বুধবার, ২১ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

খালেদা জিয়ার ব্রিটিশ আইনজীবী নিয়োগ সাজা বৃদ্ধি চায় দুদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলাসহ সব মামলায় দেশি আইনজীবীদের সহায়তা করতে লন্ডনের এক আইনজীবীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে আইনি পরামর্শ দেবেন ব্রিটেনের আইনজীবী লর্ড কার্লাইল। এসব মামলার বিচার কার্যক্রমে আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের মানদণ্ড মেনে চলা হচ্ছে কিনা, সেদিকেও লক্ষ্য রাখবেন তিনি। যুক্তরাজ্য থেকে মামলাগুলোর দেখভাল করবেন তিনি। প্রয়োজনে বাংলাদেশেও আসবেন। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, আবদুস সালাম, আতাউর রহমান ঢালী, সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, বিএনপি নেতা আবদুস সালাম আজাদ, আমিনুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলায় আইনি লড়াইয়ে এখানকার যে আইনজীবী প্যানেল রয়েছে, তাদের সহযোগিতা ও পরামর্শ দেওয়ার জন্য লর্ড কার্লাইলকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। লর্ড কার্লাইল একজন প্রখ্যাত ব্যারিস্টার। বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে বেগম খালেদা জিয়ার মামলা ও সাজার বিষয় তুলে ধরতেও কাজ করবেন লর্ড কার্লাইল। তা ছাড়া বেগম খালেদা জিয়ার সব মামলার আইনজীবী প্যানেলের সদস্য হবেন তিনি। মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে কিনা সে বিষয়েও পরামর্শ দেবেন।

মির্জা ফখরুল আরও জানান, ব্রিটিশ এই আইনজীবী দীর্ঘ ২৮ বছর খণ্ডকালীন বিচারকের দায়িত্ব পালন করেছেন এবং উচ্চ আদালতের বিচারক হিসেবেও যুক্ত ছিলেন। এ ছাড়া তিনি নয় বছরের বেশি সময় ধরে যুক্তরাজ্যে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের স্বাধীন সমালোচক ছিলেন। ২০১২ সালে ব্রিটেনের রানী কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে জাতীয় নিরাপত্তা পরিসেবার জন্যও কাজ করেছেন। মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার নামে ৩৬টি মামলা দেওয়া হয়েছে। নজিরবিহীনভাবে মিথ্যা মামলায় তাকে সাজা দেওয়া হয়েছে। এর পরিপেক্ষিতে প্রবাসী বন্ধুরা যারা ব্রিটেনে জাতীয়তাবাদী দলের সঙ্গে যুক্ত আছেন, তারা ব্রিটিশ আইনজীবীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে প্রখ্যাত এই আইনজীবীকে নিয়োগ দিয়েছেন। তিনি মামলা পরিচালনায় জেনারেল ল ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানা হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে আমাদের দেশীয় আইনজীবীদের সহায়তা করবেন।’

সাজা বৃদ্ধির আবেদন করবে দুদক : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধির জন্য বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আপিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এরই মধ্যে আপিল আবেদন দাখিলের প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছেন বলে গতকাল জানিয়েছেন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। সোমবার দুদকের এক বৈঠক থেকে এই সিদ্ধান্ত আসে বলে তিনি জানান। এর আগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হাই কোর্ট থেকে দেওয়া চার মাসের জামিন ৮ মে পর্যন্ত স্থগিত করে সোমবার আদেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘কমিশন থেকে আমাকে জানানো হয়েছে খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধির জন্য আপিল করার বিষয়টি অনুমোদন করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘বিচারিক আদালত খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সাজা দিয়েছে। এ সাজার বিরুদ্ধে অর্থাৎ সাজা বৃদ্ধি চেয়ে উচ্চ আদালতে আপিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক।

আমাকে বলা হয়েছে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য। আমি প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছি।’ দুদকের আইনজীবী বলেন, ‘এখন আপিল করার জন্য অনেক সময় প্রয়োজন। ভালোভাবে প্রস্তুতিও নিতে হবে। কারণ কেন প্রধান আসামির সাজা বৃদ্ধির জন্য আপিল করলাম তার উপযুক্ত ব্যাখ্যা আপিল আবেদনে থাকতে হবে। আশা করি আপিল আবেদনটি আগামী সপ্তাহেই দাখিল করতে পারব।’ ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান গত ৮ ফেব্রুয়ারি এ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন। তবে খালেদার ছেলে তারেক রহমানসহ অন্য পাঁচ আসামির প্রত্যেককে দেওয়া হয় ১০ বছরের কারাদণ্ড। শারীরিক অবস্থা, বয়স এবং সামাজিক পরিচয় বিবেচনা করে খালেদা জিয়াকে ৫ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে বলে বিচারক রায়ে উল্লেখ করেন। কারাদণ্ডাদেশ পাওয়ার পর থেকে খালেদা জিয়া পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কারাগারে বন্দি আছেন। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর মামলার নথি নিম্ন আদালত থেকে এনে তা দেখে ১২ মার্চ খালেদা জিয়াকে চার মাসের জামিন দেয় হাই কোর্ট। এ জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদকের আবেদনের পর নিয়মিত লিভ টু আপিল করলে আপিল বিভাগ তা গ্রহণ করে আগামী ৮ মে আপিল শুনানির জন্য রেখেছে। ফলে সে পর্যন্ত খালেদা জিয়াকে কারাগারেই থাকতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

সর্বশেষ খবর