শনিবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা
সুফিয়া কামাল হলে হচ্ছেটা কী?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফের বিক্ষোভ, উত্তেজনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফের বিক্ষোভ, উত্তেজনা

গভীর রাতে হল থেকে ছাত্রীদের বের করে দেওয়ার প্রতিবাদে গতকাল বিক্ষোভ মিছিল করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কবি সুফিয়া কামাল হলের অন্তত ২০ ছাত্রীকে গভীর রাতে হল থেকে বের করে দেওয়ার ঘটনায় সামাজিক গণমাধ্যমে সমালোচনা হচ্ছে। অন্যদিকে ক্যাম্পাসেও উত্তেজনা বেড়েছে। আন্দোলনের সময় সামাজিক গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর অভিযোগে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে তাদের হল থেকে বের করে দেয় হল কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আবারও সোচ্চার হয়ে উঠেছে আন্দোলনকারীরা। এর প্রতিবাদে গতকাল সারা দেশে বিক্ষোভ করেছে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার রক্ষা পরিষদ’। এ ছাড়া বিকালে ঢাবির রাজু ভাস্কর্যে  প্রতিবাদ মিছিল করেছে মঞ্চের কেন্দ্রীয় কমিটি। জানা যায়, ১০ এপ্রিল মধ্যরাতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় কবি সুফিয়া কামাল হল শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি ইফফাত জাহান এশাকে মারধর ও বহিষ্কারের ঘটনার পর থেকেই হলটিতে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। সেদিন এক ছাত্রীকে পায়ের রগ কাটার গুজবে এশাকে মারধর করা হয় এবং ছাত্রলীগ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়। মূলত ছাত্রলীগের অন্তঃকোন্দলের কারণে সেদিন হলের পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। কিছু ছাত্রলীগ নেত্রীর ইন্ধনে এশাকে মারধরের ঘটনা ঘটে। পরে ছাত্রলীগ এশার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে ইন্ধনদাতা কেন্দ্রীয় এক নেত্রীকে পাল্টা বহিষ্কারসহ ২৬ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে।

এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও এশার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার রাতে হলের প্রাধ্যক্ষ সাবিতা রিজওয়ানার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি সেদিনের ঘটনায় এশার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া ছাত্রীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ এবং মোবাইল চেক করে। এ সময় ছাত্রীদের মোবাইল জব্দ করে গোয়েন্দা নজরদারি ও ছাত্রত্ব বাতিল করার হুমকি দেওয়া হয়। প্রশাসনের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের হয়রানিরও অভিযোগ ওঠে। এরপর রাত সাড়ে ১১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত অন্তত ২০ জন ছাত্রীকে হলত্যাগে বাধ্য করে প্রশাসন। হলত্যাগ করা ছাত্রীরা তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে দ্রুত ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। এর পর থেকেই হলটিতে সাধারণ ছাত্রীদের মধ্যে ভীতি বিরাজ করছে। সাধারণ ছাত্রীরা বলছেন, এসব করে প্রশাসন ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। ছাত্রীরা যাতে তাদের অধিকার আদায়সহ যে কোনো যৌক্তিক আন্দোলন করতে না পারে সেজন্যই ডেকে ডেকে হয়রানি করা হচ্ছে। এ বিষয়ে হলের প্রাধ্যক্ষ সাংবাদিকদের বলেন, যেসব ছাত্রীর মোবাইল চেক করে ফেসবুকে ফেক অ্যাকাউন্ট খুলে গুজব ছড়ানোর প্রমাণ পাওয়া গেছে তাদের মুচলেকা দিয়ে স্থানীয় অভিভাবকদের সঙ্গে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ঢাবিসহ সারা দেশে বিক্ষোভ, প্রতিবাদ মিছিল : এ ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল সারা দেশে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিল করেছে কোটা সংস্কার আন্দোলনের মঞ্চ ‘সাধারণ ছাত্র অধিকার রক্ষা পরিষদ’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে মধ্যরাতে ছাত্রীদের হল থেকে বের করে দেওয়ার প্রতিবাদে মিছিল করা হয়। বিকাল সাড়ে ৪টার সময় ঢাবির রাজু ভাস্কর্যে মঞ্চের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃত্বে এ ঘটনার প্রতিবাদ শুরু হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন আন্দোলনের যুগ্ম-আহ্বায়ক নুরুল ইসলাম, রাশেদ খানসহ শতাধিক শিক্ষার্থী। এ সময় তারা ‘আমার বোন বাইরে কেন? প্রশাসন জবাব দে’সহ নানা স্লোগান দিতে থাকেন। বিক্ষোভ প্রদর্শন শেষে একটি প্রতিবাদ মিছিল বের করা হয়।

