মঙ্গলবার, ১৭ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

বিটুমিনের পরিবর্তে কংক্রিটের সড়কের সুপারিশ দুদকের

মোস্তফা কাজল

সড়ক ও মহাসড়কের ভগ্নদশা থেকে উত্তরণে বিটুমিনে তৈরি সড়কের পরিবর্তে  কংক্রিটের সড়ক নির্মাণের সুপারিশ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। সম্প্রতি রাষ্ট্রপতির কাছে দেওয়া প্রতিবেদনে এই সুপারিশ করে দুদক। সড়ক ও জনপথ বিষয়ের সুপারিশে আরও বলা হয়েছে, সড়ক নির্মাণে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর (সওজ) বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ই-জিপি টেন্ডার প্রক্রিয়া অনুসরণ করে। ফলে টেন্ডারের শর্তানুসারে স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী কাজ বাস্তবায়ন না করে প্রভাবশালী কোনো পক্ষ ও ঠিকাদারের চাপে আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরস্পর যোগসাজশে এক শ্রেণির প্রকৌশলী ও কর্মকর্তা সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করেন। এমনকি ঠিকাদার নির্বাচনের ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট পদ্ধতি দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত প্রথায় পরিণত হয়েছে। নিম্নমানের সড়ক নির্মাণ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ আসে। এমন অভিযোগ দুদকেও আসে। নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার দীর্ঘদিন পর অভিযোগ পাওয়া গেলে এবং তা অনুসন্ধান করে কাউকে দায়ী করা কঠিন হয়। আবার আদালতে প্রমাণ করা আরও কঠিন। এসব দুর্নীতি সংঘটনের উৎস-দুর্নীতি বন্ধে ২১ দফা সুপারিশ করেছে দুদক। দুদকের সুপারিশের মধ্যে রয়েছে— বিটুমিন সড়কের পরিবর্তে কংক্রিটের সড়ক নির্মাণ করা যেতে পারে। সড়ক নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে- পাথর ও ইট। উন্নতমানের খোয়া ছাড়া সড়ক নির্মাণ করা হলে তা টেকসই হয় না। উন্নতমানের খোয়া তৈরির জন্য প্রয়োজন পাথর, ঝামা ইট অথবা ১ নম্বর গ্রেডের ইট। সওজের অধিকাংশ টেন্ডারে স্পেসিফিকেশনে বর্ণিত পাথর বা ঝামা ইট ব্যবহারের নির্দেশনা থাকে। কিন্তু প্রভাবশালী ঠিকাদারদের চাপে অথবা প্রকৌশলীদের দায়িত্ব অবহেলা কিংবা পরস্পর যোগসাজশে অর্থ আত্মসাতের জন্য সড়ক নির্মাণে পাথর, ঝামা ইটের খোয়ার পরিবর্তে নিম্নমানের ইট দিয়ে খোয়া তৈরি করে সড়ক নির্মাণে ব্যবহার করেন। সড়ক নির্মাণে এমন দুর্নীতি বন্ধ করতে প্রতিটি সড়কের ডিজাইন অনুসারে সড়ক নির্মাণের সময় সড়ক বেডের রেশিও নিরূপণ বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন। সড়ক নির্মাণ বাস্তবায়ন কাজে দেশীয় অর্থায়নে যেসব প্রকল্প করা হয় সেসব প্রকল্পের মাঠপর্যায়ে প্রতিদিন দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী অথবা সহকারী প্রকৌশলী বা উপসহকারী প্রকৌশলীরা এবং নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীরা যে মেজারমেন্ট বুকে স্বাক্ষর করেন তাতে পরিমাণগত কাজের পরিমাণ ও মান উল্লেখ থাকা প্রয়োজন। এ ছাড়াও স্পেসিফিকেশনে বর্ণিত গুণগতমান নিশ্চিতকরণের জন্য অন্যান্য টেস্ট সম্পাদন করে টেস্ট রিপোর্ট প্রত্যয়নপূর্বক সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। বিদেশি অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পসমূহেও অনুরূপ তথ্যসংবলিত মেজারমেন্ট ও টেস্ট রিপোর্ট সংরক্ষণ করতে হবে। সড়ক নির্মাণে নিম্নমানের বালুর ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব কার্যক্রম মনিটরিংয়ের জন্য বুয়েটের অধ্যাপক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, নির্মাণ কাজে বিশেষজ্ঞ, সওজ অধিদফতরের অভিজ্ঞ প্রকৌশলীদের একাধিক মনিটরিং কমিটি গঠন করা যেতে পারে। এ ছাড়া সওজের নিজস্ব মনিটরিং ইউনিট গঠন করা যেতে পারে এবং সুনির্দিষ্ট কার্যপরিধির আলোকে মনিটরিং ইউনিট কাজের পরিমাণগত ও গুণগত মানের বিষয়ে রিপোর্ট দেবে। মনিটরিং ইউনিটের চূড়ান্ত রিপোর্ট ছাড়া ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে চূড়ান্ত বিল না দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। সুপারিশে আরও বলা হয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন : বৃষ্টিপাত, বন্যা এবং নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করে সড়ক নির্মাণের ফলে দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, এ থেকে উত্তরণের জন্য কংক্রিটের সড়ক নির্মাণের বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন। সড়ক নির্মাণে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে বিটুমিন। সরকার মহাসড়কে ৬০-৭০ গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে। কিন্তু ব্যবহার করা হচ্ছে ৮০-১০০ গ্রেডের বিটুমিন। সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের নির্মাণ সাইটে মজুদকৃত বিটুমিন পরীক্ষা করে এ মান নিশ্চিত করার কথা বলা হয় রিপোর্টে।

সর্বশেষ খবর