শুক্রবার, ২০ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

সিটি ভোটে প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন মন্ত্রী-এমপিরা!

নিজস্ব প্রতিবেদক

সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণা ও সিটি এলাকায় যাওয়ার ‘সুযোগ পাচ্ছেন’ মন্ত্রী-এমপিরা। তফসিল ঘোষণার পর সংসদ সদস্যদের প্রচার-প্রচারণায় অংশ নেওয়া এবং এলাকায় যাওয়ার সুযোগ করে দিতে সিটি করপোরেশনে নির্বাচনের আচরণবিধি সংশোধনের পক্ষে মত দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংশোধনীর জন্য ইসির আইন সংস্কার কমিটিকে দ্রুত সময়ের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, আগামী ১৫ মে অনুষ্ঠেয় গাজীপুর ও খুলনা সিটিতে মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ সময় রয়েছে ২৩ এপ্রিল। পরদিন প্রতীক পেয়েই প্রচার শুরু হবে। এ অবস্থায় আসন্ন দুই সিটি নির্বাচনের আগে স্বল্প সময়ে আচরণবিধি সংশোধনের প্রতিবেদন দেবে ইসির কমিটি।

গতকাল ‘সিটি করপোরেশন (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা ২০১৬’ সংশোধন নিয়ে কমিশন সভা হয়েছে। এতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানমের নেতৃত্বে আইন ও বিধিমালা সংস্কারে একটি কমিটি রয়েছে। ওই কমিটি বিধিমালা সংশোধনের ধারা পর্যালোচনা করে একটা রিপোর্ট দেবেন। দ্রুততম সময়ে রিপোর্ট নিয়ে বিষয়টি কমিশনে উত্থাপন করবেন। এ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিধি সংশোধনের বিষয়টি কমিশন ইতিবাচকভাবে দেখছে বলে উল্লেখ করেন সচিব।

কমিশনের কাছে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত এলো বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা। আসন্ন গাজীপুর ও খুলনা সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনী এলাকায় সংসদ সদস্যদের আসা-যাওয়ায় নিয়ন্ত্রণারোপ না করতে বিধিমালায় সংশোধন আনার প্রস্তাব দেয় ক্ষমতাসীন দলটি।

গতকাল বিকালে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে ঘণ্টাব্যাপী সভা শেষে ইসি সচিব সাংবাদিকদের জানান, সিটি করপোরেশনের আচরণবিধিমালা পর্যালোচনা করা হয়েছে। তাতে দেখা গেছে যে অতি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ কারা কারা। সিটি একটা বড় এলাকা। পৌরসভা ও ইউপি ছোট এলাকা। সংসদ সদস্যরা সিটি এলাকায় বসবাস করে থাকেন। যাওয়া-আসা করে থাকেন। তিনি বলেন, স্বাভাবিকভাবে নির্বাচনের তফসিল হলে পরে তাদের যাওয়া-আসাটা অনেকটা বন্ধ হয়ে যায়। আইনে বলা আছে, শুধু ভোটের দিন ভোট দিতে পারবেন। অন্য সময় যেতে পারবেন না। যার ফলে নিজের এলাকার বাইরে থাকতে হয়। সেদিক বিবেচনা করে আলোচনাটা হয়েছে বলেন তিনি।

কমিশনের পর্যালোচনা তুলে ধরে ইসি সচিব জানান, সব বিবেচনা করেই সংবিধানের সঙ্গে সামাঞ্জস্য রেখে আলোচনাটা হয়েছে। সংসদ সদস্যরা কোনো অফিস হোল্ড করেন না। উনারা কোনো সরকারি গাড়ি ব্যবহার করেন না। তারা কোনো অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি কি না বা সুবিধাভোগী অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি কি না এগুলো নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে সচিব জানান, যে কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনের স্টেক  হোল্ডার। তাদের নিয়ে কাজ করতে হয়। তাদের নিয়ে পরামর্শ করে আলাপ-আলোচনা করে তাদের সুবিধা-অসুবিধাগুলো আমরা বিবেচনা করি। আবেদন নিবেদন করলে ইসি বিষয়গুলো বিবেচনা করে। বিধি সংশোধনের বিষয়টি কমিশন ইতিবাচকভাবে দেখছে বলে উল্লেখ করেন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।

তিনি বলেন, দলের চাপে নয়। বরং আচরণবিধি সময়ে সময়ে আপডেট করেই এ সংশোধন। তবে এই নির্বাচনে ব্যবহার করা হবে কি না তা নিয়ে আলোচনা হয়নি। এটা প্রস্তাব হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে, আসন্ন নির্বাচনে বাস্তবায়ন হতেও পারে; না-ও হতে পারে। সচিব বলেন, এটা কমিটি সব বিবেচনা করছে। যেহেতু আচরণবিধি সংশোধনের বিষয় আছে। আইন মন্ত্রণালয়েও পাঠাতে হয়। এ জন্য কী কী সংশোধন আসতে পারে কমিটি একটি প্রস্তাব দেবে। এ জন্য কমিটিকে কোনো সময় বেঁধে দেওয়া হয়নি। তবে যত দ্রুত সম্ভব প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

বিএনপির দাবি নিয়ে আলোচনা হয়নি : দুই নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের প্রস্তাব নিয়ে কমিশন বৈঠক হলেও বিএনপির দাবিগুলো নিয়ে এখনো বসেনি কমিশন। এ নিয়েও হয়তো বৈঠক হতে পারে বলে জানান ইসি সচিব। ভোটের এক সপ্তাহ আগে সেনা মোতায়েন ও গাজীপুর এসপিকে প্রত্যাহার চেয়েছে বিএনপি। এ নিয়ে সচিব বলেন, এটা নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। হয়তো হতে পারে। এসপি প্রত্যাহার দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, বিএনপির অভিযোগ ঢালাও। তারা যদি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না দেয় একজন কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। স্বাভাবিকভাবে আচরণবিধি ভঙ্গ করলে দেখবে কমিশন।

হলফনামা নিরীক্ষা করবে না ইসি : হলফনামার তথ্য নিয়ে নানা অভিযোগ করছেন দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রার্থীরা। তবে এতে কোনো অসঙ্গতি রয়েছে কি না তা যাচাইয়ে যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ইসি সচিব। তিনি বলেন, হলফনামা যখন প্রার্থী জমা দেন, একজন এফিডেবিট দেন, এটা তার সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত। ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে যখন তিনি এফিডেভিট করেন, এটার দায়িত্ব তখন তার। ফলে সেটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ ইসির থাকে না।

সর্বশেষ খবর