শনিবার, ৩ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

ভোট প্রস্তুতিতে ইসি

চূড়ান্ত ভোটার তালিকা, চলছে নির্বাচনী সামগ্রী কেনাকাটা, চলতি মাসে নতুন দলের নিবন্ধন এপ্রিলে চূড়ান্ত হবে সংসদীয় আসন, নির্বাচনী আইন সংস্কার এপ্রিলের মধ্যে

গোলাম রাব্বানী

ভোট প্রস্তুতিতে ইসি

একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জোরপ্রস্তুতি চলছে নির্বাচন কমিশনে। চূড়ান্ত হয়েছে ভোটার তালিকা। শুরু হচ্ছে নির্বাচনী সামগ্রী কেনাকাটার কাজও। সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ দিতে চলতি মাসের মধ্যে নিবন্ধন দেওয়া হবে নতুন রাজনৈতিক দলের। নির্বাচনী আইন সংস্কারের কাজ প্রায় শেষের দিকে। এপ্রিলের মধ্যে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের কাজ শেষ করবে কমিশন। এর পরে সেই অনুযায়ী ভোটকেন্দ্র প্রস্তুত, ছবিসহ ভোটার তালিকা ছাপানোর কাজে হাত দেবে সাংবিধানিক এই সংস্থা। এদিকে নির্বাচন কমিশনকে চলতি বছরের ৩০ অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে করতে হবে একাদশ সংসদ নির্বাচন। ডিসেম্বরের শেষ দিকে বা জানুয়ারির শুরুতে সংসদ নির্বাচন করার জন্য অক্টোবরে চূড়ান্ত করা হবে ভোটের দিনক্ষণ। নভেম্বরের মাঝামাঝি দেওয়া হতে পারে তফসিল। একই সঙ্গে বছরের মধ্যভাগে গাজীপুর, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশনে ভোট করবে ইসি। এ ছাড়া ১৩ মার্চ রয়েছে দুই উপনির্বাচন, ২৯ মার্চ হচ্ছে শতাধিক ইউপি-পৌরসভায় ভোটগ্রহণ। সব মিলে ভোট প্রস্তুতিতে ব্যস্ত নির্বাচন কমিশন।

ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, সংসদ নির্বাচনের জোরপ্রস্তুতি চলছে। ভোটার তালিকা চূড়ান্ত হয়েছে। সীমানার কাজও দ্রুত হবে। নির্বাচনী সামগ্রী কেনাকাটার কাজ শুরু হচ্ছে। এক্ষেত্রে সিল, প্যাড, অমোচনীয় কালির, সুই-সুতা, বিভিন্ন ধরনের খাম, মোমবাতিসহ আরও অনেক নির্বাচনী সামগ্রী প্রয়োজন হয়, এসব কেনাকাটার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। নির্বাচন বিশ্লেষকরা মনে করছেন— বর্তমান পরিস্থিতিতে এই ভোট (একাদশ সংসদ নির্বাচন) হবে ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিনমতের একটি। রাজনৈতিক দলগুলোর দূরত্বতা সামাল দিয়ে কীভাবে এই নির্বাচন করবে তা নিয়ে চিন্তিত নির্বাচন কমিশন। এ ছাড়া আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার ভূমিকা, নির্বাচনী আইন সংস্কার, সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ, সংলাপে পাওয়া দলগুলোর সুপারিশ বাস্তবায়নসহ নানা জটিলতা নিয়েও ভাবছে বর্তমান কমিশন। সব জটিলতা মিটিয়ে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান কমিশনের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

নতুন দলের নিবন্ধন : একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন দলের নিবন্ধন দিতে একটি কমিটি করেছে নির্বাচন কমিশন। ইতিমধ্যে কমিটি কাজও শুরু করেছে। ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কমিটি গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বৈঠক করেছে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নতুন রাজনৈতিক দলের আবেদন পর্যালোচনার জন্য একটি ছক তৈরি করা হয়েছে। ছক অনুযায়ী তাদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র-গঠনতন্ত্র, কমিটি, জেলা-উপজেলার অফিসের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া শুরু হয়েছে। কমিটির সদস্যরাই ৮ মার্চের মধ্যে প্রাথমিক তালিকা প্রস্তুত করবেন কয়টি নতুন দলকে নিবন্ধন দেওয়া যায়। এর আগে নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন দিতে গত ৩০ অক্টোবর আবেদন আহ্বান করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ৩১ ডিসেম্বর আবেদন জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল।

আইন সংস্কারের কাজও শেষ দিকে : একাদশ সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার পথ সহজ হচ্ছে। বর্তমানে সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে হলে সমর্থনের প্রমাণ হিসেবে নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর জমা দিতে হয় মনোনয়নপত্রের সঙ্গে। সংলাপে যেসব সুপারিশ এসেছে, তার ভিত্তিতে ওই শর্ত শিথিল করে ১ শতাংশের বদলে এক হাজার ভোটারের সমর্থন দেখানোর বিধান করার পক্ষে ইসি কর্মকর্তারা। এদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে পাওয়া সোয়া পাঁচশ প্রস্তাব থেকে তিন ডজন সুপারিশ বাছাই করে একটি খসড়া করেছে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়; সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থিতার শর্ত শিথিল করার সুপারিশও সেখানে রয়েছে। সেই সঙ্গে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)-তে ইভিএম ব্যবহারের সুযোগ রাখা হচ্ছে। এ ছাড়া জামানতের পরিমাণ ২০ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। যদিও সংলাপে বিভিন্ন দল জামানতের টাকা কমানোর প্রস্তাব করেছিল। এ ছাড়া ডিজিটাল প্রচারণার বিষয়ে সতর্ক থাকবে কমিশন। চলতি মাসের মধ্যে আইন সংশোধনের কাজও শেষ হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

