শনিবার, ১৭ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

দুর্নীতি রোধ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় টিআইবির ৯ দফা

গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং সমাজ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতি প্রতিরোধে কার্যকর, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

দুর্নীতিমুক্ত ও সুশাসিত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নয় দফা দাবি উত্থাপন করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং সমাজ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতি প্রতিরোধে দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) জাতীয় শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকর, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের দাবি জানানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার ধানমন্ডি কার্যালয়ে টিআইবির সদস্যদের বার্ষিক সভায় এ দাবি জানানো হয়। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানের সঞ্চালনায় সভায় সংস্থার বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও টিআইবির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য এম হাফিজউদ্দিন খান উপস্থিত ছিলেন। টিআইবির সাধারণ পর্ষদে টিআইবির সদস্যদের প্রতিনিধি অধ্যাপক ড. এ  কে এম ফজলুল হকের সভাপতিত্বে সভায় ৪৬ জন সদস্য অংশগ্রহণ করেন। সভা শেষে প্রকাশিত ঘোষণাপত্রে নয় দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধে কার্যকর দুর্নীতি দমন কমিশন, কালো টাকা বৈধ করার সুযোগ বাতিল ও আর্থিক খাতে আস্থা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ, জাতীয় উন্নয়নে স্বচ্ছতা, অংশগ্রহণ ও পরিবেশের প্রতি সংবেদনশীলতা, তথ্যের অধিকার, অবাধ তথ্য প্রবাহ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, তৃণমূলে কার্যকর, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক সেবা, জবাবদিহিমূলক ও গণতন্ত্রচর্চা, সবার সমান অধিকার নিশ্চিত করার জন্য আইনের শাসন, সব স্তরে কার্যকর, জবাবদিহিমূলক ও স্বচ্ছ প্রতিষ্ঠানের বিকাশ, ন্যায্য, সুশাসিত ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। ঘোষণাপত্রে বলা হয়, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল প্রকাশিত সাম্প্রতিক দুর্নীতির ধারণাসূচকে বাংলাদেশের দুই ধাপ অগ্রগতি স্বস্তিদায়ক, কিন্তু মোটেই সন্তোষজনক নয়। দুর্নীতির জন্য অভিযুক্ত সবাইকে পরিচয় ও অবস্থানের ঊর্ধ্বে আইনের চোখে সমান দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। সর্বোপরি দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাধারণ জনগণের সোচ্চার ভূমিকা পালনের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে, যার দায়িত্ব সরকারের। ঘোষণাপত্রে দুর্নীতিকে ঘৃণা করার সম্মিলিত অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে ব্যক্তিগত এবং পেশাগত জীবনে দুর্নীতি থেকে বিরত থাকার অঙ্গীকার করা হয়। এ ছাড়া প্রত্যেকে নিজ অবস্থান অনুযায়ী একক ও সমষ্টিগতভাবে দুর্নীতিকে কার্যকরভাবে প্রতিরোধের চেষ্টাসহ ন্যায্য, সুশাসিত ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সবাইকে একযোগে কাজ করতে সচেষ্ট থাকার অঙ্গীকার করা হয়।

সভায় টিআইবির সদস্যরা বিভিন্ন স্তরে পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের কারণে শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের পাশাপাশি মেধাভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন ধূলিসাতের আশঙ্কা প্রকাশ করেন। টিআইবির সদস্যরা প্রশ্ন ফাঁস বন্ধে সরকারের ব্যর্থতায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা প্রশ্ন ফাঁস, ভর্তিবাণিজ্য ও নিয়োগবাণিজ্য বন্ধে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানোর পাশাপাশি এসব অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানান। তারা বলেন, অবাধ তথ্য প্রবাহ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা গণতন্ত্র ও সুশাসনের পূর্বশর্ত এবং দুর্নীতি প্রতিরোধে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক হাতিয়ার। তথ্য অধিকার আইনসহ জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রকাশকারীর সুরক্ষা আইনের কার্যকর বাস্তবায়ন এবং গণমাধ্যমসহ জনগণের মত ও তথ্য প্রকাশের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তারা সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে উদ্যোগী ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা, প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩২ ধারা এবং বৈদেশিক অনুদান (স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রম) রেগুলেশন আইনের ১৪ ধারা বাতিলের দাবিও জানান টিআইবির সদস্যরা।

সর্বশেষ খবর