বৃহস্পতিবার, ১৫ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

খালেদার জামিন স্থগিত, আদালতে আইনজীবীদের হট্টগোল

থ্রেট দিবেন না : প্রধান বিচারপতি

নিজস্ব প্রতিবেদক ও কুমিল্লা প্রতিনিধি

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হাই কোর্টের দেওয়া জামিন আগামী রবিবার পর্যন্ত স্থগিত করেছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। গতকাল প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেয়। একই সঙ্গে ওই সময়ের মধ্যে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল দাখিল করতে বলেছে আপিল বিভাগ। শুনানিতে আদালতের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করায় বিএনপির আইনজীবীদের সতর্ক করেন প্রধান বিচারপতি। অন্যদিকে, আদেশের পর প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ দাবি করে বিক্ষোভ মিছিল করেন বিএনপি-জামায়াতপন্থি আইনজীবীরা।

এর আগে মঙ্গলবার দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষ খালেদা জিয়াকে হাই কোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত করতে আবেদন জানালে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি কোনো আদেশ না দিয়ে শুনানির জন্য পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল বিষয়টি আপিল বিভাগে উঠলে দুদকের আইনজীবী    খুরশীদ আলম খান জানান, তারা হাই কোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করতে চান। কিন্তু আদেশের সত্যায়িত অনুলিপি না পাওয়ায় তা করতে পারেননি। তার বক্তব্য শুনেই প্রধান বিচারপতি হাই কোর্টের জামিন রবিবার পর্যন্ত স্থগিত করে এর মধ্যে লিভ টু আপিল করতে বলেন। এ সময় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘আমাদেরকে আগে শোনেন। আমাদের বক্তব্য তো শোনেন নাই।’ প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘শুনতে হবে না। রবিবার পর্যন্ত তো স্থগিত দিয়েছি। ওই দিন আসেন। তখন শুনব।’ জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘আপনি যে একতরফাভাবে শুনানি করে আদেশ দিলেন, এতে আদালতের প্রতি পাবলিক পারসেপশন খারাপ হবে।’ জবাবে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমরা পাবলিক পারসেপশনের দিকে তাকাই না। আদালতকে আদালতের মতো চলতে দিন।’ এরপর জয়নুল আবেদীন ও এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘না শুনেই তো আদেশ দিলেন।’ আদালত বলেন, ‘আমরা অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দিয়েছি। আমাদের শোনার দরকার নেই।’ এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আদালতে উপস্থিত ছিলেন। বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের হট্টগোল : আদেশ দেওয়ার পর খালেদা জিয়ার পক্ষে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সহসভাপতি গিয়াস উদ্দিন আহমদ উত্তেজিত হয়ে দাঁড়িয়ে আদালতকে বলেন, ‘আপনি তো না শুনেই একতরফা আদেশ দিলেন। আমাদের কথা শুনতে হবে। কেন শুনবেন না।’ তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘কার কথা শুনব, কার কথা শুনব না, তা কি আপনার কাছে শুনতে হবে!’ গিয়াস উদ্দিন আরও উত্তেজিত হয়ে একই কথা বললে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনি কি আদালতকে থ্রেট করছেন?’ গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘শুনে তারপর আদেশ দিতে হবে।’ তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আদালতকে থ্রেট দেবেন না।’ এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ করে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘আপনি তো কোর্টকে শেষ করে দিলেন।’ তখন অ্যাটর্নি জেনারেল কোনো উত্তর না দিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়েই ছিলেন। এ সময় বিএনপি-জামায়াতপন্থি আইনজীবীরা ‘শেম, শেম, দালাল দালাল’ বলে আদালতকক্ষ ত্যাগ করেন। এ সময় আদালতে হট্টগোলপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। আদালতে হট্টগোলের বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘খালেদা জিয়ার পক্ষে তালিকাভুক্ত আইনজীবী নন, এমন একজন বিএনপি সমর্থক আইনজীবী আদালতে উচ্চৈঃস্বরে উষ্মা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখার চেষ্টা করেছিলেন। প্রধান বিচারপতি তাকে নিবৃত করে ভবিষ্যতে এ ধরনের আচরণ করতে নিষেধ করেন।’ নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেনি : আপিল বিভাগের আদেশে নিয়ম বা আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি বলেন, ‘সাধারণত যখন জানানো হয় হাই কোর্টের আদেশে স্বাক্ষর হয়ে গেছে তখন শতভাগ ক্ষেত্রেই আপিল বিভাগ মূল পিটিশন শুনতে চায়। আদেশের সার্টিফায়েড কপি দিয়ে লিভ টু আপিল আবেদন দাখিল করতে বলে এবং সে অনুযায়ীই আদেশ দিয়ে দেয়। এটাই নিয়ম।’ খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা যেটা বলতে চাচ্ছেন তা সঠিক নয় জানিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আদেশের কপি ছাড়া উভয় পক্ষকে শুনে কোনো লাভও হবে না।’ আদালত আমাদের কথা শোনেননি : আদেশের পর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের কোনো বক্তব্য তিনি (প্রধান বিচারপতি) শুনলেন না। কোনোরকম আইনগতভাবে এই মামলাটি মোকাবিলা করার জন্য ন্যূনতম সুযোগ আমাদের দিলেন না। স্টে অর্ডার পাস করলেন।’ বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের বিক্ষোভ : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত করায় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের পদত্যাগ চেয়ে বিক্ষোভ করেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। তারা নানা স্লোগান দেন। আপিল বিভাগ থেকে বের হয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবন প্রদক্ষিণ করেন তারা। কুমিল্লায় হাজিরা পরোয়ানা প্রত্যাহার ও জামিন শুনানি ২৮ মার্চ : কুমিল্লার আদালতে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের করা হাজিরা পরোয়ানা (প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট) প্রত্যাহার ও জামিন আবেদন আগামী ২৮ মার্চ শুনানির দিন ধার্য করেছে আদালত। কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৫ নম্বর আমলি আদালতের বিচারক মুস্তাইন বিল্লাহ এ আদেশ দেন।

খালেদা জিয়ার পক্ষে আবেদনকারী অ্যাডভোকেট কাইমুল হক রিংকু সাংবাদিকদের গতকাল এ তথ্য নিশ্চিত করেন। অ্যাডভোকেট রিংকু মঙ্গলবার হাজিরা পরোয়ানা প্রত্যাহার ও জামিনের আবেদন করেন। উল্লেখ্য, ১২ মার্চ বিকালে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত  কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কুমিল্লার ৫ নম্বর আমলি আদালতের বিচারক মুস্তাইন বিল্লাহ কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বাসে পেট্রলবোমা হামলায় আটজন হত্যা মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ২৮ মার্চ হাজির করার নির্দেশ দেন। কুমিল্লা আদালতের পরিদর্শক সুব্রত ব্যানার্জি বলেন, একটি জিআর মামলায় বেগম জিয়াকে গ্রেফতারের আবেদন উপস্থাপন করলে কুমিল্লার ৫ নম্বর আমলি আদালত তার নামে হাজিরা পরোয়ানা জারি করেন। পরোয়ানাটি ওই দিনই ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

সর্বশেষ খবর