ভোটার তালিকা চূড়ান্ত : সতের কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশে ভোটার সংখ্যা এখন ১০ কোটি ৪১ লাখ ৪২ হাজার ৩৮১। নির্বাচন কমিশনের ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, এবার ভোটার তালিকায় যুক্ত হয়েছেন ৪৬ লাখ ৫৫ হাজার ৫৪৫ জন নতুন ভোটার। সব মিলিয়ে দেশের ১০ কোটি ৪১ লাখ ৪২ হাজার ৩৮১ জন ভোটারের মধ্যে ৫ কোটি ২৫ লাখ ১২ হাজার ১০৫ জন পুরুষ। আর ৫ কোটি ১৬ লাখ ৩০ হাজার ২৭৬ জন নারী। অর্থাৎ ভোটার তালিকায় পুরুষ ও নারীর অনুপাত ৫০.৪২: ৪৯.৫৮।

ইসি সচিব জানান, ২০১৭ সালের হালনাগাদ এবং ২০১৫ সালে নেওয়া ১৫ বছর বয়সীদের নিবন্ধনের তথ্য মিলিয়ে (যারা চলতি বছর ১ জানুয়ারি ভোটার হওয়ার যোগ্য হয়েছেন) নতুন ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। নতুন ভোটারদের মধ্যে ৩৩ লাখ ৩২ হাজার ৫৯৩ জনের তথ্য ২০১৭ সালে, ৯ লাখ ৬২ হাজার ২৯৬ জনের তথ্য ২০১৫ সালে এবং দুই লাখ ৭০ হাজার ১৫৮ জন গত বছর হালনাগাদে এবং ৯০ হাজার ৪৯৮ জন রিভাইজিং অথরিটির মাধ্যমে তালিকায় যুক্ত হয়েছেন। গত ২ জানুয়ারি খসড়া তালিকা প্রকাশের পর দাবি, আপত্তি ও সংশোধনীর নিষ্পত্তি করে নির্বাচন কমিশন ৩১ জানুয়ারি এই চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করে। হালনাগাদের আগে দেশে ভোটার ছিল ১০ কোটি ১৪ লাখ ৪০ হাজার ৬০১ জন।

এপ্রিলের মধ্যে সীমানা নির্ধারণ : ইসির কর্মকর্তারা বলেছেন, বিদ্যমান অধ্যাদেশের আলোকে ৩০০ আসন পর্যালোচনা করেই কাজ করছি। কুমিল্লার একটি সংসদীয় আসন নিয়ে আদালতে মামলা চলছে, কমিশন আপিলও করেছে। তার নিষ্পত্তি হলেই খসড়াও দ্রুত প্রকাশ করা সম্ভব হবে। জনসংখ্যার ভারসাম্য, প্রশাসনিক সুবিধা এবং ভৌগোলিক অখণ্ডতার কথা বিবেচনায় নিয়েই এসব সীমানা পুনর্বিন্যাসের কাজটি করা হবে বলে জানান তারা। এক্ষেত্রে মার্চের মধ্যে সীমানা খসড়া প্রকাশ করা হবে। এর পরে দাবি-আপত্তি নিষ্পত্তি শেষে চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করবে কমিশন। এর পরে সেই অনুযায়ী ভোটকেন্দ্র প্রস্তুত ও আসনভিত্তিক ভোটার তালিকার সিডি, ছবিসহ ভোটার তালিকা ছাপানোর কাজ করবে কমিশন। এর আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বলেছিলেন, সংসদীয় সীমানা সংক্রান্ত কমিটি সার্বিক বিষয় গুছিয়ে রাখতে কাজ করছে। সর্বশেষ দশম সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ২০১৩ সালে প্রশাসনিক সুবিধা, ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও জনসংখ্যার ভিত্তিতে ৫০ আসনে পরিবর্তন করা হয়।

বরাদ্দ যা চাওয়া হবে : একাদশ সংসদ নির্বাচন, উপজেলা নির্বাচন ও পাঁচ সিটি নির্বাচনসহ জাতীয় বাজেটে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ চাইবে নির্বাচন কমিশন। এ বছরের শেষ দিকে একাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। এর আগেই রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট। আগামী বছরের শুরুতে হবে দেশজুড়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। এদিকে এ নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। এবার দেশজুড়ে ভোটার রয়েছে ১০ কোটি ৪১ লাখের মতো। এতে ৪০ হাজারের মতো ভোটকেন্দ্র থাকতে পারে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা মিলিয়ে প্রায় ১০ লাখের মতো লোক দায়িত্বে নিয়োজিত থাকতে পারে। এ ছাড়া ব্যালট বাক্স, ব্যালট পেপার, নির্বাচনী সামগ্রী, পরিবহন, জ্বালানিসহ নির্বাচনী পরিচালনায় অন্তত ৬০-৭০ খাত রয়েছে। ইসি কর্মকর্তারা জানান, প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও পারিশ্রমিক বেড়ে যাওয়ায় তার অনুপাতে প্রতিবারই নির্বাচনী ব্যয় বাড়ছে। ভোট গ্রহণে যতজন নির্বাচনী কর্মকর্তা লাগে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য নিয়োগও দিতে হয় বেশ। এ কারণে পুরো নির্বাচন পরিচালনার ব্যয়ের একটি বড় অংশ চলে যায় আইনশৃঙ্খলা খাতে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর