মঙ্গলবার, ৬ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

খরচ করতে পারছে না সরকার

৪ লাখ কোটি টাকার বাজেট, ৬ মাসে খরচ ১ লাখ কোটিরও কম

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

খরচ করতে পারছে না সরকার

চলতি অর্থবছরে ৪ লাখ ২৬৭ কোটি টাকার বাজেট পাসের পর ছয় মাস গত হওয়ার পর দেখা যাচ্ছে বাজেট থেকে এক লাখ কোটি টাকারও কম খরচ হয়েছে। তুলনামূলক হিসেবে যা চার ভাগের একভাগ। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর মেয়াদে ঘোষিত বাজেট থেকে ব্যয় হয়েছে মাত্র ৯৪ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ বাজেটের টাকা খরচ করতে পারছে না সরকার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর আর্টিকেল ফোর মিশনের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির যে তথ্য-উপাত্ত তৈরি করেছে সেখানে বাজেট বাস্তবায়ন সম্পর্কে এসব তথ্য দেওয়া হয়েছে। সামষ্টিক অর্থনীতি অনুবিভাগ ২০ ফেব্রুয়ারি এসব তথ্য সরবরাহ করে। বাংলাদেশের অর্থনীতি পর্যালোচনায় বর্তমানে আইএমএফ-এর আর্টিকেল ফোর মিশন ঢাকায় অবস্থান করছে। প্রতি বছরই এই সংস্থাটি সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে একটি পর্যালোচনা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এবারের মিশনটি ৮ মার্চ পর্যন্ত ঢাকায় অবস্থান করবে বলে জানা গেছে। এরই মধ্যে তারা অর্থ বিভাগের সঙ্গেও বৈঠক করবে।

আইএমএফের জন্য তৈরি করা নোটে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সামষ্টিক অনুবিভাগ সাম্প্রতিক অর্থনীতির কয়েকটি ঝুঁকির মধ্যে বাজেট বাস্তবায়ন কম হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেছে। এ সম্পর্কিত এক নোটে বলা হয়েছে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে বাজেট বাস্তবায়নের হার সরকারের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম। মূলত চলতি অর্থবছরের শুরুর দিকে অতিবৃষ্টির কারণে বাজেট ব্যয় তেমন বাড়েনি। এ ছাড়া জড়িত সংস্থাগুলোর অদক্ষতার কারণেও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বাজেট বাস্তবায়ন হচ্ছে না। যদিও অর্থবছরের বাকি সময়ে বাজেট বাস্তবায়নে গতি আসবে, তারপরও বর্তমানে বাস্তবায়নের যে হার তা নেতিবাচক বলেই উল্লেখ করা যায়।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব মুসলিম চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাজেট বাস্তবায়ন হার গতবছরের মতোই আছে। আগের বছরও এই সময়ে এই হারে বাস্তবায়ন হয়েছিল। তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত আমরা গত বছর প্রায় পুরো বাজেট বাস্তবায়ন করেছিলাম। বাজেটের আকার তুলনামূলক বড় হলেও এবারও তেমনটাই হবে বলে আশা প্রকাশ করেন অর্থ সচিব।

অর্থবছরের শুরু থেকেই এবার বাজেট বাস্তবায়ন চলছে ঢিমেতালে। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকেও (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বাজেট বাস্তবায়ন হার কম ছিল। ওই সময়ে ৪৬ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়, যা মোট ব্যয়ের মাত্র ১২ শতাংশ। গতবারের একই সময়ে বাস্তবায়ন হার ছিল ১৩ শতাংশ।  সূত্রগুলো জানায়, মূলত উন্নয়ন কার্যক্রম সঠিক সময়ে বাস্তবায়ন করতে না পারার কারণেই বাজেট বাস্তবায়নে পিছিয়ে পড়ছে সরকার। অনেক সময় সরকারের নিজস্ব তহবিলে গৃহীত প্রকল্প বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোর উৎসাহ থাকলেও বৈদেশিক সহায়তার প্রকল্পে আবার উল্টোটা দেখা যায়। অনেক সংস্থা বৈদেশিক সহায়তার প্রকল্প বাস্তবায়নে গড়িমসি করে। এ কারণে প্রকল্পে বরাদ্দকৃত অর্থ ফেরত যাওয়ার মতোও ঘটনা ঘটছে। সূত্রগুলো জানায়, বৈদেশিক সহায়তার প্রকল্পগুলো শুরু করতে অনেক সময় বছর পেরিয়ে যায়। প্রকল্প অনুমোদনের পর সমীক্ষা, ভূমি অধিগ্রহণ, পরামর্শক ও বিশেষজ্ঞ নিয়োগসহ পূর্ত কাজের টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে এ সময় লাগে। এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করতে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পের প্রস্তুতিমূলক কাজ ছয় মাস এবং বৈদেশিক অর্থায়নপুষ্ট প্রকল্পের প্রতিমূলক কাজ ৯ মাসের মধ্যে সম্পন্ন করার সুপারিশ করা হয়েছে। লিড মন্ত্রণালয়গুলোর বাজেট মনিটরের সময় পর্যালোচনা করা হচ্ছে। ফ্রাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পগুলো খোদ প্রধানমন্ত্রী মনিটর করছেন। এ ছাড়া প্রত্যেক মন্ত্রণালয়কে প্রতি তিন মাসে বাজেট বাস্তবায়নের তথ্য বাধ্যতামূলকভাবে অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানাতে বলা হয়েছে। এত উদ্যোগের পরও কেন বাজেট বাস্তবায়নে গতি বাড়ছে না? এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের লিড ইকনোমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এবার বাজেট ঘোষণার পর অনেকেই বলেছিল যে, এটি উচ্চাভিলাষী বাজেট, বাস্তবায়ন হার দেখে এখন দেখা যাচ্ছে তাদের কথাই ঠিক। বিশ্বব্যাংকের এই অর্থনীতিবিদ বলেন, বাজেট প্রণয়নে পরিকল্পনার মধ্যে যে উচ্চাভিলাষ থাকে সেটি যদি লক্ষ্য ও অর্জনের মধ্যে বড় ধরনের ব্যবধান তৈরি করে তবে সেই উচ্চাভিলাষ দেখিয়ে জাতির জন্য কোনো লাভ হবে না। আর এ ধরনের পরিকল্পনার শেষে কোনো বিশ্বাসযোগ্যতাও থাকে না। ড. জাহিদ বলেন, যদিও শেষের দিকে প্রতিবছর বাজেট বাস্তবায়ন হার বাড়ে, তারপরও এক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়ার যে দীর্ঘসূত্রিতা সেগুলো দূর করতে না পারলে এর সুফল জনগণের কাছে পৌঁছানো যাবে না।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর