সোমবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কি আসন্ন

সিরিয়াতে মার্কিন ব্রিটেন ফ্রান্সের হামলা, রাশিয়া চীনের পাল্টা হুমকি, জাতিসংঘের বৈঠক

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কি আসন্ন

যুদ্ধে সিরিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা পরিণত ধ্বংসস্তূপে। ওয়াশিংটন ডিসিতে গতকাল যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ (ডানে) ছবি : সিএনএন ও এএফপি

শনিবার, সিরিয়ার দামেস্কে তখন ভোর ৪টা। টিভিতে সম্প্রচার শুরু হয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভাষণ। তিনি বলেন, ‘কিছুক্ষণ আগে আমি যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীকে সিরিয়ার স্বৈরশাসক বাশার আল আসাদের রাসায়নিক অস্ত্রের স্থাপনাগুলোয় আক্রমণের নির্দেশ দিয়েছি। সিরিয়ায় বর্বরতার বিরুদ্ধে ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের একযোগে চালানো এই প্রতিক্রিয়া আমাদের সামরিক, অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক ক্ষমতাকে সংহত করবে। দানব আসাদের সমর্থক রাশিয়া ও ইরানকে নতুন করে ভাবাবে।’ এ ভাষণ শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের বারজাহ শহর তীব্র শব্দ ও ধোঁয়ায় কেঁপে ওঠে। মাত্র আট মিনিটের এ ভাষণের মধ্যেই অন্তত ছয়টি বিকট শব্দের বিস্ফোরণ হয়। ভাষণ শেষ হলেও থামেনি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা। প্রায় ৭০ মিনিট ধরে চলেছে আকাশপথের এ হামলা। এতে শুধু সিরিয়াই কেঁপে ওঠেনি, কেঁপে উঠেছে পুরো বিশ্ব। কারণ পরাশক্তিগুলোর মুখোমুখি অবস্থানের কারণে কয়েক দিন ধরেই বিশ্বজুড়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা বাজছে। সবাই শঙ্কিত, এগুলো কি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিক্ষেপ করা প্রথম ক্ষেপণাস্ত্র। ঘটনার পর ৪৮ ঘণ্টা কেটে গেলেও দূর হয়নি শঙ্কা। রাশিয়ার পাল্টা হুমকি বরং বাড়িয়েছে উদ্বেগ। খবর ছড়িয়েছে, মস্কো সরকারের বরাত দিয়ে রাশিয়ার সরকারি গণমাধ্যম নাগরিকদের খাবার মজুদ রাখার পরামর্শ দিয়েছে। তাহলে, সত্যিই কি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে জড়াচ্ছে বিশ্ব? এএফপি, রয়টার্স, এপি ও আলজাজিরাসহ বার্তা সংস্থাগুলোর খবরে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স বলছে, সিরিয়া সরকারের ‘রাসায়নিক অস্ত্রের স্থাপনার’ বেশ কয়েকটিতে তাদের বিমান ও নৌবাহিনী কার্যকর হামলা চালিয়েছে। তারা ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ১০৫টি। রাশিয়া মনে করছে, রাসায়নিক হামলা নয়, বরং আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সিরীয় সশস্ত্র বাহিনীর সফলতার কারণেই তাদের ওপর এ হামলা চালানো হয়েছে। মোট ১০৩টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের তথ্য নিশ্চিত করে ৭১টিকে গুলি করে ভূপাতিত করার দাবি করেছে রাশিয়া। দুই মিত্র যে দাবিই করুক, হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ৪০ জন এবং ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। সন্তুষ্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রয়োজনে আরও হামলার হুমকি দিয়েছেন তিনি। অন্যদিকে রাশিয়া, চীন, ইরান, জর্দান, বলিভিয়া এ হামলার নিন্দা জানিয়েছে। রাশিয়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, এ হামলার বদলা নেওয়া হবে। ক্ষিপ্ত রাশিয়া জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে নিন্দা প্রস্তাবও আনে। তবে তার পক্ষে ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদে বলিভিয়া ও চীন ছাড়া আর কেউ ভোট দেয়নি। ফলে রাশিয়ার প্রস্তাবটি খারিজ হয়ে গেছে। কিন্তু দমেনি রাশিয়া।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর খবর : যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের সেনাবাহিনীর সঙ্গে মিলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ হামলা চালায়। হামলায় অংশ নেয় চারটি ব্রিটিশ টর্নেডো ফাইটার জেট। এসব যুদ্ধবিমান থেকে ছোড়া হয় স্টর্ম শ্যাডো ক্রুজ মিসাইল। যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, এ হামলায় টাইফুন ফাইটার জেটও ব্যবহার করা হয়েছে। সাইপ্রাসের রয়েল এয়ারফোর্স ঘাঁটি আকরোতিরি থেকে সিরিয়ার হোমসে রাসায়নিক অস্ত্রের ভাণ্ডার লক্ষ্য করে এসব বিমান উড়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সদর দফতর পেন্টাগন জানিয়েছে, ব্রিটিশ এই যুদ্ধবিমানগুলো থেকে আটটি স্টর্ম শ্যাডো মিসাইল ছোড়া হয়েছে। এ ছাড়া সিরিয়া মিশনে অংশ নিয়েছে ফ্রান্সের রাফেল ফাইটার জেট। ফ্রান্সের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফ্লোরেন্স পার্লে জানান, তাদের বিভিন্ন বিমান ঘাঁটি থেকে বিমানগুলো উড়ে গেছে। ব্রিটিশ টর্নেডোর মতো এ রাফেল বিমানগুলোও দুই ইঞ্জিনবিশিষ্ট। এগুলোতেও স্টর্ম শ্যাডো মিসাইল সংযুক্ত থাকে, যা ২৫০ মাইলের বেশি উড়তে সক্ষম। এর অর্থ এই বিমানগুলোও সিরিয়ার আকাশসীমায় না পৌঁছেই দেশটিতে হামলা চালাতে সক্ষম। মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ফরাসি মিরেজ জেটও হামলায় অংশ নেয়। সব মিলিয়ে ফ্রান্সের যুদ্ধবিমানগুলো নয়টি মিসাইল ছুড়েছে। সিরিয়া হামলায় মার্কিন বিমানবাহিনী দুটি বি-১ বোমার ব্যবহার করেছে বলে জানিয়েছে পেন্টাগন। চার ইঞ্জিনবিশিষ্ট বি-১ ১৯টি জেএএসএসএম ক্রুজ মিসাইল ছুড়েছে। যেগুলো ৪৫০ কেজি ওয়ারহেড বহনে সক্ষম এবং এটি ৩৭০ কিলোমিটারেরও বেশি দূরের লক্ষ্যমাত্রায় আঘাত হানতে পারে। পেন্টাগন আরও জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি যুদ্ধজাহাজ ও একটি সাবমেরিন সিরিয়া হামলায় অংশ নেয়। লোহিত সাগর থেকে স্থলে টমাহক ক্রুজ মিসাইল ছোড়া হয় ৩০টি। এ ছাড়া ইউএসএস লাবুন ছোড়া হয় সাতটি। এর মধ্যে ইউএসএস হিগিনস ২৩টি টমাহক ছোড়ে উত্তর আরব সাগর থেকে। পেন্টাগনে এক ব্রিফিংয়ে জেনারেল জোসেফ ডানফোর্ড বলেন, তিন লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়। এগুলো হলো দামেস্কের বৈজ্ঞানিক গবেষণাগার, হোমসে একটি রাসায়নিক অস্ত্রভাণ্ডার ও  হোমসের পাশেই আরেক অস্ত্রভাণ্ডার। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ছোড়া বেশিরভাগ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করেছে সিরিয়ার বিমানবাহিনী। রাশিয়ার সামরিক বাহিনী কোনো ধরনের সাহায্য করেনি দাবি করেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, সিরীয় সেনাবাহিনীর বেশ কয়েকটি বিমান ঘাঁটি, শিল্প ও গবেষণা স্থাপনায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ১০৩টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন তারা। সিরিয়ার এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ৭১টি ক্ষেপণাস্ত্রকে পথভ্রষ্ট বা আকাশেই আটকে দিয়েছে। রুশ সেনাবাহিনীর তথ্যের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, দামেস্ক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লক্ষ্য করে চারটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়। দামেস্কের পূর্বে জামরাইয়া বিমান ঘাঁটি লক্ষ্য করে ছোড়া হয় ১২টি ক্ষেপণাস্ত্র, সেগুলোর সবকটি গুলি করে ভূপাতিত করা হয়। রাজধানীর দক্ষিণের মারজ রুহাইল বিমান ঘাঁটি লক্ষ্য করে ১৮টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়। হোমসের শাইরাত বিমান ঘাঁটি লক্ষ্য করে ছোড়া হয় ১২টি ক্ষেপণাস্ত্র। সেগুলোও ভূপাতিত করা হয়। মেজেহ সামরিক বিমানবন্দর লক্ষ্য করে ছোড়া নয়টির মধ্যে পাঁচটি ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করা হয়েছে। হোমসের বিমান ঘাঁটি লক্ষ্য করে ছোড়া ১৬টি ক্ষেপণাস্ত্রের ১৩টিই ভূ-পাতিত করা হয়েছে। রুশ সেনা কর্মকর্তা রুডসকি বলেন, সিরিয়ার বারজেহ ও জারামানায় কথিত রাসায়নিক অস্ত্রের কর্মসূচি লক্ষ্য করে ১৩টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছিল। সেগুলোর সাতটি ভূপাতিত করা হয়েছে। তবে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ওই স্থাপনাগুলো আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

উল্লসিত ট্রাম্প, ক্ষুব্ধ পুতিন : সিরিয়ায় হামলার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প টুইটারে বলেন, ‘মিশন সম্পন্ন’। ২০০৩ সালে ইরাক যুদ্ধের সময়ও এই একই বাক্য ব্যবহার করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ, যা তাকে একজন জেদি রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে পরিচিত করে তোলে। হামলার প্রশংসা করে ট্রাম্প আরও বলেন, ‘অভিযানটি ছিল নিখুঁত। ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের বিচক্ষণতার জন্য ধন্যবাদ। এর চেয়ে ভালো কিছু হওয়া সম্ভব ছিল না।’ অন্যদিকে, সিরিয়ার সামরিক-বেসামরিক এলাকায় যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্রদের বিমান হামলা জাতিসংঘের চুক্তি (ইউএন চার্টার) ও আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে দাবি করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। মার্কিন জোটের হামলার প্রতিক্রিয়ায় দেওয়া এক বিবৃতিতে পুতিন আরও বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত সার্বভৌম একটি রাষ্ট্রের বিপক্ষে আগ্রাসন চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।’ তিনি উল্লেখ করেন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের সম্মিলিত হামলা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে অনুমোদিত নয়। এ হামলার মধ্য দিয়ে জাতিসংঘকে পাশ কাটানো হয়েছে। বিবৃতিতে পুতিন আরও দাবি করেন, সিরিয়া সংকটের এ সময়ে এমন হামলা আন্তরাষ্ট্রীয় সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটাবে। এ হামলার পর সিরিয়া থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে ছোটা শরণার্থীর সংখ্যা আরও বাড়বে।

