বৃহস্পতিবার, ১৫ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

বিধ্বংসের কারণ অনুসন্ধানে দুই দেশ

নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৫১। তদন্তে আন্তর্জাতিক সহায়তা নিচ্ছে নেপাল

জুলকার নাইন, কাঠমান্ডু (নেপাল) থেকে

বিধ্বংসের কারণ অনুসন্ধানে দুই দেশ

বিধ্বস্ত বিমানের ধ্বংসাবশেষ —এএফপি

কাঠমান্ডুতে বিধ্বস্ত ইউএস-বাংলার নিহত যাত্রীদের মরদেহের ময়নাতদন্ত চলছে নেপালে। বিমানে আগুন লেগে যাওয়ায় মরদেহগুলো এতটাই পুড়ে গেছে যে, প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে শনাক্ত করা। তারপরও ডিএনএ টেস্ট করে শনাক্তে নেপালকে সহায়তা দিতে আজ কাঠমান্ডু আসছেন বাংলাদেশের চিকিৎসকরা। অবশ্য বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে নেপালের প্রশাসনকে তাদের পুলিশি তদন্ত শেষে বাংলাদেশিদের লাশ হস্তান্তরের একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, শনাক্তকরণের কাজ দেশে নিয়ে করা হবে। ইতিমধ্যে অভিশপ্ত বিমানের পাইলট ও সর্বশেষ চীনা নাগরিকের

মৃত্যুর মাধ্যমে দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ৪৯ থেকে ৫১-তে এসে দাঁড়িয়েছে। মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনার কারণ নির্ণয়েও চলছে আরেক ধরনের ‘পোস্টমর্টেম’। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস ও ত্রিভুবন এয়ারপোর্টের পারস্পরিক দোষারোপের মধ্যেই তদন্তকাজ শুরু করেছে নেপালের সিভিল এভিয়েশন। তাদের গঠিত কমিশনকে সহায়তা দিচ্ছে বিমান প্রস্তুতকারী কোম্পানি বোমবার্ডিয়ার ও বাংলাদেশের সিভিল এভিয়েশন। ত্রিভুবন বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত ৫১ জনের মরদেহ রাখা হয়েছে কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন ইউনিভার্সিটি টিচিং হাসপাতালে। সেখানকার ডাক্তাররা এখন পোস্টমর্টেম করছেন মরদেহগুলোর। হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. প্রমোদ শ্রেষ্ঠ গতকাল বিকালে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, সোমবার থেকে শুরু করে তিন দিনে ২৪টি মরদেহের পোস্টমর্টেম করা সম্ভব হয়েছে এর মধ্যে সোমবার ৪টি, মঙ্গলবার ১১টি ও গতকাল ১০টি মরদেহ পোস্টমর্টেম করা সম্ভব হয়েছে। সবগুলো শেষ করতে আরও ৪-৫ দিন লাগতে পারে। বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে ডা. প্রমোদ আরও বলেন, মরদেহগুলোর মধ্যে ৪১টি এতটাই পুড়ে গেছে যে, সেগুলো শনাক্তকরণ অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। সবগুলো বডির মধ্যে মাত্র ৪টি থেকে ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও ৯টি থেকে দাঁতের নমুনা সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। বাকি মরদেহগুলো শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে ডিএনএ টেস্ট ছাড়া কোনো উপায় নেই বলে জানান ডা. প্রমোদ শ্রেষ্ঠ। এসব বিষয়ে গতকাল কাঠমান্ডুর বাংলাদেশ দূতাবাসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপের সময় রাষ্ট্রদূত মাশফি বিনতে শামস জানান, ডিএনএ টেস্ট সম্পন্ন করতে ২১ দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। তবে নেপালে ডিএনএ টেস্ট করার প্রযুক্তি আছে কিনা খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনে আমরা বাংলাদেশ থেকে এই প্রযুক্তি এনে দেব। তিনি জানান, মরদেহ শনাক্ত ও দেশে ফেরত নিতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য নেপালের প্রশাসনকে বলা হয়েছে। এসব বিষয়ে তার নেপালের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। এ ছাড়াও সফররত বিমান ও পর্যটনমন্ত্রীর বৈঠকগুলোতে আমাদের কথা বলার যথেষ্ট সুযোগ তৈরি হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে সফরে আসা বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামাল গতকাল নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি ওলি ও সেনাপ্রধান রাজেন্দ্র ছেত্রির সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে তিনি ত্রিভুবন ইউনিভার্সিটি টিচিং হাসপাতালের মর্গ পরিদর্শন করেন। মন্ত্রী শাহজাহান কামাল মর্গ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, লাশগুলো এতটাই পুড়ে গেছে তাদের চেনার উপায় নেই। তারপরও যাদের লাশ চেনা যায় ময়নাতদন্ত শেষ হওয়ার দুই-তিন দিনের মধ্যে দেশে নেওয়া হবে।

বিমানমন্ত্রীর সঙ্গে নেপালের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক সম্পর্কে নেপাল সরকারের মুখপাত্র বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী ওলি বাংলাদেশের মন্ত্রীকে দুর্ঘটনার সঠিক কারণ অনুসন্ধানে যথাযথ তদন্ত করার কথা জানিয়ে বলেছেন, যে কোনো মূল্যে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার কারণ জানতেই হবে। সেই সঙ্গে আহতদের সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা এবং প্রক্রিয়া শেষে নিহতদের লাশ হস্তান্তরের আশ্বাস দিয়েছেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী। এর আগে বিমানমন্ত্রী শাহজাহান কামাল নেপালের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রামবাহাদুর থাপা ও সকালে নেপালের সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল রাজেন্দ্র ছেত্রির সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে জেনারেল রাজেন্দ্র ছেত্রি বলেন, আহতদের উন্নত চিকিৎসা দেওয়া এবং নিহতদের মরদেহ স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে নেপালের আইন অনুসারে সরকারের সাধ্যে যতটা সম্ভব পুরোটাই করা হবে। এ সময় বিমানমন্ত্রী শাহজাহান কামাল বলেন, এক্ষেত্রে বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মরদেহগুলো শনাক্ত করা। সে জন্য স্বজনদের মরদেহ দেখতে দেওয়াটা প্রয়োজন। নিহত সবার স্বজন নেপালে আসতে পারেননি। এ জন্য যত দ্রুত সম্ভব সবগুলো মরদেহ বাংলাদেশে ফিরিয়ে নেওয়ার ইচ্ছার কথা জেনারেল ছেত্রিকে জানানো হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী। তিনি জানান, মরদেহ ময়নাতদন্তের পর দেশে এনে শনাক্ত করতে চাওয়ার কথা জানানো হয়েছে নেপালের সেনাপ্রধানকে। এ ছাড়া আহতদের উন্নত চিকিৎসার জন্য দরকার হলে বাংলাদেশ থেকে ডাক্তার আনার জন্য নেপাল সরকারকে বাংলাদেশ প্রস্তাব দিয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী। অন্যদিকে নিহত যাত্রীদের স্বজনরা সরাসরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ চাইছেন। কারণ ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষের নিজেদের উদ্যোগে নেপালের কাঠমান্ডুতে আসা হতাহতদের স্বজনরা বিভিন্ন হাসপাতালে গিয়েও লাশের দেখা পাচ্ছেন না। বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতা পেলেও নেপালের একাধিক হাসপাতালে তারা তেমন কোনো সহযোগিতা পাননি। এর মধ্যে এক স্বজনের দাবি, তিনি নিজে লাশ শনাক্ত করতে পারলেও মর্গে ঢোকানোর পর তিনি আর সেই লাশ দেখারও সুযোগ পাচ্ছেন না।

সর্বশেষ খবর