মঙ্গলবার, ১৩ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

নেপালিরা ফিরছিলেন ঘরে বাংলাদেশিরা ভ্রমণে

স্বজনদের আহাজারি আর্তনাদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

নেপালিরা ফিরছিলেন ঘরে বাংলাদেশিরা ভ্রমণে

ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স অফিসে গতকাল স্বজনদের আহাজারি —রোহেত রাজীব

নেপালে বিধ্বস্ত ইউএস-বাংলার ফ্লাইটের যাত্রীদের মধ্যে নেপালিরা ফিরছিলেন ঘরে। বাংলাদেশিদের বেশিরভাগ গিয়েছিলেন ভ্রমণে, কেউ বা গিয়েছিলেন অফিসের কাজে। ফ্লাইটের বাংলাদেশি যাত্রীদের স্বজনরা উৎকণ্ঠার প্রহর গুনছেন। অনেকেই ইউএস-বাংলার ঢাকার অফিসে ভিড় করছেন। স্বজনদের কান্নাকাটি-আহাজারিতে  ভারি হয়ে আসছে সেখানকার বাতাস। পরিবারগুলো অজানা শঙ্কা, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিয়ে অপেক্ষায় রয়েছেন। স্বজনদের ভাগ্যে কী ঘটেছে জানতে পারছেন না তারা। গতকাল দুপুরে কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়ে যাত্রীদের মধ্যে অর্ধশতাধিক নিহতের শঙ্কা করা হচ্ছে। ইউএস-বাংলা জানিয়েছে, বিমানে মোট যাত্রী ছিল ৬৭ জন। এর মধ্যে বাংলাদেশি নাগরিক ছিল ৩২ জন, নেপালি নাগরিক ৩৩ জন, একজন মালদ্বীপের ও একজন চীনের নাগরিক। এর মধ্যে পুরুষ যাত্রীর সংখ্যা ছিল ৩৭ জন, মহিলা ২৮ জন ও দুজন শিশু।

রাজশাহীর রুয়েটের সিএসই বিভাগের প্রভাষক ইমরানা কবির হাসিও ছিলেন এই ফ্লাইটে। স্বামী রকিবুল হাসানও ছিলেন তার সঙ্গে। হাসির বাড়ি টাঙ্গাইলে। তিনি যাত্রা শুরুর আগে ফেসবুকে লিখেছেন— ‘ভ্যাকেশন স্টার্টস নাউ’। দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পর থেকে হাসি ও রকিবুলের স্বজনরা রয়েছেন উদ্বেগের মধ্যে। এই ফ্লাইটে ছিলেন বৈশাখী টেলিভিশনের সাংবাদিক ফয়সাল আহমেদ। এই টেলিভিশনের একজন সাংবাদিক জানিয়েছেন, ফয়সাল ছুটিতে ছিলেন। তাঁর ব্যাপারে খোঁজ নিচ্ছেন। কাঠমান্ডু যাচ্ছিলেন রিজওয়ানুল হক ও তাঁর স্ত্রী তানভীন তাহিরা শশী। রিজওয়ান সরকারি চিকিৎসক। ৩৩তম বিসিএসে চিকিৎসা ক্যাডারে উত্তীর্ণ হন তিনি। এ দম্পতি বেড়াতে যান নেপাল।

পরিকল্পনা কমিশনের অর্থনীতিক সম্পর্ক বিভাগের সিনিয়র সহকারী প্রধান নাজিয়া আফরিন চৌধুরী এবং সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সহকারী প্রধান উম্মে সালমাও ছিলেন এ ফ্লাইটে। তারা একটি কর্মশালায় অংশ নিতে কাঠমান্ডু যাচ্ছিলেন। সেইসঙ্গে গোপালগঞ্জের শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষার্থী ও কলেজ ছাত্রলীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য পিয়াস রায়ও এই ফ্লাইটে ছিলেন। যাত্রা শুরুর একটি ছবি পোস্ট করে ফেসবুকে তিনি লেখেন, ‘টাটা মাই কান্ট্রি, ফর ফাইভ ডেজ। হেইলিং টু দ্য ল্যান্ড অব দ্য এভারেস্ট’। এই ফ্লাইটেই যাত্রী ছিলেন সানজিদা বিপাশা, রফিক জামান রিমু ও তাদের আট বছর বয়সী ছেলে অনিরুদ্ধ। তারাও ভ্রমণেই গিয়েছিলেন। বিপাশার ভাই শাহরিয়ার মিঠুন বলেন, বেলা সাড়ে ১২টায় তাদের তুলে দেওয়ার সময় সর্বশেষ কথা হয়েছিল। এরপর দুর্ঘটনার খবর শুনছি। আমরা খুবই আপসেট। তার সঙ্গে কথা বলার সময় পরিবারের সদস্যদের কান্নাকাটির আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল। বিপাশা একটি বেসরকারি সংস্থা সুজনের জনসংযোগ শাখার দায়িত্ব পালন করেন। সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বিপাশার পরিবারের বিষয়ে আমরা নেপালেও যোগাযোগের চেষ্টা করছি। কোথাও থেকে কোনো খবর পাচ্ছি না। জানি না, ভাগ্যে কী ঘটেছে, আমরা প্রার্থনা করছি; ভালো খবরের আশায় রয়েছি।

নেপালিরা ফিরছিলেন ঘরে : এই ফ্লাইটে সিলেটের জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের ১৩ শিক্ষার্থী দেশে ফিরছিলেন বলে কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। কলেজের অধ্যক্ষ আবেদ হোসেন বলেন, বিমানে তাদের ১৩ জন নেপালি শিক্ষার্থী ছিলেন। তাদের মধ্যে ১১ জন ছাত্রী। আর দুজন ছাত্র। তারা এমবিবিএস ফাইনাল পরীক্ষা শেষে দেশে ফিরছিলেন। তাদের ভাগ্যে কী ঘটেছে সে বিষয়ে এখনো কিছু জানা যায়নি। এ ছাড়া নেপালে বিধ্বস্ত হওয়ার আগে ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজটির শেষ মুহূর্তের পরিস্থিতি জানা গেছে বেঁচে যাওয়া এক যাত্রীর ভাষ্যে। কাঠমান্ডু পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বসন্ত বোহোরা নামের ওই নেপালি বর্তমানে আরও ১৫ জনের সঙ্গে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। রাশিতা ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেলস অ্যান্ড টুরসের কর্মী বসন্ত জানান, তারা বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সির মোট ১৬ জন কর্মী বাংলাদেশে এক প্রশিক্ষণ শেষে নেপালে ফিরছিলেন। তিনি বলেন, ইউএস-বাংলার ফ্লাইট বিএস ২১১ ঢাকা থেকে রওনা হওয়ার সময় সব স্বাভাবিকই ছিল। কিন্তু ত্রিভুবনে অবতরণের আগ মুহূর্তে উড়োজাহাজ অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করে।

সর্বশেষ খবর