শিরোনাম
শনিবার, ৩ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

সীমান্তে আরও সেনা বাড়িয়েছে মিয়ানমার, পতাকা বৈঠক

নিজস্ব প্রতিবেদক ও কক্সবাজার প্রতিনিধি

সীমান্তে আরও সেনা বাড়িয়েছে মিয়ানমার, পতাকা বৈঠক

তুমব্রু সীমান্তের কাছে ক্যাম্প তৈরি করে নিরাপত্তা বাড়িয়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী —এএফপি

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্তের জিরোলাইনে আরও সেনা বাড়িয়েছে মিয়ানমার। গতকাল সকাল থেকে সেনাসমাবেশ

বাড়িয়েছে দেশটি। দিনভর সেখানে ভারী অস্ত্র হাতে কাঁটাতারের বেড়ার পাশে দাঁড়িয়ে পাহারা দিতে দেখা গেছে মিয়ানমারের সেনাদের। তবে বিকালে দুই দেশের সীমান্ত রক্ষীদের মধ্যে হয়েছে পতাকা বৈঠক। বৈঠকে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) কে ভবিষ্যতে আর গুলিবর্ষণ না করার বিষয়ে আশ্বস্ত করেছে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী পুলিশ (বিজিপি)।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অপারেশন্স অ্যান্ড ট্রেনিং) মজিবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, বাংলাদেশ-মিয়ানমারের সীমান্তে তমব্রু এলাকায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী এবং মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) অতিরিক্ত সেনা ও ভারী অস্ত্র মোতায়েন করেছিল। সে বিষয়ে গতকাল পতাকা বৈঠক হয়েছে। এ বৈঠকে বিষয়টি পুরোপুরি সমাধান হয়েছে। মিয়ানমার বলছে, অভ্যন্তরীণ হুমকির কারণে তারা ওই এলাকা অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করেছিল। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তারা হুমকির বিষয়টি জানতে পারে। বর্ডারের শান্তি রক্ষা এবং শত্রুর মোকাবিলায় বর্ডার নর্মস অনুযায়ী মিয়ানমার ও বাংলাদেশ যৌথ প্যাট্রলিং করবে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবারের মতো গতকাল সকালেও জিরোলাইনে একেবারে কাছে ট্রাকে করে সীমান্তে সেনাসমাবেশ ঘটায় মিয়ানমার। দুপুর পর্যন্ত ওই সীমান্তে ১৪-১৫টি ট্রাকে আনা হয় তিন শতাধিক সেনা। আগের দিন বৃহস্পতিবার সেখানে আনা হয়েছিল সাত-আটটি ট্রাকে করে আরও ২০০ সেনাসদস্য। তবে গতকাল সোয়া ৩টার দিকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার মৈত্রী সেতু পয়েন্টে ব্যাটালিয়ন পর্যায়ে পতাকা বৈঠক শুরু হয়। এতে অংশ নেয় দুই দেশের পক্ষ থেকে ৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল। পতাকা বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেন ৩৪ বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল মঞ্জুরুল আহসান খান ও মিয়ানমারের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেন দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী পুলিশের লে. সোয়োজাই লিউ। বিকাল ৪টা ৪০ মিনিটের দিকে বৈঠক শেষ হলে সংবাদ সম্মেলন করেন বিজিবির ৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক ও প্রতিনিধি দলের প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল মঞ্জুরুল হাসান খান। তিনি জানান, কোনো ধরনের উসকানি ছাড়াই সীমান্তে অতিরিক্ত সেনা সমাবেশের বিষয়ে মিয়ানমারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে জানতে চাওয়া হয়। মিয়ানমার সীমান্তের নিজেদের অংশে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য বাড়তি সেনা মোতায়েন ও গুলিবর্ষণ করেছিল বলে জানিয়েছে মিয়ানমার। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু এলাকায় শক্তিবৃদ্ধির জন্য তারা সীমান্ত এলাকায় ফাঁকা গুলিবর্ষণে বিষয়টি অস্বীকার করেছে মিয়ানমার। ‘মিয়ানমার সীমান্ত পুলিশ আরও জানিয়েছে, ভবিষ্যতে সীমান্তবর্তী এলাকায় ফাঁকা গুলিবর্ষণের আগে বাংলাদেশকে অবহিত করবে বলে মিয়ানমার বৈঠকে বলেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী পুলিশ বিজিবির কাছে প্রশ্ন করেছে, সীমান্তে বাংলাদেশ কেন সিসি ক্যামেরা স্থাপন করছে। জবাবে আমরা জানাই, এটা মিয়ানমারকে টার্গেট করে সিসি ক্যামরা বসানো হয়নি, আমাদের নিজেদের নিরাপত্তার জন্যই সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে।’ সীমান্ত এলাকার পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে। শূন্যরেখায় থাকা রোহিঙ্গারাও ভালো আছে। মঞ্জুরুল আহসান খান বলেন, ‘তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায় অবস্থানকারী রোহিঙ্গাদের যে কোনো সময় নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানিয়েছে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী পুলিশ (বিজিপি)।’ দুই দেশের কূটনৈতিক প্রক্রিয়া শেষ হলে তাদের ফিরে নিয়ে যাওয়া হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। এর আগে গতকাল সকালে বান্দরবান উপজেলার ঘুমধুমের তুমব্রু সীমান্তের নো-ম্যানস ল্যান্ড এলাকা পরিদর্শন করেছেন বান্দরবান জেলা প্রশাসক দীলিপ কুমার বণিক, ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মঞ্জুরুল আহসান খান, বান্দরবান লামা উপজেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবদুস সালাম, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম সরওয়ার কামাল প্রমুখ।

টেকনাফ সীমান্তজুড়ে বিজিবি ও কোস্ট গার্ড সতর্ক অবস্থান : বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তমব্রু সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের হঠাৎ ভারী অস্ত্র ও অতিরিক্ত সৈন্য সমাবেশ বৃদ্ধির ঘটনায় সীমান্তজুড়েই সতর্কাবস্থায় রয়েছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও কোস্ট গার্ড সদস্যরা। ওই এলাকার এ উত্তেজনাকর পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তজুড়েই যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে তীক্ষ নজর ও সতর্কভাবে রয়েছেন তারা। গতকাল দুপুরে  টেকনাফ ২ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আসাদুজ্জামান চৌধুরী জানান, সীমান্তে যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতির জবাব দিতে শক্ত ও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বিজিবি। মিয়ানমারে উত্তপ্ত পরিস্থিতির কারণে সীমান্তজুড়েই বিজিবি সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছে।

 তিনি আরও জানান, এর পাশাপাশি টেকনাফ উপজেলা সীমান্তের হোয়াইক্যং, উনচিপ্রাং, ঝিমংখালী, খারাংখালী, হ্নীলা, লেদা, নোয়াপাড়া, দমদমিয়া, টেকনাফ সদর, নাজির পাড়া, সাবরাং ও শাহপরীরদ্বীপ দায়িত্বপূর্ণ এলাকা সীমান্তে বসবাসরত নাগরিকদের নাফনদে মাছ ধরা ও চলাচল সীমাবদ্ধ রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। টেকনাফ কোস্ট গার্ড স্টেশন কমান্ডার লে. এম ফয়েজুল ইসলাম মণ্ডল জানান, মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর এ তত্পরতায় সীমান্তজুড়েই কোস্ট গার্ডও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। সীমান্তের  নাফনদ ও বঙ্গোপসাগরে রাতদিন কোস্ট গার্ডের টহল জোরদার রয়েছে বলে জানান তিনি। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহিদ হোসেন ছিদ্দিক জানান, সীমান্তে ও নাফনদে বিজিবি ও কোস্ট গার্ড সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। মিয়ানমার পক্ষ থেকে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে, সমুচিত জবাব দেওয়া হবে। নাফনদ পেরিয়ে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে যদি কোনো রোহিঙ্গা ঢুকে পড়ে তাদের মানবিক সহায়তা দিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় দেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর