মঙ্গলবার, ১৭ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা
গ্যাঁড়াকলে জোট মহাজোট

আসন ভাগাভাগি নিয়ে তাগাদা আওয়ামী লীগ শরিকদের

৭০ আসন ও ১২ মন্ত্রণালয় চান এরশাদ - আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত : কাদের

রফিকুল ইসলাম রনি

আসন ভাগাভাগি নিয়ে তাগাদা আওয়ামী লীগ শরিকদের

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আট মাস বাকি থাকলেও এখনই আসন ভাগাভাগির তাগিদ দিচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটের শরিকরা। এরই মধ্যে মহাজোটের সাবেক শরিক ও সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ৭০টি আসন ও ১০-১২টি মন্ত্রণালয় দাবি করেছেন। ১৪-দলীয় জোটের অন্য শরিকরা আসন বণ্টনের বিষয়টির সুরাহা চান এখনই। আর জোটের প্রধান শরিক আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সময়মতো আলোচনার মাধ্যমে আসন চূড়ান্ত করা হবে। আওয়ামী লীগের     নীতিনির্ধারণী সূত্রে জানা গেছে, আগামী সংসদ নির্বাচনে ১৪ দলের শরিক ও জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ভাগ্য নির্ভর করছে বিএনপির সিদ্ধান্তের ওপর। বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে এক হিসাব আর অংশ না নিলে অন্য হিসাব— এ বিষয়টি মাথায় রেখেই নির্বাচনের পথে এগোচ্ছে আওয়ামী লীগ। বিএনপির প্রার্থী দেখে নিজেদের ও শরিক জোটের প্রার্থী চূড়ান্ত করবেন তারা। এ ফর্মুলা অনুযায়ী প্রতিটি নির্বাচনী আসনে বিএনপিসহ অন্যান্য দলের সম্ভাব্য প্রার্থী কারা হতে পারেন, তা আমলে নেওয়া হচ্ছে। সেই আসনগুলোতে জোট ও দলের প্রার্থীর জীবনবৃত্তান্ত নেওয়া হচ্ছে। সব কিছু বিবেচনায় নিয়েই বিজয়ী হওয়া সম্ভব; এমন প্রার্থী চূড়ান্ত করবে আওয়ামী লীগ। তাই শরিকরা চাইলেও এখনই আসন ভাগাভাগির বিষয়টি চূড়ান্ত করতে চায় না দলটি। সময়মতো বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আগামী জুলাইয়ের মধ্যে জোটের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হতে পারে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। সূত্রমতে, ১৪-দলীয় জোটের শরিকরা আওয়ামী লীগের কাছে আসন ভাগাভাগির তাগাদা দিতে শুরু করেছেন। তারা বিভিন্ন অনানুষ্ঠানিক বৈঠক ও সাক্ষাতের সময় জোটপ্রধান দলের কাছে বিষয়টি নিষ্পত্তির দাবি তুলছেন। কারণ হিসেবে তুলে ধরছেন—নির্বাচনের আর মাত্র আট মাস বাকি রয়েছে। এখন থেকেই আসন চিহ্নিত না করা হলে প্রার্থীদের কাজ করতে সমস্যায় পড়তে হবে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে মহাজোট হিসাবে ভোট করে আওয়ামী লীগ। এতে ১৪ দলের শরিক ছাড়াও জাতীয় পার্টি অংশ নেয়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে মহাজোট ছেড়ে জাতীয় পার্টি এককভাবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে এখন সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে জাতীয় পার্টি মহাজোটেই থাকছে—এটা অনেকটাই নিশ্চিত। তবে পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আওয়ামী লীগের কাছে শর্ত দিয়েছেন। গত শনিবার রংপুর সার্কিট হাউসে স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এরশাদ বৃহত্তর রংপুরের ২২টি আসনসহ ৭০টি সংসদীয় আসন দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘পরবর্তী সময়ে ১০ থেকে ১২টি মন্ত্রণালয় জাতীয় পার্টিকে দিতে হবে। আওয়ামী লীগ আমাদের দাবি পূরণ না করলে জাতীয় পার্টি ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়ে আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় যাবে।’ আসন ভাগাভাগি ও মন্ত্রিত্ব নিয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, এরশাদ সাহেব জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান। আমি সবিনয়ে বলব, এলায়েন্সে কে কত আসন পাবে, সেটা আমাদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে। এটা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সব সময় ঠিক হয়। প্রকাশ্যে আমরা কে কত সিট দাবি করছি— এটা আমার মনে হয়, না বললেই ভালো। আর কত সিট চান, এটা তো আমরা জানি! আমাদের কাছে অলরেডি আপনাদের তালিকা আছে। এটা আবার পত্রিকায় দেওয়ার তো দরকার নেই। বাস্তবতা বলে দেবে, সময়ের প্রয়োজনে উইনেবেল ক্যান্ডিডেট যদি জাতীয় পার্টিতে ৭০ জন থাকে, কেন দেব না? আর হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রায় ৯০ বছর বয়স হয়েছে উল্লেখ করে গতকাল কুষ্টিয়ায় এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছেন, ‘কয়েকদিন আগেও এরশাদ আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে ৭০টি আসনে ভোট করতে চেয়েছিলেন। আবার উনি বলছেন, আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা শূন্য। যদি তাই হয়, তবে উনি আবার জোট করতে চাইলেন কেন? আসলে এরশাদ সাহেবের অনেক বয়স হয়েছে তাই কখন কী বলে বসেন সেটা আমলে নেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই।’

সূত্রমতে, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ গত ৮ এপ্রিল জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেন। তিনি প্রায় ২০ মিনিট কথা বলেন জোটপ্রধানের সঙ্গে। জাতীয় পার্টির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ওই বৈঠকে গাজীপুর ও খুলনা সিটি নির্বাচন ছাড়াও জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন তারা। প্রধানমন্ত্রীর কাছে ঢাকায় পাঁচটি আসন দাবি করেন এরশাদ। এর মধ্যে ঢাকা-১৭-তে এরশাদ নিজেই প্রার্থী হতে চান বলে প্রধানমন্ত্রীকে তিনি জানান। জাতীয় পার্টির পাশাপাশি ১৪ দলের শরিক নেতারাও আসন ভাগাভাগি নিয়ে তাগাদা দিতে শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে জোটপ্রধান দলের কাছে আনুষ্ঠানিক আলোচনায় দ্রুততম সময়ের মধ্যেই আসন বণ্টন করার দাবি তুলেছেন তারা। এ প্রসঙ্গে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল—জাসদ (একাংশ) সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নির্বাচনের আর মাত্র আট মাস বাকি। তাই এখন থেকে বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হলে আমাদের জন্য ভালো হবে।’ তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব এম এ আউয়াল এমপি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এখন থেকেই সিট বণ্টনের বিষয়টি পরিষ্কার করলে সুবিধা হয়। নেতা-কর্মীদের মাঠে নামানো এবং এমপি প্রার্থীদের প্রস্তুতি, সবকিছুই সুবিধা হয়। জোটের নেতাদের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা চলছে। জোট প্রধান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত দেবেন—সেটাই চূড়ান্ত।’

সর্বশেষ খবর