বুধবার, ১৪ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

আইনি মারপ্যাঁচে খালেদা

জামিন স্থগিত করেননি চেম্বার জজ। মুক্তিতে কুমিল্লার মামলায়ও জামিন নিতে হবে। চ্যারিটেবল মামলায় ২৮-২৯ মার্চ হাজিরা

আরাফাত মুন্না

আইনি মারপ্যাঁচে খালেদা

এতিমের টাকা আত্মসাতের দায়ে কারাভোগী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া হাই কোর্টে জামিন পেয়েছেন। গতকাল আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতিও সেই জামিন স্থগিত করেননি। আর আজ আপিল  বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চও যদি জামিন বহাল রাখে, এর পরও মুক্তি পাচ্ছেন না খালেদা জিয়া। কুমিল্লার নাশকতা মামলায় খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার দেখানোর নির্দেশ নতুন করে আইনি মারপ্যাঁচ হাজির করেছে দেশের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর সামনে। কারামুক্তির জন্য কুমিল্লার মামলায়ও আলাদা করে জামিন নিতে হবে বলে মনে করেন আইনজ্ঞরা। তারা বলেন, কেউ একাধিক মামলায় গ্রেফতার থাকলে কারামুক্তির জন্য প্রতিটি মামলায়ই জামিন নিতে হয়, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রেও এর ব্যত্যয় ঘটবে না। এদিকে, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হাই কোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত না করে আপিল আবেদন আজ শুনানির জন্য পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দিয়েছেন চেম্বার বিচারপতি। গতকাল আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এ আদেশ দেন। এর আগে খালেদা জিয়াকে হাই কোর্টের দেওয়া জামিনের বিরুদ্ধে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষ পৃথক দুটি আপিল আবেদন দায়ের করে। অন্যদিকে, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২৮ ও ২৯ মার্চ খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির করতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। গতকাল এ মামলায় আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক গ্রহণের জন্য দিন ধার্য থাকলেও তা পিছিয়ে এ আদেশ দেন ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান। এর আগে সোমবার কুমিল্লার একটি আদালত নাশকতার এক মামলায় খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার দেখানোর নির্দেশ দিয়ে ২৮ মার্চ হাজির করতে বলেছে। এ বিষয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবে কোনো আসামি যদি একাধিক মামলায় গ্রেফতার থাকেন, তাহলে প্রতিটি মামলায়ই তাকে জামিন নিতে হয়। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকেও একই পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন হাই কোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায়। আর কুমিল্লার নাশকতা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায়ও তাকে হাজির করতে বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে তার মুক্তির জন্য এ দুই মামলায়ও আলাদা করে জামিন নিতে হবে।’ অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জানান, ‘কুমিল্লার নাশকতার মামলায় জামিন না পাওয়া পর্যন্ত জামিনে কারামুক্ত হতে পারবেন না বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।’ তিনি বলেন, ‘কুমিল্লায় গাড়ি পোড়ানো ও মানুষ হত্যার প্ররোচনার (নাশকতার) সঙ্গে জড়িত থাকার মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কাস্টডি ওয়ারেন্ট জারি করা হয়েছে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তিনি কারাগারে অবরুদ্ধ আছেন। তাই এ মামলায়ও তিনি জেলে আছেন বলে ধরতে হবে। এ মামলায়ও জামিন না হওয়া পর্যন্ত তার জামিনের (জামিনে কারামুক্তি) সুযোগ নেই।’

জামিন স্থগিতে আপিলের শুনানি আজ : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার সাজায় কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হাই কোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিতের যে আবেদন করা হয়েছে, আজ তার শুনানি হবে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে। রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদকের আলাদা দুটি আবেদনের শুনানি নিয়ে চেম্বার জজ বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী কোনো আদেশ না দিয়ে বিষয়টি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এবং দুদকের পক্ষে খুরশীদ আলম খান শুনানি করেন। অন্যদিকে খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন এ জে মোহাম্মদ আলী। নিম্ন আদালত থেকে ওই মামলার নথি হাই কোর্টে আসার পর তা দেখে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের হাই কোর্ট বেঞ্চ সোমবার তাকে চার মাসের জামিন দেয়। সেই সঙ্গে তার আপিল শুনানির জন্য ওই সময়ের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখাকে পেপারবুক তৈরি করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়। খালেদা জিয়ার জামিনের বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপক্ষ দ্রুততর সময়ের মধ্যে আপিল শুনানি শুরুর আদেশ চাইলেও হাই কোর্ট চারটি যুক্তিতে জামিন মঞ্জুর করে। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম সোমবারই বলেছিলেন, তারা হাই কোর্টের জামিন আদেশের বিরুদ্ধ চেম্বার আদালতে যাবেন। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল তারা আলাদাভাবে আবেদন করেন। কিন্তু চেম্বার আদালতের সাড়া না পাওয়ায় এখন তাদের আপিল বিভাগের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

জামিন আদেশ পৌঁছেছে বিচারিক আদালতে : এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চার মাসের জামিন দিয়ে হাই কোর্টের দেওয়া আদেশের অনুলিপি পৌঁছেছে সংশ্লিষ্ট বিচারিক আদালতে। গতকাল জামিন প্রদানকারী বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিম আদেশে স্বাক্ষর করার পর বিকালে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে আদেশের কপি পৌঁছেছে। আদালতের নাজির নাজমুল আহসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা কপি পেয়েছি। নিয়ম অনুযায়ী আগামীকাল (আজ) হাই কোর্টের আদেশের অনুলিপি আদালতে উপস্থাপন করা হবে।’ এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বুধবার আমরা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার জামিননামা আদালতে উপস্থাপন করব। পরে আদালতের অনুমতিসাপেক্ষে ওই জামিননামা কারাগারে পৌঁছে দেওয়া হবে।’ ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পাঁচ বছর কারাদণ্ড এবং তার বড় ছেলে তারেক রহমানসহ আরও পাঁচজনকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান। রায় ঘোষণার পরপরই খালেদা জিয়াকে নিয়ে যাওয়া হয় রাজধানীর পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে। এখনো তিনি কারাগারেই রয়েছেন।

চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় হাজির করার নির্দেশ : জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আসামিপক্ষের যুক্ততর্কের শুনানি পিছিয়ে ২৮ ও ২৯ মার্চ নতুন দিন রেখেছে ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালত। একই সঙ্গে মামলার আসামি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নির্ধারিত দিনে আদালতে হাজিরের নির্দেশ দিয়েছেন আদালতের বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান। আদালতের পেশকার মোকাররম হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ২৮ ও ২৯ মার্চ পর্যন্ত এ মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে আসা ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় এ মামলা দায়ের করে দুদক। তদন্ত কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ চারজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর