রবিবার, ১৮ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

বাংলাদেশ আর পিছিয়ে নেই : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক ও গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি

বাংলাদেশ আর পিছিয়ে নেই : প্রধানমন্ত্রী

উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উত্তরণে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ আর পিছিয়ে নেই। জাতির পিতার যে স্বপ্ন ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা, সেই পথেই আমরা আরও একধাপ এগিয়েছি। তাই আজকে জাতির পিতার জন্মদিনে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উত্তরণের এই সুখবর আমাদের জন্য এক বিরাট সফলতা বলে আমি মনে করি। গতকাল দুপুরে টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৯তম জন্মদিন এবং জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে আয়োজিত শিশু সমাবেশ, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ভাষণকালে এ কথা বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় আমরা একধাপ পিছিয়ে পড়েছিলাম। আজকে আমরা খবর পেয়েছি আমরা পিছিয়ে পড়ে নেই। এই অঞ্চলের সব দেশের সঙ্গে সমানতালে তাল মিলিয়ে আমরা এগিয়ে যেতে পারব। জাতির পিতার জন্মদিনে আজকে সংবাদটি পেলাম, আমাদের এত দিনের প্রচেষ্টার ফলে আজকের বাংলাদেশ, যে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ ছিল, আজ সেই বাংলাদেশ জাতিসংঘ কর্তৃক উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। জাতির পিতার জন্মদিনে এই সুখবরটা বিরাট একটা অর্জন বলে আমি মনে করি। সে জন্য দেশের সবাইকে আমি আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।  বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীতে সকালে ধানমন্ডিতে তার প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে হেলিকপ্টারে গোপালগঞ্জ রওনা হন শেখ হাসিনা। টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে ফুল দেওয়ার পর সেখানে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত শিশু সমাবেশে ভাষণ দেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। জাতির পিতার জন্মদিনটি জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট নিহত তার ছোট ভাইয়ের নামে ‘শেখ রাসেল’ ডাকটিকিট ও বিশেষ খাম অবমুক্ত করেন। এরপর তিনি ‘আমাদের ছোট্ট রাসেল সোনা’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন। পরে তিনি দুজন দুস্থ মহিলার হাতে সেলাই মেশিন তুলে দেন। সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কারও বিতরণ করেন। সাধারণ নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে এ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন শিশু প্রতিনিধি আরাফাত হোসেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। শিশুদের পক্ষ থেকে শিশু প্রিয়ন্তি সাহা পিউ স্বাগত বক্তব্য দেয়। এর আগে সকাল ১০টা ১০ মিনিটে প্রথমে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধের বেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় তিন বাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করে। পরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ফাতেহা পাঠ ও বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেন। রাষ্ট্রপতি সমাধি সৌধের সামনে রাখা মন্তব্য বইয়ে স্বাক্ষর করে। পরে শেখ হাসিনা দলীয় আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে দলীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া, এলজিআরডি মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, শেখ হেলাল উদ্দিন এমপি, আওয়ামী লীগ উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ, শেখ কবির হোসেন, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান, আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, কেন্দ্রীয় নেতা এস এম কামাল হোসেন, উম্মে রাজিয়া কাজল এমপি, গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি চৌধুরী এমদাদুল হক, সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলী খান, সালাউদ্দিন পান্না, এস এম আক্কাস আলী, গোপালগঞ্জ পৌর মেয়র কাজী লিয়াকত আলী, এম বদরুল হাসান, মৃণাল কান্তি রায় চৌধুরী, শহর আওয়ামী লীগ সভাপতি হাসমত আলী সিকদার চুন্নু, যুবলীগ নেতা ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নাঈম, কেন্দ্রীয় নেতা বাবুল আক্তার বাবলা, জেলা যুবলীগ সভাপতি শাহাবুদ্দিন আযম, সাধারণ সম্পাদক এমবি সাইফসহ কেন্দ্রীয়, স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় ফুলে ফুলে ভরে ওঠে বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধের বেদি।

বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস পালিত : যথাযোগ্য মর্যাদা ও উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে গতকাল ১৭ মার্চ উদযাপিত হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৮তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস। সারা দেশেই ছিল নানা কমসূচি।

এ উপলক্ষে ঢাকায় দিনব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে ছিল জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, কেক কাটা, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল, বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীদের প্রার্থনা, আলোচনা সভা, শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বইমেলা, স্বেচ্ছায় রক্তদান, বিনামূল্যে চিকিৎসা, পুরস্কার বিতরণ, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ইত্যাদি। গতকাল ছিল সরকারি ছুটি। ভোর সাড়ে ৬টায় জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠনের কর্মসূচি শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল ৭টায় ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে দলীয় প্রধান হিসেবে দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে তিনি বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু ভবন এলাকা ত্যাগ করার পর আওয়ামী লীগের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করেন।  আজিমপুর এতিমখানায় দুস্থ ও এতিমদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে আলোচনা সভার আয়োজন করে হল শাখা ছাত্রলীগ। জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনামূল্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা সেবা, রক্তদান, কর্মসূচি, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতাসহ নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

দিনটিতে শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর। ক, খ ও গ- গ্রুপে স্কুল পর্যায়ের তিন শতাধিক শিশু শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উদযাপিত হয়েছে। কেক কাটা, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, শিশু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, সংগীতানুষ্ঠান ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান সভাপতিত্ব করেন। এ ছাড়াও কেন্দ্রীয় মসজিদসহ আবাসিক হল, হোস্টেল, মসজিদ ও উপাসনালয়ে দোয়া ও প্রার্থনা করা হয়। দিনটি উপলক্ষে সকালে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ সাহানে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের শাহাদাত্বরণকারী সব সদস্যের রুহের মাগফিরাত কামনায় কোরআনখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মহিউদ্দীন কাশেম। বায়তুল মোকাররম মিলনায়তনে ইসলামিক ফাউন্ডেশন ‘বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজালের সভাপতিত্বে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনা সভার আয়োজন করে মহানগর সর্বজনীয় পূজা কমিটি। ডি এন চ্যাটার্জির সভাপতিত্বে এতে আওয়ামী লীগ নেতা সুজিত রায় নন্দী, সাংবাদিক স্বপন কুমার সাহা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর