিতে পারবেন।’

প্রধানমন্ত্রী কৃষিকে একটি পবিত্র কাজ উল্লেখ করে বলেন, ‘এ কাজে সবাইকেই সম্পৃক্ত হতে হবে। মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা দেওয়া, পেটের ক্ষুধা নিবৃত্ত করা, মুখের খাদ্য জোগানোর থেকে মহৎ কাজ আর হতে পারে না। দেশের এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা কৃষিকে আধুনিক পদ্ধতিতে নিয়ে যাচ্ছি, যান্ত্রিকীকরণ করে দিচ্ছি। কৃষকের ছেলে শিক্ষা নিয়ে সে কৃষিকাজে যাবে না, এই মনোভাব যেন না থাকে। বরং কৃষি সম্পর্কে তারা যে জ্ঞান পাবে নিজের বাবা-মার কাছ থেকে, সেটাই তারা কাজে লাগাতে পারবে ভবিষ্যতে। এটা আমি মনে করি একটা পবিত্র কাজ। এই কাজে সবাইকে সম্পৃক্ত হতে হবে।’

কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তৃতা করেন এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মইনুদ্দীন আবদুল্লাহ অনুষ্ঠানে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেনটেশনের মাধ্যমে প্রকল্পের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) কবির বিন আনোয়ার ভিডিও কনফারেন্সটি সঞ্চালনা করেন। অনুষ্ঠানে পাঁচটি জেলা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল এবং দেশের ৬৪ জেলার ৫৬০টি উপজেলাতেই এই ভিডিও কনফারেন্স প্রচার হয়।

অনগ্রসর কৃষকের জন্য ‘সাথী’ নামের একটি অ্যাপস চালু হওয়ার তথ্য জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মোবাইল ফোন শুধু কথা বলার জন্যই নয়, অনলাইনে এবং আমাদের স্থাপিত ডিজিটাল সেন্টার ও কৃষকের জন্য চালু করা অ্যাপ থেকে সবরকম তথ্য তারা পেতে পারেন।’ তিনি বলেন, এর ফলে কৃষক উৎপাদিত পণ্যের বাজারদর জানতে পারবে তাই কেউ আর কৃষককে ঠকাতে পারবে না।

সর্বশেষ খবর