শনিবার, ১০ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

দিনভর সেই ট্রাফিক পুলিশ কনস্টেবলের খোঁজ

রাজপথে যৌন হয়রানি

নিজস্ব প্রতিবেদক

দিনভর সেই ট্রাফিক পুলিশ কনস্টেবলের খোঁজ

রাজধানীর বাংলামোটরে যৌন হয়রানির ঘটনায় রমনা থানায় মামলা করেছেন ভুক্তভোগী ওই কলেজছাত্রীর বাবা। বৃহস্পতিবার রাতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলাটি হয়। রেকর্ড করা হয় ওই ছাত্রীর জবানবন্দি। এরপর দৃষ্টি চলে যায় সেই ট্রাফিক কনস্টেবলের দিকে। যিনি ওই ছাত্রীকে হয়রানির হাত থেকে রক্ষা করে বাসে তুলে দিয়েছিলেন। ঘটনার মূল রহস্য উদ্ঘাটনে আসামি গ্রেফতারের চেয়ে তার প্রতিই ঝোঁক ছিল তদন্ত কর্মকর্তাদের। গতকাল দিনভর চলে ট্রাফিক পুলিশকে খুঁজে বের করার নানা তৎপরতা। ঢাকা মহানগর পুলিশের প্রতিটি থানা, ফাঁড়ি ও ট্রাফিক পুলিশ বক্সগুলোয় পাঠানো হয় ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে সংগ্রহ করা ওই ট্রাফিক কনস্টেবলের ছবি। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, তিনি ঘটনাস্থলে দায়িত্বরত ছিলেন না। হয়তো অন্যখানে দায়িত্ব পালন করছিলেন এবং ঘটনার সময় পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাকে খুঁজে বের করার সব ধরনের চেষ্টা চলছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (এসি) ইহসান ফেরদৌস জানান, ট্রাফিক পুলিশের যে কনস্টেবল ওই তরুণীকে উদ্ধার করে বাসে তুলে দিয়েছিলেন, ভিডিও ফুটেজ থেকে তার ছবিও সংগ্রহ করা হয়েছে। তার মুখে মেহেদী দেওয়া লাল দাড়ি থাকার বিষয়টি বোঝা গেলেও এখনো তাকে শনাক্ত করা যায়নি। পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সী ওই পুলিশকে অবশ্য কেউ কেউ চিনতে পারছেন। কিন্তু নাম বলতে পারছেন না। তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। মূলত তিনিই ঘটনার প্রকৃত বর্ণনা দিতে পারবেন। এজন্যই তাকে আগে দরকার। বুধবার ৭ মার্চের জনসভায় যোগ দিতে যাওয়া একটি মিছিলে থাকা যুবকদের দ্বারা ওই ছাত্রী শারীরিক হেনস্তার শিকার হন বলে জানা যায়। ঘটনার দিনই যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার অভিযোগ এনে ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন তিনি। সেখানে লিখেন, ‘শান্তিনগর মোড়ে এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও কোনো বাস পাইলাম না। হেঁটে গেলাম বাংলামোটর। বাংলামোটর যাইতেই মিছিলের হাতে পড়লাম। প্রায় ১৫-২০ জন আমাকে ঘিরে দাঁড়াইলো। ব্যস! যা হওয়ার থাকে তাই। কলেজ ড্রেস পরা একটা মেয়েকে হ্যারাস করতেসে এটা কেউ কেউ ভিডিও করার চেষ্টা করতেসে। কেউ ছবি তোলার চেষ্টা করতেসে। আমার কলেজ ড্রেসের বোতাম ছিঁড়ে গেসে। ওড়নার জায়গাটা খুলে ঝুলতেছে। ওরা আমাকে থাপড়াইছে। আমার শরীরে হাত দিসে। আমার দুইটা হাত এতগুলা হাত থেকে নিজের শরীরটাকে বাঁচাইতে পারে নাই। একটা পুলিশ অফিসার এই মলেস্টিং চক্রে ঢুকে আমাকে বের করে এন্ড একটা বাস থামায়ে বাসে তুলে দেয়। বাকিটা পথ সেইফলি আসছি।’ এই স্ট্যাটাসটি ফেসবুকে তীব্র আলোচনার জন্ম দেয়। ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। জানতে চাইলে রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাইনুল ইসলাম এই প্রতিবেদককে বলেন, মামলার এজাহারে প্রায় ফেসবুক স্ট্যাটাসের মতোই ঘটনার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাত ১৫-২০ জনকে আসামি করা হয়েছে। ঘটনাস্থলের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে অপরাধীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে তার বক্তব্য রেকর্ডও হয়েছে। তবে এখনো কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।

পুলিশ জানায়, মামলার এজাহারে বাদী অভিযোগ করেন, তিনি ঘটনার দিন রাত ৯টায় কর্মস্থল থেকে বাসায় ফিরে জানতে পারেন তার মেয়ে কলেজ থেকে ফেরার সময় শান্তিনগর মোড়ে বাস না পেয়ে কাকরাইল মোড়ে হেঁটে যায়। সেখানেও সে বাস না পেয়ে অফিসার্স ক্লাবের আগের সিগন্যালে এসে ফার্মগেটগামী একটি বাসে ওঠে। বাসটি মগবাজার হয়ে বাংলামোটরের দিকে যাওয়ার সময় তীব্র যানজটে পড়ে। তখন তার মেয়ে বাস থেকে নেমে হেঁটে বাংলামোটরের দিকে যেতে লাগলে আনুমানিক আড়াইটা থেকে ৩টার মধ্যে ৮৯ নম্বর নিউ ইস্কাটন বাসার সামনের ফুটপাথে সাদা টি-শার্ট পরা আনুমানিক ২৫-৩০ বছর বয়সী অন্তত ১৫ জন ছেলে তাকে ঘিরে ধরে টিজিং করে। তাকে টানাহেঁচড়া করে পরিহিত স্কুল ড্রেসের জামার শোল্ডার ও দুটি বোতাম ছিঁড়ে ফেলে তারা। একজন ট্রাফিক পুলিশ তাকে উদ্ধার করে একটি বাসে তুলে দিলে সে বাসায় আসে। তিন ঘণ্টায় ওই ছাত্রীর ফেসবুক পোস্টের শেয়ার ৫ হাজার ছাড়িয়ে যায়। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সোচ্চার হন। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমালোচনাও আসে নানা জনের মন্তব্যে। ঢাকার একটি নামি কলেজের ওই শিক্ষার্থী প্রথমে পাবলিক স্ট্যাটাস দিলেও পরে তা ‘অনলি মি’ করে দেন। ফলে সেই স্ট্যাটাস আর সবাই দেখতে পান না। এর ব্যাখ্যায় তিনি আরেকটি পোস্ট করেন। সেখানে লিখেছেন— ‘আমি ভালো আছি সুস্থ আছি। পোস্টটা অনলি মি করেছি কারণ পোস্টটা রাজনৈতিক উসকানিমূলকভাবে শেয়ার করা হচ্ছিল। আমি কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পোস্টটা দিইনি। প্লাস আমার কলেজকে জড়ানো হচ্ছিল এই ব্যাপারে। ব্যাপারটার সাথে আমার কলেজের কোনো সম্পর্ক নাই।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর