সোমবার, ১৯ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

দেশে আজ আসছে ২৩ লাশ

দুজনের ডিএনএ পরীক্ষায় লাগবে এক সপ্তাহ, আহত একজন চিকিৎসাধীন, বাকিরা নেপাল ছেড়েছেন

জুলকার নাইন, কাঠমান্ডু (নেপাল) থেকে

দেশে আজ আসছে ২৩ লাশ

আহত আরও একজন গতকাল দেশে ফিরেছেন —রোহেত রাজীব

নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলার বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ২৬ বাংলাদেশির মধ্যে শনাক্ত হওয়া ২৩টি লাশ আজ ঢাকায় নিয়ে আসা হচ্ছে। আজ বিকাল ৪টায় বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ বিমানে করে নিহত যাত্রীদের লাশ আসবে ঢাকায়। শনাক্ত হওয়া এই ২৪ জনের লাশ গতকাল ধর্মীয় নিয়মানুসরণ করে গোসল ও অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষ করে আলাদা আলাদা কফিনবন্দী করা হয়েছে। আজ সকাল ৬টায় কাঠমান্ডুর বসুন্ধরা এলাকায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস প্রাঙ্গণে নিহতদের প্রথম জানাজার আয়োজন করা হয়েছে। জানাজা শেষে সকাল ৯টায় ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবেন দুর্ঘটনার পর থেকে নেপালে অবস্থান করা আহত-নিহতদের স্বজনরা। গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত শনাক্ত না হওয়া ৩ বাংলাদেশি আলিফুজ্জামান ও পিয়াস রায়ের লাশ পরবর্তীতে ডিএনএ টেস্টের জন্য কাঠমান্ডুতেই থাকছে। তাদের স্বজনদের অপেক্ষা আরও দীর্ঘ হচ্ছে। চিকিৎসকরা আশ্বাস দিচ্ছেন এক সপ্তাহের মধ্যে ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে শনাক্ত করার। জানা যায়, দুর্ঘটনার ছয় দিন পর নেপাল ও বাংলাদেশের যৌথ চিকিৎসক দলের পক্ষ থেকে ফরেনসিক পরীক্ষা ও ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল পর্যন্ত ২৪ বাংলাদেশির লাশ শনাক্ত করা গেছে। এখনো যাদের লাশ শনাক্ত হয়নি তাদের স্বজনদেরও ডিএনএ স্যাম্পল সংগ্রহ করা হয়েছে। শনিবার রাতের আগেই শনাক্ত নিহত বাংলাদেশি যাত্রীরা হলেন মো. রফিক জামান, সানজিদা হক, অনিরুদ্ধ জামান, তাহিরা তানভিন শশী, মিনহাজ বিন নাসির, মো. রকিবুল হাসান, মো. মতিউর রহমান, মোসাম্মৎ আখতারা বেগম, মো. হাসান ইমাম, তামারা প্রিয়ন্ময়ী, এসএম মাহমুদুর রহমান, বিলকিস আরা, ফয়সাল আহমেদ ও নুরুজ্জামান। দুর্ঘটনার সময় উড়োজাহাজটিতে থাকা চার পাইলট ও ক্রুর মধ্যে তিনজনের লাশ শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে শনিবার। তারা হলেন উড়োজাহাজের পাইলট আবিদ সুলতান, পৃথুলা রশীদ ও ক্রু খাজা সাইফুল্লাহ। গতকাল শনাক্ত করা হয় আরও ৬ বাংলাদেশির লাশ। তারা হলেন, নুরুন্নাহার বিলকিস বানু, নাজিয়া আফরিন চৌধুরী, আঁখি মণি, এফএইচ প্রিয়ক, উম্মে সালমা ও শারমিন নাহার নাবিলা। রাত ৮টার দিকে নজরুল ইসলামের লাশ শনাক্ত হওয়ার কথা অনানুষ্ঠানিকভাবে জানান চিকিৎসকরা। কাঠমান্ডুতে গত সোমবার ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় নিহত হয় মোট ২৬ বাংলাদেশি। সে হিসেবে আর দুজনের লাশ শনাক্তে ডিএনএ পরীক্ষা করতে হচ্ছে। শনাক্ত না হওয়াদের মধ্যে আছেন আলিফুজ্জামান ও পিয়াস রায়। দুর্ঘটনার পর যাত্রীদের স্বজনদের নিয়ে কাঠমান্ডু যাওয়া ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইমরান আফিফ জানান, গত ১৩ মার্চ ৪৬ স্বজনকে নিয়ে নেপাল আসে ইউএস বাংলা এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট। তাদের আসা-যাওয়া এবং এখানে থাকার সব ব্যবস্থাও করেছে ইউএস-বাংলা। এখন নিহত বেশিরভাগের লাশ ঢাকায় যাচ্ছে। আহতদের চিকিৎসাও হচ্ছে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের বাইরে। তাই হতাহতদের স্বজনদের নিয়ে বেসরকারি বিমান সংস্থাটির বিশেষ ফ্লাইট আজ ঢাকা ফিরছে। এই ফ্লাইটে শনাক্ত না হওয়া নিহতদের স্বজনদেরও ফিরতে হবে বলে জানিয়েছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ। ঢাকার আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, ঢাকার কুর্মিটোলায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর বিএএফ বঙ্গবন্ধু ঘাঁটিতে লাশ বহনকারী বিমানটি ৪টায় এসে পৌঁছবে।

আহতদের একজন ছাড়া সবাই নেপালের বাইরে : গত ১২ মার্চ সোমবার নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় ৫১ যাত্রী নিহত হন। এর মধ্যে ২৬ জন বাংলাদেশি। ওই দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ১০ বাংলাদেশি নেপালের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হলেও গতকাল পর্যন্ত মাত্র একজন বাংলাদেশি সেখানে চিকিৎসাধীন থাকছেন। সর্বশেষ শাহীন বেপারী গতকাল ঢাকায় এসে পরবর্তী চিকিৎসা নেওয়া শুরু করেছেন। আজ সকাল ৭টায় নয়াদিল্লি যাচ্ছেন ইয়াকুব আলী। ইমরানা কবির হাসির অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়েছে গত রাতেই। আহত যাত্রী রাশেদ রুবায়েত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে শনিবার ঢাকা পৌঁছান। গত শুক্রবার দেশে ফিরে যান গাজীপুরের শ্রীপুরের বাসিন্দা সৈয়দ কামরুন্নাহার স্বর্ণা, আলমুন নাহার অ্যানি ও মেহেদী হাসান। বুধবার সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয় ডা. রেজওয়ানুল হককে। একই দিন শাহরীন আহমেদকে ঢাকায় নিয়ে এসে চিকিৎসা দেওয়া শুরু করেন তার ভাই। নেপালে আসা চিকিৎসক ঢাকা মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক হোসাইন ইমাম জানান, আরেক আহত যাত্রী কবির হোসেন এখন নরভিক হাসপাতালে আছেন। কবিরের বিষয়ে তাই এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না চিকিৎসকরা। তবে কবিরের ছেলে চিকিৎসকদের বলেছেন, তার বাবা কথা বলতে পারছেন এবং খেতেও পারছেন। শুধু পায়ে কোনো অনুভূতি পাচ্ছেন না। এটা পুরোপুরি ঠিক হতে ছয় মাস চিকিৎসার প্রয়োজন হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর