বুধবার, ১৪ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা
নেপালে বিমান ট্র্যাজেডি

এখনই কাউকে দোষারোপ ঠিক নয়

বিশেষজ্ঞরা বললেন, কেন দুর্ঘটনা তথ্য ব্ল্যাকবক্সে, লন্ডনে পরীক্ষা করা ভালো

রুহুল আমিন রাসেল

এখনই কাউকে দোষারোপ ঠিক নয়

নেপালে বিধ্বস্ত বেসরকারি ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজের পাইলট ও কন্ট্রোল রুমের (এটিসি) কথাবার্তার মধ্যে ভুল বোঝাবুঝিই দুর্ঘটনার প্রধান কারণ নয় বলে মনে করেন বৈমানিক ও এভিশেয়ন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, মূলত প্রধান তিন কারণে উড়োজাহাজ দুর্ঘটনা ঘটলেও সঠিক বিশ্লেষণের সময় এখনো আসেনি। এখনই কাউকে দোষারোপ করা ঠিক হবে না। কারণ কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দর দুর্ঘটনাপ্রবণ। তাদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন আছে বলে মনে করেন এভিয়েশন-সংশ্লিষ্টরা। এ প্রসঙ্গে এয়ারক্রাফট ওনার্স অ্যান্ড পাইলট অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সভাপতি ও এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ নাসির মজুমদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, তিন কারণের একটি হলো, পাইলট বা কন্ট্রোল রুম যদি ভুল করে। দ্বিতীয়ত দুর্ঘটনা হয়, উড়োজাহাজের ইঞ্জিনে কোনো সমস্যা দেখা দিলে। তৃতীয় কারণ হলো, আবহাওয়াগত সমস্যা বা ইঞ্জিনে যদি পাখি ঢুকে পড়ে। কিন্তু এ দুর্ঘটনা নিয়ে দুই পক্ষ পরস্পরকে দোষারোপ করছে। নেপাল বলছে, পাইলট ভুল করেছেন। আর ইউএস-বাংলা বলছে, ত্রিভুবন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ভুল করেছে। কিন্তু কোনটা সঠিক তা তদন্তেই বের হয়ে আসবে। নাসির মজুমদারের সঙ্গে একমত পোষণ করে বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) সাবেক ফ্লাইট অপারেশন ইন্সপেক্টর ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সাবেক পাইলট ক্যাপ্টেন মোস্তফা আলী বলেন, ‘পাইলট ও কন্ট্রোল রুমের কথাবার্তার মধ্যে ভুল বোঝাবুঝিই দুর্ঘটনার প্রধান কারণ নয়। আসলে কোথাও এমন কোনো প্রভাব হয়তো পড়েছে, যা আমরা দেখছি না। পুরো তথ্য থাকবে ব্ল্যাকবক্সে। এটা নেপাল বা বাংলাদেশে পরীক্ষা করা যাবে না। করতে হবে লন্ডনে বা সিঙ্গাপুরে। এ ক্ষেত্রে লন্ডনই সবচেয়ে ভালো।’

দেশের আরেকটি বেসরকারি উড়োজাহাজ সেবা প্রতিষ্ঠান রিজেন্ট এয়ারওয়েজের উপদেষ্টা ও এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ আশীষ রায় চৌধুরী বলেন, ‘সঠিক বিশ্লেষণ দেওয়ার সময় এখনো আসেনি। পুরো বিষয়টি তদন্ত হওয়া দরকার। এর আগে কিছু বলা ঠিক হবে না। এমনকি কাউকে দোষারোপ করে কিছু বলাও ঠিক হবে না। অনেকগুলো কারণে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু চিন্তা বা ধারণা থেকে কথা বলা উচিত নয়। সার্বিক পরিস্থিতি বলতে গেলে, যাত্রীরা ভয়ভীতিতে আছেন।’

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এম এ মোমেন বলেন, ‘এটা একটা দুর্ঘটনা। এ নিয়ে বেশি করে বাড়িয়ে বলা বা কোনো ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ুক তা চাই না। কারণ কাঠমান্ডু এমনিতেই দুর্ঘটনাপ্রবণ বিমানবন্দর। তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন আছে। বেসরকারি খাতের বিকাশ চাই।’

ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের ঘটনা প্রসঙ্গে নাসির মজুমদার বলেন, চলাচলে আন্তর্জাতিক মান, রীতি-নীতি ও আইন অমান্য করা বা অবাধ্য হওয়ার সুযোগ কারও নেই। তিনি বলেন, উড়োজাহাজ ব্যবসা করতে হলে এ খাতে বড় বিনিয়োগ করতে হয়। যেসব প্রাণহানি হয়েছে, তা অত্যন্ত শোকের। কিন্তু আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। কেউ ইচ্ছামতো উড়োজাহাজ চালান না। আবার কারও ইচ্ছামতো উড়োজাহাজ চলেও না। এ জন্য আন্তর্জাতিক আইন আছে। এ আইন অবাধ্য করার কোনো সুযোগ কারও নেই।

তিনি বলেন, সারা বিশ্বেই উড়োজাহাজ পরিচালনা ও চলাচল করতে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে হয়। ফলে মানুষের মনে ভীতির নেতিবাচক ধারণা বদলাতে হবে। মানুষ তার প্রয়োজনে উড়োজাহাজে চলাচল করে। চিকিৎসা, ব্যবসা থেকে শুরু করে মানুষের অনেক নিত্য প্রয়োজনে উড়োজাহাজে চলাচল করেন। এ ক্ষেত্রে অন্য সবার মতো একজন পাইলটও নিজের জীবনকে অনেক ভালোবাসেন। একজন পাইলটকে সব ধরনের আন্তর্জাতিক দিকনির্দেশনা ও বিধিনিষেধ মেনে চলাচল করতে হয়।

এয়ারক্রাফট ওনার্স অ্যান্ড পাইলট অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের এই সভাপতি বলেন, এ দুর্ঘটনার কারণে বাংলাদেশে উড়োজাহাজ ব্যবসায় সামনের দিনগুলোতে কিছু চ্যালেঞ্জ আসবে। তবে যাত্রীদের মধ্যে এমন ভ্রান্ত ধারণা রাখা ঠিক হবে না যে, দেশীয় মালিকানার এয়ারলাইনসে জীবনের ঝুঁকি থাকে। যদিও বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান হিসেবে অনেক বড় ক্ষতি হয়েছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের। তাদের সামনের দিনগুলো হয়তো খারাপ যাবে। এমনকি অন্য এয়ারলাইনসগুলোতেও কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে। তবু এ সংকট দ্রুত কাটবে বলে আশাবাদী পর্যটন খাতের এই ব্যবসায়ী নেতা।

সর্বশেষ খবর