সোমবার, ১৯ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

খালেদার জামিন প্রশ্নে আপিল বিভাগের আদেশ আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হাই কোর্টের দেওয়া জামিন বহাল থাকবে কি না এ বিষয়ে আজ আদেশ দেবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। হাই কোর্টের দেওয়া এই জামিনের বিরুদ্ধে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের দায়ের করা লিভ টু আপিলের (আপিলের অনুমতি) শুনানি শেষ হয় গতকাল। পরে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ আদেশের জন্য আজকের দিন ধার্য করে। আপিল বিভাগের কার্যতালিকার ২ ও ৩ নম্বরে আবেদন দুটি আদেশের জন্য রাখা হয়েছে। খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়ে আপিল বিভাগে শুনানি থাকায় সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় নেওয়া হয় বাড়তি নিরাপত্তা। বিচারপ্রার্থীসহ সবাইকে আদালত চত্বরে প্রবেশ করতে হয়েছে  কড়া তল্লাশির মধ্য দিয়ে। গতকাল সকালে লিভ টু আপিলের শুনানির শুরুতে দুদকের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। এরপর রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম তার বক্তব্য তুলে ধরেন। পরে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন তার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী ও খন্দকার মাহবুব হোসেন।

শুনানিতে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, হাই কোর্ট খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়ে যেসব যুক্তি দিয়েছে তা আপিল বিভাগের রায়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তিনি বলেন, হাই কোর্ট খালেদা জিয়াকে চার যুক্তিতে জামিন দিয়েছে। এর প্রথমটি হলো খালেদা জিয়া জামিনের অপব্যবহার করেননি। এ সময় তিনি বিচারিক আদালতের আদেশ পড়ে শোনান এবং বলেন, খালেদা জিয়া আদালতের অনুমতি ছাড়াও বিদেশে গেছেন। এর থেকে জামিনের অপব্যবহার আর কী হতে পারে? খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয় প্রসঙ্গে দুদকের আইনজীবী বলেন, চিকিৎসকদের কোনো কাগজপত্র তিনি দেননি। তিনি বয়স্ক মহিলা এবং শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় বিচারিক আদালত তাকে ১০ বছরের সাজা না দিয়ে পাঁচ বছরের সাজা দেওয়া সমীচীন বলে মনে করেছেন। তিনি একই সুবিধা বারবার পেতে পারেন না।

আদালতে দুদকের আইনজীবী বলেন, এ মামলায় রায়ের আগে ও পরে দুই মাস ২৫ দিন ধরে কারাগারে আছেন। হাই কোর্টে উনাকে চার মাসের জামিন দিয়েছেন। এ সময়ের মধ্যে পেপারবুক প্রস্তুতের নির্দেশ দিয়েছেন। পেপারবুক প্রস্তুত হলে শুনানি হোক সে পর্যন্ত তিনি জেলে থাকুন। আপিল নিষ্পত্তি হলে তিনি আবার জামিন আবেদন চাইতে পারবেন। এ সময় আদালত বলেন, এই উপমহাদেশে জয়ললিতা, লালুপ্রসাদ যাদব কতদিন কারাগারে ছিলেন? জবাবে খুরশীদ আলম খান বলেন, জয়ললিতার দুর্নীতি মামলায় বিচারিক আদালত তাকে দোষী সাব্যস্ত করেন। সুপ্রিম কোর্টেও এ রায় বহাল ছিল। তার সহযোগী শশীকলা এবং অন্য আরেকটি মামলায় লালু প্রসাদ যাদব এখনো কারাগারে আছেন। কাজেই খালেদা জিয়া দুই মাস ২৫ দিনের মধ্যে জামিন পাবেন এটা ঠিক হবে না।

