শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

তারেককে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে

লন্ডনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

মাহমুদ হাসান, কাজী শাহেদ ও আ স ম মাসুম, লন্ডন থেকে

তারেককে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পলাতক আসামি তারেক রহমানকে তার অপরাধের জন্য অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। তিনি বলেন, তার সরকার তারেককে দেশে ফিরিয়ে নিতে যুক্তরাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী ওভারসিজ ডেভেলপমেন্ট (ওডিআই)-এ প্রধান বক্তা হিসেবে ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট স্টোরি : পলিসি প্রগ্রেস অ্যান্ড প্রসপেক্টস’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন। তাঁর বক্তৃতায় রোহিঙ্গা ইস্যুও বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারেককে আদালতে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। আমরা অবশ্যই একদিন তাকে দেশে ফিরিয়ে নিব। তিনি তারেকের মতো সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামিকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য যুক্তরাজ্যের সমালোচনা করে বলেন, আমরা তাকে দেশে ফিরিয়ে নিতে যুক্তরাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা বলছি। তিনি বলেন, ব্রিটেন একটি মুক্ত দেশ। যে কেউ এ দেশে আশ্রয় প্রার্থনা করতে পারে। তবে তারেক রহমান তো একজন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি। তার অপরাধের জন্য আদালত তাকে সাজা দিয়েছে। আমি বুঝতে পারছি না, যুক্তরাজ্য কেন একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে আশ্রয় দিয়েছে। হাই কোর্ট একটি দুর্নীতি মামলায় তিন বছর আগে তাকে সাত বছরের সাজা দিয়েছে। এ ছাড়া কয়েকটি মামলায় তারেকের বিরুদ্ধে আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। কয়েকটি ফৌজদারি ও দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি হওয়ায় তাকে পলাতক ঘোষণা করা হয়েছে। এই পলাতক আসামিকে কী করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হলো। বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উভয় দেশের মধ্যে মন্ত্রিপর্যায়ের সফর বিনিময়ের প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে ঢাকার সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন সত্যেও সাড়া না দেওয়ার জন্য শেখ হাসিনা মিয়ানমারকে অভিযুক্ত করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার-এর প্রতি বন্ধুসুলভ মনোভাব দেখালেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে মিয়ানমার তাদের প্রত্যাবাসনে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করছে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশটি এতে আগ্রহ দেখালেও প্রত্যাবাসনে কিছুই করেনি এবং এ কারণেই আমরা চাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মিয়ানমারের ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করুক।’ তিনি বলেন, ‘অনেক শরণার্থী শূন্য রেখার ওপর অবস্থান করলেও মিয়ানমার মাত্র একটি পরিবারের অর্ধেক সদস্যকে গ্রহণ করেছে। কারণ সম্ভবত তারা বিশ্বকে দেখাতে চায় তারা তাদের ফিরিয়ে নিচ্ছে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা একটা ভালো লক্ষণ কিন্তু একটি পরিবারের কেবল অর্ধেক লোককে কেন?’ তিনি বলেন, বর্ষাকালও এগিয়ে আসছে। রোহিঙ্গারা যাতে ভালোভাবে বসবাস করতে পারে তার জন্য তাঁর সরকার রোহিঙ্গাদের একটি জায়গায় সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করছে। কারণ, এখন যেসব অস্থায়ী তাঁবুতে তারা গাদাগাদি করে বসবাস করছে, সেখানে কোন দুর্যোগ ঘটতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমরা খাদ্যসহ সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করছি।’

স্থিতিশীল এশিয়া গঠনে উদ্যোগের আহ্বান : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শান্তিপূর্ণ, উন্নত ও স্থিতিশীল এশিয়া গঠনে পারস্পরিক সেতুবন্ধ, যোগাযোগ বৃদ্ধি, জনগণের মতবিনিময় ও বোঝাপড়া বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে এ অঞ্চলের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এশিয়ার দেশগুলো বিশ্বকে আরও নিরাপদ ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ দেখাতে পারে, যেখানে অর্থনীতি হবে আরও স্থিতিশীল ও বিকাশমান। গতকাল যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের গিল্ড হলে কমনওয়েলথ বিজনেস ফোরাম আয়েজিত ‘এশীয় নেতাদের গোলটেবিল বৈঠক : এশিয়া কি তার অগ্রগতি ধরে রাখতে পারবে?’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বক্তৃতায় ভবিষ্যতে তিনি এশিয়াকে কীভাবে দেখতে চান এবং আগামীতে এশিয়া দেশগুলোই যে গোটা বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবে— এ লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেন। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের ঈর্ষণীয় সাফল্য-অগ্রগতিতে বিশ্ব নেতাদের নজর কেড়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ কারণে সমৃদ্ধ ও শান্তিময় এশিয়া গঠনে প্রধানমন্ত্রী যখন সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবগুলো তুলে ধরেন তখন বৈঠকে থাকা এশীয় নেতারা টেবিল চাপড়িয়ে তাঁর প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেন। কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনকে ঘিরে রাজধানী লন্ডনে গড়ে তোলা হয়েছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা। দেশটির রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের জন্মদিন উপলক্ষে বাকিংহাম প্যালেসসহ লন্ডনের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক-দ্বীপসমূহ সাজানো হয়েছে বর্ণাঢ্য সাজে। প্রধানমন্ত্রী এই গোলটেবিল অনুষ্ঠানে যোগদান ছাড়াও রাতে লন্ডনের স্কাই গার্ডেনে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে আয়োজিত অভ্যর্থনা ও নৈশভোজে অংশগ্রহণ করেন। সফরের অংশ হিসেবে আজ বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় কমনওয়েলথ সরকার প্রধানদের সভার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ এবং দুপুরে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে ও কমনওয়েলথ মহাসচিব প্যাট্রেসিয়া স্কটল্যান্ড কর্তৃক আয়োজিত অফিশিয়াল অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। লন্ডনের গিল্ড হলে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন ভারতের স্ট্যান্ডার্ড চ্যার্টার্ডের প্রধান নির্বাহী জারিন দারুলওয়ালা। এতে এশিয়া অঞ্চল থেকে কমনওয়েলথ সম্মেলনে যোগ দিতে লন্ডনে আসা দেশগুলোর সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে এশিয়া নেতাদের উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, এশিয়ার দেশগুলোর আরও ব্যাপক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির প্রয়োজন রয়েছে। কেননা শুধু একটা দেশের মধ্যে নয়, বরং গোটা এশিয়া অঞ্চলে এটি প্রয়োজন। ভৌগোলিক সীমারেখার বাইরের এই সমৃদ্ধি ও সমতা প্রবৃদ্ধি আনবে, যেটি স্থিতিশীলতা অর্জনে এশিয়ার ভবিষ্যতের চাবিকাঠি হিসেবে পরিগণিত হবে।

এশিয়া অঞ্চলের বিশাল শ্রমশক্তি, বাজার, প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্য্য থাকার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অতীতে বিশ্বকে নেতৃত্ব দিয়েছে এশিয়া, ভবিষ্যতেও এই এশিয়াই বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবে। কারণ এশিয়ার মানুষগুলোর আছে সহিষ্ণুতা, কঠোর পরিশ্রম করার ক্ষমতা, মেধা আর দৃঢ় আশাবাদ। তিনি বলেন, গত সাত বছরে এশিয়ার অর্জন অনেক। বিশ্বের অনেক বিজ্ঞ অর্থনীতিবিদ এবং পণ্ডিত এশিয়ার এই অর্থনৈতিক সফলতাকে ‘মিরাকল’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এশিয়াকে নিজস্ব চেতনা ধরে রাখতে হবে। কেননা বিশ্বায়নের ক্রমবর্ধমান পরিবর্তন, ডিজিটাল ও স্যোশাল মিডিয়া মানুষকে যে রকম কাছে টেনে আনে, একইভাবে কিছু মানুষকে বিচ্ছিন্নও করে দেয়। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন সমৃদ্ধি নিয়ে আসে। এটি বৈষম্যও সৃষ্টি করে। আর সন্ত্রাস, সংঘাত, পুঁজিবাদ এবং অন্যান্য আহূত চ্যালেঞ্জ স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ, যেখানে আমাদের পথে পথে বাধা ও বিপদ রয়েছে। তরুণ, নারীসহ সব নাগরিকদের জন্য বেশি করে বিনিয়োগ করার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, আমাদের চেতনা ও সমন্বিত মেধা দিয়ে এশিয়ার চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে হবে। অনুষ্ঠানে ‘বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং উদ্ভাবনী সহযোগিতা বিষয়ে কমনওয়েলথের ভূমিকা’ শীর্ষক অন্য একটি অংশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এ সংস্থাটিকে অবশ্যই আন্তকমনওয়েলথ বাণিজ্য, বিনিয়োগ বাড়াতে এবং বিপুল সংখ্যক যুব জনশক্তির সৃজনশীল শক্তিকে কাজে লাগাতে সক্ষম হতে হবে। কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোতে ৩০ বছরের কম ৬০ শতাংশ জনশক্তিকে বিশাল সম্পদ হিসেবে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।  এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী কমনওয়েলথ দেশগুলোর মধ্যে আন্তবাণিজ্য ও বিনিয়োগ এবং উদ্ভাবনী সহযোগিতা বাড়াতে বেশ কয়েকটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেন। একই সঙ্গে কমনওয়েলথ সদস্যভুক্ত দেশগুলোর খাতভিত্তিক ও শিল্পায়নের সম্ভাবনা ও উৎপাদনশীলতা, বিনিয়োগ নীতি এবং কৌশল, বিনিয়োগ সুবিধার ওপর সমীক্ষা ও পুনর্মূল্যায়ন করারও প্রস্তাব দেন তিনি। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এবং এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর