সোমবার, ১২ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

খালেদার রায়ের নথি হাই কোর্টে জামিন প্রশ্নে আদেশ আজ

নাইকো দুর্নীতি মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি পেছাল

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জামিন পাচ্ছেন কিনা তা জানতে আজ বেলা ২টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। গতকাল আদেশের জন্য দিন ধার্য থাকলেও বিচারিক আদালতে নথি (এলসিআর) না পৌঁছানোয় কোনো আদেশ না দিয়ে আজ পুনরায় সময় নির্ধারণ করে হাই কোর্ট। এরপর বিকালে এলসিআর এসে পৌঁছায় হাই কোর্টে। রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি প্রকাশের ২০ দিন পর আসা এই নথির ওপরই নির্ভর করছে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জামিন।

বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চের কার্যতালিকায় খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়টি রাখা হয়েছিল এক নম্বরে। সকাল সাড়ে ১০টায় বেঞ্চের দুই বিচারপতি আসনগ্রহণের পর অন্যান্য মামলা উপস্থাপন করেন আইনজীবীরা। এরপর সকাল ১০টা ৪৪ মিনিটে খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, সর্বোচ্চ আদালতের দীর্ঘ প্রথা ও এখতিয়ার আছে নথি ছাড়াই জামিন দেওয়ার। আমরা চাই, আজই জামিনের বিষয়ে আদেশ দেন। এ সময় আদালত বলেন, এখতিয়ার আছে ঠিক। আমরা নথির জন্য আদেশ দিয়েছিলাম গত ২২ ফেব্রুয়ারি। বিচারিক আদালত আদেশের কপি হয়তো পেয়েছেন ২৫ ফেব্রুয়ারি। মাঝখানে সরকারি ছুটি ছিল। সে হিসাবে আজ ১৫ দিন শেষ হচ্ছে। জয়নুল আবেদীন বলেন, ২২ ফেব্রুয়ারি আদেশের কপি বিচারিক আদালতে পৌঁছায়। সেই হিসাবে ১৫ দিন পার হয়ে গেছে আগেই। আদালত বলে, ‘আমার মনে হয় আজকের দিনটি আমরা দেখি। আদেশের জন্য সোমবার বিকালে রাখলাম।’

এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আদালতে বলেন, এর আগে আমরা আদালতে বলেছিলাম, ‘উনারা কতজন আইনজীবী থাকবেন, আর আমরা কতজন থাকব। উনারা মোবাইল ফোনে মেসেজ দিয়ে আইনজীবীদের এখানে এনেছেন উল্লেখ করে তিনি নিজের মোবাইল ফোনে আসা এ সংক্রান্ত মেসেজ আদালতকে দেখান। তখন আদালত হাস্যরসের সঙ্গে বলেন, ‘উনারা হয়তো আপনাকে উপস্থিত থাকার জন্য মেসেজ দিয়েছেন।’ পরে আদালত খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়ে আদেশের জন্য সোমবার দুপুর ২টায় সময় নির্ধারণ করে।’ এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ফরহাদ আহম্মেদ, এ কে এম আমিন উদ্দিন এবং দুদকের পক্ষে খুরশীদ আলম খান আদালতে উপস্থিত ছিলেন। খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের মধ্যে জয়নুল আবেদীন ছাড়াও এ জে মোহাম্মদ আলী, খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, নিতাই রায় চৌধুরী, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, কায়সার কামাল ও এ কে এম এহসানুর রহমান আদালতে ছিলেন। এ সময় আদালতে বিএনপির কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা উপস্থিত ছিলেন। পরে বেলা ১২টা ৫৪ মিনিটে কোতোয়ালি থানার এএসআই মঞ্জু মিয়া বড় একটি ট্রাংকে করে মামলার নথি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে পৌঁছান। হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় নথি গ্রহণ করেন সেকশন কর্মকর্তা কে এম ফারুখ হোসেন। সেখান থেকে মামলার নথি ফৌজদারি আপিল বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। গত ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান রায় দেওয়ার ১০ দিন পর সত্যায়িত অনুলিপি পেয়ে হাই কোর্টে আপিল করেন বিএনপি চেয়ারপারসন। সঙ্গে জামিনের আবেদনও জানান তিনি। এরপর ২২ ফেব্রুয়ারি হাই কোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের বেঞ্চ খালেদা জিয়ার জরিমানা স্থগিত করে বলেন, জজ আদালত থেকে এ মামলার নথি এলে তা দেখে আদেশ দেবেন তারা। আর ২৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানি নিয়ে হাই কোর্ট জানায়, নিম্ন আদালত থেকে নথি পাওয়ার পর জামিন বিষয়ে আদেশ দেওয়া হবে। সে অনুযায়ী খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের আবেদনে বিষয়টি রবিবার আদেশের জন্য কার্যতালিকায় রাখা হয়েছিল।

নাইকো দুর্নীতি মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি পেছাল : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নাইকো দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানি পিছিয়েছে। আগামী ১৯ এপ্রিল নতুন দিন নির্ধারণ করেছে আদালত। গতকাল মামলার অভিযোগ গঠন শুনানির দিন ধার্য থাকলেও আসামি পক্ষের আইনজীবীরা অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য সময়ের আবেদন করলে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত ৯-এর বিচারক মাহমুদুল হাসান তা মঞ্জুর করে নতুন সময় ঠিক করেন। পুরান ঢাকার বকশীবাজারে কারা অধিদফতরের প্যারেড মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী এজলাসে মামলাটির বিচার চলছে। এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, ‘নাইকো দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে সময় চেয়ে আবেদন করা হলে তা মঞ্জুর করেছে আদালত।’

 তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া অন্য একটি মামলায় কারাগারে আছেন। আমরা আদালতকে তা অবহিত করে সময় চেয়েছি। আদালত শুনানি শেষে পরবর্তী অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য এই দিন ধার্য করেছে।’

মামলার অভিযোগ থেকে জানা গেছে, কানাডার কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতিসাধন ও দুর্নীতির অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে দুদকের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় নাইকো দুর্নীতি মামলাটি দায়ের করেন। পরের বছরের ৫ মে এ মামলায় খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এতে আসামিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর