মঙ্গলবার, ২০ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা
বিশ্লেষণ

চাপটা নিতে পারেনি বলেই শিরোপা হাতছাড়া

রাশেদুর রহমান

সরল দোলকের মতো দুলতে থাকা ম্যাচটা একপেশে করে দিয়েছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান। ১৮ নম্বর ওভারে মাত্র ১ রান দিয়েছিলেন। শিকার করেছিলেন ১টা উইকেটও। এরপর ড্রেসিং রুমে বসে ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা সম্ভবত তিক্ত পরাজয়ের ধাক্কাটা সামলে উঠার কসরত করছিলেন। কিন্তু দীনেশ কার্তিক বদলে দিলেন পাশার দান। ১৯তম ওভারের প্রথম বলেই রুবেলকে ছক্কা মারলেন। মোমেন্টামটা ভারতের পক্ষে তৈরি হয়ে যায় এরপরই। ১১ বলে ২৮ রানের লক্ষ্যটাও তখন খুব মামুলি মনে হচ্ছিল কার্তিকদের কাছে। অন্যদিকে প্রথম বলে ছক্কা খাওয়ার চাপটা আর সামলে উঠতে পারেননি রুবেল হোসেন। দুইটা ছক্কা ও দুইটা চারে ওভার থেকে ২২ রান তুলে নেন কার্তিক। শেষ ওভারে ১২ রানের লক্ষ্যটা অনেক সহজ ছিল ভারতীয়দের!

১২ বলে ৩৪ রান। লক্ষ্যটা যে কোনো ক্রিকেটের জন্যই কঠিন। বিশেষ করে ফাইনালের মতো কোনো ম্যাচে। যেখানে দুই দলের উপরই প্রচণ্ড চাপ থাকে। কিন্তু মোমেন্টামটা ঘুরে গেলে কিছু করার থাকে না। সাবেক ক্রিকেটার তারিক আজিজ ব্যাখ্যা দিলেন এমনটাই।  ‘রুবেলের ওভারে প্রথম বলটা ছক্কা হওয়াতেই ম্যাচটা ভারতের দিকে ঘুরে গিয়েছিল। এই মোমেন্টামটা ধরে রেখেছে দীনেশ কার্তিক।’ বিপরীত দৃশ্য টাইগারদের মাঝে। শেষ ওভারে সৌম্যও আর কার্তিককে রুখতে পারলেন না। এমনকি শেষ বলে ছয় মেরে জয়ের মতো ঘটনাও ঘটল। যা মনে করিয়ে দিয়েছিল মিয়াঁনদাদের বিখ্যাত সেই ইনিংসকে। ১৯৮৬ সালে শারজায় চেতন শর্মাকে শেষ বলে ছক্কা মেরেই ভারতকে হারিয়েছিলেন মিয়াঁনদাদ। সেই ম্যাচে শেষ বলে জয়ের জন্য চার রান প্রয়োজন ছিল পাকিস্তানের। শেষ বলে ছয় মেরে জয়ের ঘটনা অবশ্য আরও চারটা আছে। ১৯৯৯ সালে ল্যান্স ক্লজনার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নেপিয়ারে শেষ বলে ছক্কা মেরে জিতিয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকাকে। বাংলাদেশের বিপক্ষেই আরও একটি ছয় মারার ঘটনা আছে। ২০০৬ সালে হারারেতে জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যান টেইলর মাশরাফিকে ছক্কা মেরে জিতিয়েছিলেন দলকে। শেষ বলে সেবারও ৫ রান প্রয়োজন ছিল টাইগার প্রতিপক্ষদের। এছাড়াও ছয় মেরে জয়ের ঘটনা ঘটিয়েছেন শ্রীলঙ্কার চামারা কাপুগেদারা ও দক্ষিণ আফ্রিকার রায়ান ম্যাকলারেন। শ্রীলঙ্কায় নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে ভারতের কাছে অবিশ্বাস্য পরাজয় কোটি কোটি ক্রিকেটভক্তের মনকে ভারাক্রান্ত করেছে। কিন্তু বাংলাদেশ যে নিডর ক্রিকেটটা খেলতে পারে, সেই বিশ্বাসও জাগাতে পেরেছে। অধিনায়ক সাকিব আল হাসান তাই ম্যাচের পর পরই বলেছিলেন, কেঁদে কিছু হবে না। সত্যিই হতাশ হয়ে কিছু হবে না। বরং সামনে এগিয়ে যাওয়া শপথটাকেই আরও শাণিত করতে হবে। গত ৯ বছরে ৫টি ফাইনাল হেরেছে বাংলাদেশ। পরেরবার হয়ত এই পরিসংখ্যানটাই টাইগারদের জয়ের বাসনটা বহুগুণে বাড়িয়ে দিবে!

সর্বশেষ খবর