পক্ষে-বিপক্ষে বিশ্ব : সিরিয়ায় আর কোনো সামরিক অভিযানে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিলেও জাতিসংঘের স্থায়ী সদস্য হিসেবে মিত্র যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যকে সমর্থন দিয়েছে জার্মানি। জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মেরকেল বলেন, ভবিষ্যতে রাসায়নিক হামলার ব্যাপারে সিরিয়া সরকারকে সতর্ক করতে এ হামলার প্রয়োজন ছিল। তবে সিরিয়ার হামলার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে চীন। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি বিবৃতিতে বলা হয়, সিরিয়ার হামলা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। হামলার নিন্দা জানিয়েছে ইরান। দেশটির শীর্ষ নেতা আয়াতুল্লাহ আল খোমেনি বলেন, এ হামলা অপরাধ ছাড়া আর কিছুই নয়। আর এ অপরাধের জন্য যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের আমি পরিষ্কারভাবে অপরাধী বলছি। যুক্তরাষ্ট্রের মিত্ররাষ্ট্র জর্দান এ হামলাটাকে খুবই বিপজ্জনক আগ্রাসন হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। জর্দানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, এর মাধ্যমে সিরিয়ার নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা আরও নষ্ট হবে। ফলে এ অঞ্চলে কোণঠাসা হয়ে পড়া সন্ত্রাসবাদীরা আবারও বিস্তারের সুযোগ পাবে। খবরে বলা হচ্ছে, যুক্তরাজ্য হামলায় অংশ নিলেও এর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে যুক্তরাজ্যের বিরোধী দল লেবার পার্টি। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে’র সরকারের এ অভিযানের আইনগত বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন লেবার নেতারা। অন্যদিকে, মার্কিন রাজনৈতিক নীতিনির্ধারকদের একটা বড় অংশ ট্রাম্পের বর্তমান কার্যকলাপের সমর্থন জানাচ্ছেন। তবে নীতিনির্ধারকদের আরেকটি দল সাত বছর ধরে চলা সিরিয়া যুদ্ধকে ‘মার্কিন সরকারের দীর্ঘমেয়াদি কৌশলের অভাব’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। এই দ্বিতীয় দলেরই একজন রিপাবলিকান সিনেটর জন ম্যাককেইন। মিসাইল হামলার পর একটি বিবৃতিতে তিনি জানান, কেবল আকাশপথে হামলার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের মিশনে সফল হওয়া সম্ভব নয়। দীর্ঘমেয়াদি সাফল্যের জন্য সিরিয়া ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলোতে অনেক বেশি আক্রমণাত্মক কৌশল অবলম্বন করতে হবে।

নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়ার প্রস্তাব খারিজ : সিরিয়ার দৌমায় সরকারি বাহিনীর সন্দেহভাজন রাসায়নিক হামলার প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের একযোগে চালানো বিমান হামলার নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে আনা রাশিয়ার প্রস্তাব খারিজ হয়ে গেছে। শনিবার মস্কোর আনা এ নিন্দা প্রস্তাবের পক্ষে ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদে বলিভিয়া ও চীন ছাড়া আর কেউ ভোট দেয়নি। পেরু, কাজাখস্তান, ইথিওপিয়া ও একোয়াটোরিয়াল গিনি ভোটদানে বিরত ছিল। অপরদিকে তিন স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সসহ আট সদস্য বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। প্রস্তাব খারিজ হয়ে যাওয়ার পর জাতিসংঘে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভাসেলি নেবেনজিয়া পরিষদের স্থায়ী তিন সদস্যের প্রতি প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন, ‘যে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছিলেন, তার ফলের জন্য কেন আপনারা অপেক্ষা করলেন না। আসলে সিরিয়ায় হামলা চালিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাল। তবে আমি আশাবাদী উত্তেজিত মাথাগুলো একসময় ঠাণ্ডা হয়ে আসবে।’

অন্যদিকে, জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস সব পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের অনুরোধ জানিয়েছেন। নিরাপত্তা পরিষদে দেওয়া এক বক্তব্যে তিনি সিরিয়ার জনগণের দুর্ভোগ বাড়ে এমন কোনো পদক্ষেপ না নিতে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আহ্বান জানান।

সিরিয়াকে বাদ রেখে বসেছে আরব লীগ : সিরিয়া নিয়ে বিশ্বনেতাদের দ্বন্দ্ব ও সৌদি আরবের সঙ্গে ইরানের উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আরব লীগ নেতারা রবিবার রিয়াদে শীর্ষ সম্মেলনে বসছে। তবে এ সম্মেলনে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে ডাকা হয়নি। তাকে বাইরে রেখেই আরব লীগ নেতারা সিরিয়ার বিষয়ে আলোচনা করবেন। যদিও আরব লীগ থেকে সিরিয়া বহিষ্কৃত।

আরব লীগের ২২ দেশকে সঙ্গে নিয়ে সৌদি আরব তার পুরনো প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ইরানকে মোকাবিলা করতে চায়। আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী এই দুই দেশ সিরিয়া ও ইয়েমেনে এক ধরনের যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে। এ ছাড়া উভয় দেশ ইরাক ও লেবাননে পরস্পরবিরোধী অবস্থানে রয়েছে।

সর্বশেষ খবর