অ্যাটর্নি জেনারেল যা বললেন : শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাৎ হবে, আর তার সঙ্গে জড়িত থাকবেন সরকারের প্রধান ব্যক্তি, তিনি কোনো অনুকম্পা পেতে পারেন না। তিনি বলেন, বিচারিক আদালত খালেদা জিয়ার বয়স, সামাজিক মর্যাদা বিবেচনা করে তাঁর সাজার মেয়াদ কমিয়েছেন। একই বিবেচনায় তিনি কতবার অনুকম্পা পাবেন? বিচারিক আদালত অনুকম্পা দেখিয়েছে।

হাই কোর্ট এই মামলার শুনানির জন্য চার মাসের মধ্যে পেপার বুক তৈরির নির্দেশ দিয়েছে—এ বিষয়টি তুলে ধরে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, হাই কোর্ট চার মাস সময় বেঁধে দিয়েছে। আপনারা (আপিল বিভাগ) সময় কমিয়ে দুই মাস করে দেন। বিডিআরের মতো বড় মামলাতেও অল্প সময়ের মধ্যে পেপার বুক প্রস্তুত করা হয়েছিল। অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, যখন বিচারিক আদালতে বিচার চলছিল, তখনকার অবস্থা আর এখনকার অবস্থা এক নয়। এখন খালেদা জিয়া একজন দণ্ডিত আসামি। তার বয়স ও অসুস্থতা বিচারিক আদালত আগে বিবেচনা করে ১০ বছরের জায়গায় পাঁচ বছর সাজা দিয়েছে। তার সাজা খাটা শেষ হয়ে যাবে আর তার আপিল শুনানি শেষ হবে না, এমন তো কখনো হয়নি। এটা অসম্ভব। অবশ্যই শুনানি হবে। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এর আগে খালেদা জিয়া বিভিন্ন অজুহাতে সময়ক্ষেপণ করেছেন। তিনি জামিনের অপব্যবহারও করেছেন। তিনি কোর্টকে পাত্তাই দিচ্ছেন না। এ সময় সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও লালু প্রসাদ যাদবের মামলার নজির আদালতকে পড়ে শোনান তিনি। খালেদা জিয়ার অসুস্থতার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা অসুস্থতার যে বিষয়টি তুলে ধরেছেন, এই অসুখ নিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রিত্ব করেছেন, বিদেশ গেছেন, তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়েছেন।

শুনানিতে খালেদার আইনজীবীরা যা বললেন : অ্যাটর্নি জেনারেলের পর শুনানি শুরু করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী। তিনি বলেন, আপিল বিচারাধীন থাকাবস্থায় হাই কোর্ট জামিন দিতে পারেন, আবার নাও দিতে পারেন। তবে জামিন দেওয়াটাই স্বাভাবিক। লঘুদণ্ডের কারণে হাই কোর্ট জামিন দিয়েছে। জামিন না দেওয়ার নজির খুবই কম। সাধারণত দেখা যায়, আপিল বিভাগ হাই কোর্টের জামিনের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করেনি। তিনি বলেন, স্বল্পমেয়াদে সাজা একটি দিক, আর আপিল হচ্ছে আরেকটি দিক। সাজা যদি কমে তাহলে ভারসাম্যের ওপর জোর দিতে হবে। লাখ লাখ সাধারণ মামলা ছেড়ে দিয়ে এটাকে সামনে আনা হচ্ছে। এটাকেই আগে শুনতে হবে। উনি (অ্যাটর্নি জেনারেল) অনেক বড় গল্প বললেন। আমি এটার জবাব দেওয়া সমীচীন মনে করি না। মামলাটি আদালতের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় চলুক। আমি মনে করি, হাই কোর্টের জামিনের সিদ্ধান্ত সঠিক। এ পর্যায়ে খালেদা জিয়ার আরেক আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, এটা খালেদা জিয়ার মামলা তাই, এ মামলার গুরুত্ব অনেক। তিনি না হলে আমরাও আসতাম না সরকারও এত উৎসাহী হতো না। হাই কোর্টের ক্ষমতা আছে জামিন দেওয়ার।

সর্বশেষ খবর