ঢাবির কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে ছাত্রলীগের অবস্থান : ছাত্রীদের হল থেকে বের করে দেওয়ার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার রাতে প্রতিবাদ মিছিলের ডাক দেন আন্দোলনকারীরা। গতকাল বিকাল ৪টায় ঢাবির কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে থেকে এ মিছিল শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রতিবাদ মিছিলের খবর পেয়ে সাড়ে ৩টায় ‘পড়াশোনার আড্ডার’ ডাক দেয় ঢাবি শাখা ছাত্রলীগ। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই ছাত্রলীগ ঢাবি শাখার সভাপতি আবিদ আল হাসান ও সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্সের নেতৃত্বে কয়েক শ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীকে লাইব্রেরির সামনে অবস্থান নিতে দেখা যায়। মূলত আন্দোলনকারীদের ‘প্রতিবাদ মিছিল’ বন্ধ করতেই ছাত্রলীগ সেখানে অবস্থান নিয়েছে বলে অভিযোগ করেন সাধারণ ছাত্র অধিকার রক্ষা পরিষদের নেতারা। পরে আন্দোলনকারীরা সাড়ে ৪টার দিকে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান নিলে সেখানেও ছাত্রলীগ নেতাদের অবস্থান নিতে দেখা যায়।

ঢাবি সাদা দলের বিবৃতি : এদিকে সুফিয়া কামাল হল থেকে ছাত্রীদের বের করে দেওয়ার ঘটনায় বিবৃতি দিয়েছে বিএনপি-জামায়াতপন্থি শিক্ষকদের প্যানেল সাদা দল। দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. আখতার হোসেন খান স্বাক্ষরিত এই বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ‘শুক্রবারের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হল থেকে মাঝরাতে শিক্ষার্থীদের বের করে দেওয়ার খবরে আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। গণমাধ্যমে প্রচারিত এ সংবাদ যদি সত্যি হয় তবে এ ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং বেদনাদায়ক। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে এ ধরনের নির্বতনমূলক কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই কাম্য নয়।’

হলে ফিরেছেন সেই তিন ছাত্রী : কবি সুফিয়া কামাল হলের যে তিন ছাত্রীকে রাতের আঁধারে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল তারা শুক্রবার হলে ফিরে এসেছেন। সুফিয়া কামাল হলের প্রভোস্ট ড. সাবিতা রেজওয়ানা রহমান এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, তিন জন ছাত্রীর মধ্যে শুক্রবার দুপুরে দুজন এবং বিকাল ৪টার দিকে আরেকজন হলে ফিরে এসেছে। এদের মধ্যে দুজনের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তঃফুটবল খেলায় অংশগ্রহণ করেছে। তিনজনের মধ্যে কারা দুপুরে এবং কে বিকালে ফিরে এসেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি কোনও ছাত্রীর নাম বলতে চাই না।’

রোকেয়া হলে উপাচার্যের সামনে প্রতিবাদ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হলের কয়েকজন ছাত্রীকে গভীর রাতে হল থেকে বের করে দেওয়ার ঘটনায় রোকেয়া হলের এক অনুষ্ঠানে উপাচার্যের সামনে প্ল্যাকার্ড হাতে মৌন প্রতিবাদ জানিয়েছেন চার শিক্ষার্থী।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর