রবিবার, ৪ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

ধারাবাহিক উন্নয়নে নৌকায় ভোট চাইলেন শেখ হাসিনা

খুলনায় বিশাল জনসভা

রফিকুল ইসলাম রনি ও সামসুজ্জামান শাহীন, খুলনা থেকে

ধারাবাহিক উন্নয়নে নৌকায় ভোট চাইলেন শেখ হাসিনা

খুলনা সার্কিট হাউস মাঠে গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় মানুষের ঢল নামে —বাসস

উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় নৌকায় ভোট চাইলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলব। গতকাল খুলনার সার্কিট হাউস ময়দানে খুলনা জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসমুদ্রে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর জনসভা উপলক্ষে গতকাল পুরো খুলনা মহানগরী ছিল লোকারণ্য। সার্কিট হাউস ময়দানে ছিল লাখো জনতার উপস্থিতি। নারীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। মাঠের সিংহভাগই ছিল নারীদের দখলে। জনসভাস্থলে এসে প্রধানমন্ত্রী ৪৮টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ৫২টি প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। প্রধানমন্ত্রী প্রায় ২২ মিনিটের বক্তৃতায় দেশের উন্নয়নের জন্য আবারও নৌকা মার্কায় ভোট চান। তাঁর বক্তৃতায় সরকারের নেওয়া উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরার পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াতের অপরাজনীতি তুলে ধরেন। এর আগে সকালে খালিশপুরে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি)-এর ৫৮তম কনভেনশনের তিনি উদ্বোধন করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চতুর্থ নির্বাচনী জনসভা ছিল এটি। গত ৩০ জানুয়ারি সিলেট থেকে নির্বাচনী জনসভা শুরু করেন তিনি। এর পর ৮ ফেব্রুয়ারি বরিশাল এবং ২২ ফেব্রুয়ারি রাজশাহীতে জনসভা করেন প্রধানমন্ত্রী।

জনসভায় উপস্থিত লাখো জনতার উদ্দেশে শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আপনাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, দেশ এগিয়ে যাবে নাকি আবার ধ্বংসের দিকে ধাবিত হবে? যদি উন্নয়ন চান, তাহলে নৌকা মার্কায় ভোট দিতে হবে। এ সময় লাখো জনতা দুই হাত উঁচিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীকে নৌকায় ভোট দেওয়ার সম্মতি জানান। তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। আমরা বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধশালী করতে চাই। যখনই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন, আপনারা স্বাধীনতা পেয়েছেন, মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার পেয়েছেন। আপনারা দেশের উন্নয়ন পেয়েছেন। তিনি বলেন, এই খুলনা শহরে এক সময় ছিল বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসের রাজত্ব। প্রতিদিন খুন, প্রতি মুহূর্তে মায়ের কোল খালি হতো। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর কঠোর হস্তে আমরা জঙ্গি দমন করেছি। আজ খুলনা শান্তির নগরী। তিনি বলেন, ভোলায় অনেক গ্যাস পাওয়া গেছে। আমরা সে গ্যাস উত্তোলন করে পাইপলাইন দিয়ে ভোলা থেকে বরিশাল ও খুলনায় নেওয়ার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দুর্নীতি করলে শাস্তি পেতেই হবে। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া দুর্নীতি মামলায় জেলে গেছেন। এখানে আমাদের কিছুই করার নেই। অপরাধী যে-ই হোক, তাকে শাস্তির মুখোমুখি হতেই হবে। তিনি বলেন, নির্বাচন ঠেকানোর নামে ও ক্ষমতায় যাওয়ার লোভে কত মানুষ হত্যা করেছে তারা! সরকার উত্খাত না করে বাড়ি ফিরবেন না বলেছিলেন তিনি (খালেদা জিয়া)। তিন মাস অফিসে বসে ছিলেন। সেখানে বসে তিনি বিরানি খান আর মানুষ পোড়ানোর হুকুম দেন। মা-বাবা চোখের সামনে দেখেছে সন্তান পুড়ে মরছে। তিনি বলেন, আমি বিদু্যুেকন্দ্র বানাই, সেখানেও আগুন দেওয়া হয়। প্রায় ৫০০ মানুষ নিহত ও সাড়ে তিন হাজার মানুষ আগুনে পুড়ে আহত হন। বিএনপি শুধু ধ্বংস করতে জানে, সৃষ্টি করতে জানে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেক ঘরে আমরা আলো জ্বালাতে চাই। ২০২১ সালের মধ্যে আমরা সবার ঘরে আলো জ্বালাব। আমরা ৩৫ কোটি ৪১ লাখ ৯০ হাজার ১৬২ খানা বই বিনা পয়সায় ছেলেমেয়েদের হাতে তুলে দিয়েছি। বাবা-মাকে একটা টাকাও খরচ করতে হয় না।

জনসভায় বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষ্পুত্র শেখ হেলাল উদ্দিন এমপি বলেন, প্রধানমন্ত্রী দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ ও মোংলা বন্দর আধুনিকায়ন করেছেন। খুলনার মানুষ শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে ভালোবাসে। এ কারণে দলীয় নেত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে খুলনার এই জনসভা প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। খুলনা জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হারুনুর রশীদের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় নেতা এস এম কামাল হোসেন ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজানের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তৃতা করেন মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, দীপু মনি, আবদুর রহমান, বি এম মোজাম্মেল হক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সুজিত রায় নন্দী, আফজাল হোসেন, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, কার্যনির্বাহী সদস্য মন্নুজান সুফিয়ান, আমিরুল আলম মিলন, এ বি এম রিয়াজুল কবীর কাওছার, পারভীন জামান কল্পনা, তালুকদার আবদুল খালেক প্রমুখ।

বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের কনভেনশনের উদ্বোধন : এর আগে খুলনার খালিশপুরে বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের ৫৮তম কনভেনশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, গ্রাম পর্যায় থেকে যেন উন্নয়ন হয়; সে পরিকল্পনা আমরা দিয়েছি। একটা সরকার জনগণের সেবা করবে। আমরা জনগণের সেবক। সে কথা মাথায় রেখেই আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিচ্ছি। বর্তমান সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এত উন্নয়ন প্রকল্প আর কোনো সরকার করতে পারেনি। যেটা আমরা করে যাচ্ছি। যার শুভ ফলও এদেশের মানুষ পাচ্ছে। আমাদের প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২৮ ভাগে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি। উন্নয়ন প্রকল্পে সম্পৃক্তদের আরও আন্তরিক হওয়ার তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যারাই যে প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন; তাদের আগে চিন্তা করতে হবে, এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে আমার দেশের মানুষ সুবিধা ভোগ করবে। এই দেশের মানুষ আপনাদের, আমাদের সবারই আত্মীয়স্বজন। সেই কথাটাই সবাইকে চিন্তা করতে হবে। দেশের উন্নতি হলে সবার উন্নতি।  ইআইবির প্রেসিডেন্ট কবির আহমেদ ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবদুস সবুর, ইআইবি খুলনা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ সাদিক এবং কনভেনশন আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান পলাশ বক্তব্য রাখেন।

সর্বশেষ খবর