মঙ্গলবার, ৬ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

খোঁজ ফয়জুরের নেটওয়ার্কের

জাফর ইকবালকে দেখতে হাসপাতালে প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা ও সিলেট

খোঁজ ফয়জুরের নেটওয়ার্কের

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল দুপুরে জঙ্গি হামলায় আহত জনপ্রিয় লেখক অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালকে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে দেখতে যান —বাংলাদেশ প্রতিদিন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, লেখক, অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) দেখতে যান। গতকাল বেলা সাড়ে ১২টার দিকে তিনি সেখানে যান। আধা ঘণ্টার বেশি সময় সিএমএইচে অবস্থান করেন প্রধানমন্ত্রী। ড. জাফর ইকবালের চিকিত্সার জন্য গঠিত পাঁচ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গতকালও তার স্বাস্থ্যের অবস্থা পর্যালোচনা করে বলেছেন, তিনি সম্পূর্ণ আশঙ্কামুক্ত আছেন। এদিকে ন্যক্কারজনক হামলার ঘটনায় গ্রেফতার ফয়জুরকে চিকিত্সার পরই রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। তবে এর বাইরেও তার জঙ্গি নেটওয়ার্কের খোঁজে মাঠে কাজ র্যাব-পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থা। শনিবার বিকালে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছুরিকাহত হন ড. জাফর ইকবাল। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ড. জাফর ইকবালকে বিমান বাহিনীর একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ওই রাতেই ঢাকায় এনে সিএমএইচ এ ভর্তি করা হয়। গতকাল সিএমএইচএ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাফর ইকবাল ও তাঁর স্ত্রী ইয়াসমিন হকের সঙ্গে কথা বলেন ও তার শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন। তিনি চিকিত্সার জন্য যা যা করণীয় তার সব কিছুই করার জন্য সংশ্লিষ্ট চিকিত্সকদের নির্দেশ প্রদান করেন।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেন, প্রধানমন্ত্রী হাসপাতালে প্রায় ৪৫ মিনিট অবস্থান করেন এবং অধ্যাপক ড. জাফর ইকবালের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন। বেশ কিছু সময় তার সঙ্গে একান্তে কথা বলেন। পরে প্রধানমন্ত্রী তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বিশেষ করে স্ত্রী ড. ইয়াসমিন হক ও মেয়ে ইয়েশিম ইকবালের সঙ্গে কথা বলেন। মেডিকেল বোর্ডের চিকিত্সকরা প্রধানমন্ত্রীকে ড. জাফর ইকবালের স্বাস্থ্যের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে অবহিত করে তাঁকে আশ্বস্ত করেন বলেও জানান প্রেস সচিব।

এদিকে ড. ইয়াসমিন হক জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী অনেকক্ষণ ছিলেন, একান্তে কথা বলেছেন। খুবই আন্তরিকভাবে কথা হয়েছে। কী আলাপ করলেন জানতে চাইলে ইয়াসমিন হক জানিয়েছেন, সেখানে সিনিয়র চিকিত্সকরা অনেকে ছিলেন। সিলেটের ওসমানী মেডিকেল থেকে আজ পর্যন্ত কী হলো না হলো মেজর জেনারেল মোতাহার তার পুরোটা ব্রিফ করেছেন। এখানে আসার পর রাতে সবাই ছিলেন, কীভাবে কেয়ার নিচ্ছেন সেসব প্রধানমন্ত্রীকে তারা জানিয়েছেন। চিকিত্সকরা বলেছেন, ‘এভরিথিং ইজ ফাইন।’

প্রধানমন্ত্রীর দেখতে যাওয়া এবং সিএমএইচ ভর্তি প্রসঙ্গে ড. ইয়াসমিন হক বলেন, উনি বঙ্গবন্ধুর মেয়ে, উনি কখনো ভুল সিদ্ধান্ত নেননি। এবার জাফর ইকবালের ক্ষেত্রে উনি যা করেছেন, আমি গ্রেটফুল।

ফয়জুরের নেটওয়ার্কের খোঁজে গোয়েন্দারা : এদিকে ড. জাফর ইকবালের ওপর হামলাকারী ফয়জুর রহমানের জঙ্গি নেটওয়ার্কের খোঁজে মাঠে নেমেছে গোয়েন্দারা। সিলেট মহানগর পুলিশ (এসএমপি) মূল তদন্ত করলেও ঢাকা থেকে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি), র্যাবসহ বিভিন্ন সংস্থা আলোচিত এই ঘটনার ছায়া তদন্ত করছে। হামলার সময় ক্যাম্পাসে ফয়জুরের কোনো সহযোগী ছিল কি-না এ ব্যাপারে এখনো নিশ্চিত হতে না পারলেও এত বড় টার্গেটের ক্ষেত্রে কখনো কোনো জঙ্গি একা সেখানে যেতে পারে না এমনটাই বলছেন গোয়েন্দারা। ফয়জুর জঙ্গিবাদে বিশ্বাসী ছিল— প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই এমনটা নিশ্চিত হয়েছিল র্যাব। তার কর্মকাণ্ড অনেকটা আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি) বর্তমানে আনসার আল ইসলামের এটাই পরিষ্কার তদন্ত সংশ্লিষ্টদের কাছে। ফয়জুরের জঙ্গি কানেকশন খুঁজতে তার বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন ও সাবেক এক কর্মস্থলের মালিককে জিজ্ঞাসাবাদ করছে র্যাব-পুলিশ। র্যাব জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ফয়জুর জানিয়েছে সে মনে করে ড. জাফর ইকবাল ইসলাম বিদ্বেষী লেখালেখি করেন। তার অনেক অনুসারী ও ভক্ত থাকায় তার লেখা পড়ে তারাও ইসলাম সম্পর্কে বিভ্রান্ত হচ্ছে। তাই হত্যার উদ্দেশে সে জাফর ইকবালের ওপর হামলা চালিয়েছিল।

এদিকে ফয়জুর একা হামলা চালালেও এর নেপথ্যে কোনো গোষ্ঠী থাকতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. জহিরুল ইসলাম বলেন, জাফর ইকবালের পেছনে অন্তত তিনজন যুবক ছিল, যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নয়। তারা ফয়জুরের আশপাশেই দাঁড়িয়েছিল। ফয়জুর এখনো হাসপাতালে চিকিত্সাধীন থাকায় তার পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। বর্তমানে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশের হাতে আটক রয়েছেন ফয়জুরের মা, বাবা ও এক মামা। এ ছাড়া র্যাব হেফাজতে রয়েছেন ফয়জুরের এক চাচা ও তার সাবেক কর্মস্থলের এক কম্পিউটার ব্যবসায়ী। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ফয়জুর ধর্মের কোনো মাযহাবে বিশ্বাসী ছিল না। ‘লা মাযহাবী’ হিসেবে সে ধর্ম পালন করত। ২০১৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে সে সিলেট নগরীর জিন্দাবাজারের রাজাম্যানশনের মঈন কম্পিউটারে চাকরি নেয়। গত জানুয়ারি মাসে বিদেশ যাওয়ার কথা বলে সে চাকরি ছেড়ে দেয়। রাজাম্যানশনে চাকরি করার সময় সে মার্কেটের মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়ে একাধিকবার মুসল্লিদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ায়। একপর্যায়ে তাকে ওই মসজিদে নামাজ পড়তে আসতে নিষেধ করেন।

সর্বশেষ খবর