রবিবার, ১৮ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা
নেপালে বিমান ট্র্যাজেডি

বাংলাদেশি ১৭ লাশ শনাক্ত

হাসপাতালে দাঙ্গা পুলিশ, আহত আরও একজন ফিরলেন

জুলকার নাইন, কাঠমান্ডু (নেপাল) থেকে

বাংলাদেশি ১৭ লাশ শনাক্ত

নেপালে ইউএস-বাংলার বিমান দুর্ঘটনায় আহত আরও একজন গতকাল ফিরলেন ঢাকায় —বাংলাদেশ প্রতিদিন

নেপালের ত্রিভুবন ইউনিভার্সিটি টিচিং হাসপাতালে ১৭ বাংলাদেশির লাশ শনাক্তের কথা জানিয়েছেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা। এ দিন ১৪ নেপালি ও এক চীনা নাগরিকের লাশসহ মোট ৩২টি লাশ বিভিন্ন নমুনা ক্রস ম্যাচিংয়ের মাধ্যমে শনাক্ত করা সম্ভব হয়।

শনাক্ত হওয়া নিহত বাংলাদেশিরা হচ্ছেন— শিশু অনিরুদ্ধ জামান, তাহিরা তানভীন শশী, মিনহাজ বিন নাসির, রাকিবুল হাসান, মতিউর রহমান, রফিক-উজ জামান, তামারা প্রিয়ংময়ী, আকতার বেগম, হাসান ইমাম, এস এম মাহমুদুর রহমান, বিলকিস আরা, ফয়সাল, সানজিদা, নুরুজ্জামান, বিমানটির পাইলট ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতান, কো-পাইলট পৃথুলা রশীদ ও কেবিন ক্রু খাজা সাইফুল্লাহ।

গতকাল সন্ধ্যায় হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের পক্ষ থেকে লাশগুলোর নাম প্রকাশ করেন বিভাগের প্রধান প্রমোদ শ্রেষ্ঠা ও বাংলাদেশি মেডিকেল টিমের সদস্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদসহ অন্যরা।

এর আগে কাঠমান্ডু টিচিং হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে,  ছুটির দিন হলেও লাশ শনাক্ত করার কাজ করছেন চিকিৎসকরা। এতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ত্রিভুবন ইউনিভার্সিটি টিচিং হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রমোদ শ্রেষ্ঠা। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের তিন সদস্যের দলটিও। বাংলাদেশ দূতাবাস ও ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের কর্মকর্তারা শনাক্ত করার কাজটি তদারকি করছেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ ডা. সোহেল মাহমুদও আছেন এই দলে। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘লাশের ময়নাতদন্ত-পরবর্তী কাজগুলো গুছিয়ে করার জন্য নেপালের দলের সঙ্গে বাংলাদেশের দলের একটি বৈঠক হয়েছে। আসলে নেপালের একরকম নিয়ম, বাংলাদেশের আরেক রকম নিয়ম। এ জন্যই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটি সমঝোতায় পৌঁছানোর চেষ্টা করে কমন একটি প্রক্রিয়া নির্ধারণ করার চেষ্টা করা হয়েছে এই বৈঠকে। তিনি বলেন, ‘প্রথমে অ্যান্টি মোর্টেম ডাটা কালেকশন হচ্ছে। তারপর সেগুলো কাগজপত্রে প্রোফাইলের কাজ চলছে। এরপর আত্মীয়স্বজনদের ডেকে আইডেন্টিফিকেশন হলে লাশ হস্তান্তর শুরু হবে। গত সোমবার নেপালের কাঠমান্ডুতে বিধ্বস্ত হয় ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজ ড্যাশ ৮কিউ-৪০০। প্রাণ হারান ৪৯ জন। এর মধ্যে বাংলাদেশি ২৬ জন। বাকিরা নেপাল, চীন ও মালদ্বীপের নাগরিক। নেপালে আসা বাংলাদেশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রথম পর্যায়ে শুধু চোখে দেখেই স্বজনরা নিজ নিজ আপনজনের লাশ শনাক্ত করবেন। এর আগে সবগুলোই ডিএনএ প্রোফাইল তৈরি করা হবে। খালি চোখে যেসব মৃতদেহ শনাক্ত করা সম্ভব হবে সেগুলো আগামী মঙ্গলবার দেশে পাঠানো হবে। যেসব মৃতদেহ শনাক্ত করা সম্ভব হবে না, সেগুলোর ডিএনএ প্রোফাইলিং থেকে শনাক্ত করা হবে। প্রোফাইলিংয়ের জন্য মৃতদেহের ফিঙ্গারপ্রিন্ট অথবা দাঁত, চুল, নখ বা পোশাকের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এর আগে শুক্রবার কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে যেসব মৃতদেহের স্বজনরা নেপালে উপস্থিত নেই তাদের ঢাকার সিআইডির ডিএনএ ল্যাবে গিয়ে ডিএনএ নমুনা জমা দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। হাসপাতালে দাঙ্গা পুলিশ : দুর্ঘটনার পর থেকেই হাসপাতাল চত্বরে ভিড় করে থাকা স্বজনরা গতকালও ছিলেন উদগ্রীব। হাসপাতালের পাশে দাঙ্গা পুলিশেরও অবস্থান নিতে দেখা গেছে। এরই মধ্যে গতকাল দুপুরের দিকে মরদেহ দেখানোসহ বিভিন্ন দাবিতে তিন ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন নিহত নেপালিদের স্বজনরা। হাসপাতালের মর্গের সামনে জড়ো হয়ে ‘নিহতদের পরিবার’ লেখা একটি ব্যানারে দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন তারা। ব্যানারটিতে নিহতদের স্বজনদের স্বাক্ষরও দেখা গেছে। এতে দাবি করা হয়, শনিবার সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে নিহত যাত্রীদের মধ্যে যাদের পরিচয় দেওয়া সম্ভব তাদের তালিকা প্রকাশ করতে হবে। ফিরলেন আরও একজন : নেপালের কাঠমান্ডুতে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আহত আরেক বাংলাদেশি শেখ রাশেদ রুবায়েতকে গতকাল দেশে আনা হয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য এ পর্যন্ত আহত ১০ জনের মধ্যে ছয় বাংলাদেশি কাঠমান্ডু ছাড়লেন। প্রত্যেকেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন। দেশে ফিরে আসা এই আহতদের নিয়ে আর তেমন বড় কোনো শঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা। আজ আরও দুজন এবং পরশু মঙ্গলবার একজনকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। দুর্ঘটনায় অপর আহত ইমরানা কবির হাসির অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় তাকে সিঙ্গাপুর কিংবা ভারতের দিল্লিতে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। রুবায়েতকে বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের বিজি-০৭২ ফ্লাইটটি বেলা ৩টার দিকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। পরে সেখান থেকে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের তত্ত্বাবধানে তাকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢামেক হাসপাতালে নেওয়া হয়। তাকে হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের ছয়তলার ভিআইপি কেবিনের ডিআরএস কক্ষে রেখে পর্যবেক্ষণ শুরু করেন চিকিৎসকরা। বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘তার বার্ন তেমন হয়নি, কিন্তু ডান পায়ে ও শরীরের অন্যান্য স্থানে ইনজুর (আঘাত) হয়েছে। তাই বিশেষজ্ঞ প্লাস্টিক ও অর্থোপেডিক সার্জন দিয়ে তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।’ গতকাল সকালে ঢামেক হাসপাতালে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ জানান, চারজনের অবস্থাই এখন শঙ্কামুক্ত।

বড় ধরনের কোনো শঙ্কা না থাকলেও মানসিক ট্রমা আছে। তাদের ইতিমধ্যে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা দেখেছেন। দেশে ফিরে আসা আহতদের চিকিৎসায় ডা. সামন্ত লাল সেনের নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের বিশেষজ্ঞ মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।

বোর্ডের অন্য সদস্যরা হলেন— অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ, অধ্যাপক ডা. সাজ্জাদ হোসেন খন্দকার, অধ্যাপক ডা. ফারুক আলম, অধ্যাপক ডা. রায়হানা আওয়াল, অধ্যাপক ডা. মহিউদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক এ জে এম মোস্তাক হোসেন তুহিন, অধ্যাপক মো. শামসুজ্জামান, অধ্যাপক ডা. মোজাফফর হোসেন, অধ্যাপক ডা. আবদুল্লাহ আল মামুন, ডা. মো. জাহাঙ্গীর কবির, জহির উদ্দিন ও জামাল হোসেন।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর