শুক্রবার, ২০ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

ডিজিটাল আইনে ছয়টি ধারায় সম্পাদক পরিষদের আপত্তি

সমাধানের আশ্বাস আইনমন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৬টি ধারা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে সম্পাদক পরিষদ। বলা হয়েছে, এতে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হবে। জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আশ্বস্ত করে বলেছেন, বিষয়টি তারা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন। আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির বৈঠকে সম্পাদক পরিষদের আপত্তির বিষয়গুলো তুলে ধরা হবে। গতকাল সচিবালয়ে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ শহিদুল হক উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে সম্পাদক পরিষদের পক্ষে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, নিউজ টুডের সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবির, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম, ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দিন, ফাইন্যানশিয়াল এক্সপ্রেস সম্পাদক এ এইচ এম মোয়াজ্জেম হোসেন, কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম, সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক খন্দকার মনিরুজ্জামান, বণিকবার্তা সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ ও নয়া দিগন্ত সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে আনিসুল হক বলেন, সম্পাদক পরিষদ যে আপত্তিগুলো তুলে ধরেছে, সেগুলো অনেকাংশে যৌক্তিক। তাই ২২ এপ্রিল সংসদীয় কমিটির সভায় সম্পাদক পরিষদকে রাখার প্রস্তাব করা হবে। কিংবা পরবর্তীতে কোনো একদিন যেন সংসদীয় কমিটির সঙ্গে সম্পাদক পরিষদ বসতে পারেন সেই ব্যবস্থা করা হবে। আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, আমরা দেড় ঘণ্টা কথা বলেছি। প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২১, ২৫, ২৮, ৩১, ৩২ ও ৪৩ ধারা নিয়ে সম্পাদক পরিষদ তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সাইবার ক্রাইম নিয়ন্ত্রণের জন্য ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট করা হচ্ছে। এটা ফ্রিডম অব প্রেস বা ফ্রিডম অব স্পিচ বন্ধ করার জন্য নয়। সে ক্ষেত্রে এ আইনের মধ্যে যদি কোনো ত্রুটি থেকে থাকে, তাহলে পরে সেগুলো যেন অপসারণ করা যায়, সেইভাবে যেন আইনটা সংশোধন করা হয় সেই আলোকে এডিটরস কাউন্সিলের সঙ্গে স্থায়ী কমিটির সেই আলোচনা হবে এবং এই আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা দুই পক্ষই আশাবাদ ব্যক্ত করতে পারি। তিনি বলেন, তাদের যে কনসার্ন, আমরা তা দূর করতে পারব। তিনি বলেন, এমন একটা আইন করতে চাই যেটা গ্রহণযোগ্য ও যুগোপযোগী হবে। এরপর ডেইলি স্টার সম্পাদক ও সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ আনাম সাংবাদিকদের বলেন, সম্পাদক পরিষদের অনুরোধে এই সভা হয়েছে। সত্যিকার অর্থে বলতে চাই, উনাদের (তিন মন্ত্রী) যে স্পিরিট আমরা দেখলাম, উনাদের যে সহযোগিতার স্পিরিট এবং আমাদের কনসার্নগুলো উনারা যেভাবে গ্রহণ করলেন এবং যে প্রস্তাব উনারা দিয়েছেন স্থায়ী কমিটিতে যে আলোচনা হবে সেখানে উনারাই প্রস্তাব করবেন সম্পাদক পরিষদকে যেন ডাকা হয়। সেখানে যেসব কনসার্ন আছে আমরা তা তুলে ধরব।

তিনি বলেন, আমরা মনে করছি প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২১, ২৫, ২৮, ৩১, ৩২ ও ৪৩ ধারাগুলো বাকস্বাধীনতা এবং সাংবাদিকদের স্বাধীনতার পরিপন্থী। এটা আমাদের যে স্বাধীন সাংবাদিকতা, যেটা নিয়ে বাংলাদেশে আমরা খুবই গর্ববোধ করি, সেটা খুব গভীরভাবে ব্যাহত হবে— এ কথাগুলো আমরা উনাদের বলেছি, উনারা খুবই সানন্দে গ্রহণ করেছেন। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, যে আইনটি হবে, তা সত্যিকার অর্থেই সাইবার ক্রাইম ঠেকাতে ব্যবহার করা হবে, তাতে সাংবাদিকতার স্বাধীনতা খর্ব হবে না। মাহফুজ আনাম আরও বলেন, প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৬টি ধারা নিয়ে উদ্বেগ থাকলেও সম্পাদক পরিষদ এ আইন প্রণয়নের পক্ষে। আমরা এটাও বিশ্বাস করি যে, সত্যিকার অর্থে একটা সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাংলাদেশে প্রয়োজন, কেননা এখন যে ধরনের সাইবার ক্রাইম হচ্ছে এবং আমরা দেখছি অনেক ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়া এবং অনিয়ন্ত্রিত অনলাইন মিডিয়া অনেকভাবে তারা উদ্যোগ নিচ্ছেন, যেটা আমাদের কনসার্ন বাড়ায়। তিনি বলেন, আইনটা হোক, সুষ্ঠু আইন, যে আইনটা আসলে তার পারপাস সার্ভ করবে এবং স্বাধীন সাংবাদিকতাকে কোনোভাবেই ব্যাহত করবে না, এটাই আমাদের বিশ্বাস। প্রসঙ্গত, গত ২৯ জানুয়ারি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। প্রস্তাবিত আইনের খসড়া আইনসভার অনুমোদনের জন্য ৯ এপ্রিল সংসদে উত্থাপন করেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। এখন খসড়া আইনটি পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে রয়েছে।

সর্বশেষ খবর