শনিবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

ঢাবি ভিসি বললেন, অপতথ্য প্রকাশে বের করা হয়েছে

প্রভোস্টের হুঙ্কার, দুই হাজার ছাত্রী বের করে দেওয়া হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাবি ভিসি বললেন, অপতথ্য প্রকাশে বের করা হয়েছে

গভীর রাতে বাধ্য হয়ে হল ত্যাগ করে ছাত্রীরা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

ফেসবুকে ‘সরকারবিরোধী বক্তব্য ও অপতথ্য’ ছড়ানোর কারণে তিন ছাত্রীকে অভিভাবকের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান। গতকাল নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ তথ্য জানান। এদিকে, ছাত্রলীগ নেত্রী এশাকে নির্যাতনের ঘটনায় যদি দুই হাজার ছাত্রী জড়িত থাকে তাদের সবার ছাত্রত্ব বাতিলের হুঙ্কার দিয়েছেন হলটির প্রাধ্যক্ষ সাবিতা রেজওয়ানা রহমান।

উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ফেসবুকে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে ‘সরকারবিরোধী বক্তব্য ও অপতথ্য ছড়ানোর কারণে’ সুফিয়া কামাল হলের তিন ছাত্রীকে অভিভাবকদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ‘দোষী’ তিন ছাত্রীকে অভিভাবকদের হাতে তুলে দিয়ে হল প্রশাসন ‘সঠিক’ কাজ করেছে দাবি করে তিনি বলেছেন, এটা না করলেই বরং তিনি হল কর্তৃপক্ষকে দোষারোপ করতেন। তিনি বলেন, ‘তারা ফেইক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে ফেসবুকে অপতথ্য দিচ্ছে হল সংক্রান্ত, সরকারবিরোধী, আরও নানা সব তথ্য, সব সংরক্ষিত আছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তখন তাদের বলা হলো যে, বাবা এগুলো যদি তোমরা কর তাহলে তো হল ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। এটা সুফিয়া কামাল হল, হাজার হাজার মেয়ে এখানে আছে, গোটা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্নভাবে অপশক্তির উত্থান ঘটছে, বিভিন্ন অপতথ্য, অপব্যাখ্যা যাচ্ছে; সুতরাং এই মুহূর্তে তোমরা এগুলো করতে পারবে না তোমাদের অভিভাবকদের ডাকতেছি।’ উপাচার্য বলেন, এরা যে কাজগুলো করে, এগুলো কিন্তু আমাদের অন্য মেয়েদের সম্মান হারাবে, ঝুঁকি বাড়াবে, নিরাপত্তাহীন হবে, বিশ্ববিদ্যালয় অস্থির হবে, রাষ্ট্রে অস্থিরতা তৈরি হবে। তাদের অভিভাবকদের হাতে তুলে দেওয়াকে শৃঙ্খলা রক্ষার ‘একটি ব্যবস্থা’। তিনি বলেন, অভিভাবকসুলভ আচরণে হল প্রশাসন যখন দেখবে কোনো কিছু ঝুঁকির মধ্যে পড়ে, তখন তো এটা তাদের রুটিন দায়িত্ব, এটা তো হলের দায়িত্ব। নিরাপত্তা এবং সম্মানের জন্য, মর্যাদার জন্য হল প্রশাসন অভিভাবকসুলভ আচরণ করবে, তাদের (ছাত্রীদের) ডেকে এনে সংশোধনী দেবে— এটা হলের একেবারে মৌলিক দায়িত্ব। তিনি বলেন, মূল কথাটা হলো যখন সমস্যা হবে সে সমস্যাটাকে অ্যাড্রেস করা এবং সেখানে সাধারণ মেয়েদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ মাত্র চারজন মেয়ের মধ্যে তিনজনকে গার্ডিয়ানের কাছে দেওয়া হলো।

হল প্রাধ্যক্ষের হুঙ্কার : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাবিতা রেজওয়ানা রহমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে জড়িত ছাত্রীদের ডেকে ছাত্রত্ব বাতিল, গোয়েন্দা নজরদারি ও মামলার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় কবি সুফিয়া কামাল হলের প্রদীপ্ত ভবনের নিচে ছাত্রীদের ডেকে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন। এ নিয়ে একটি অডিও রেকর্ডও প্রকাশ পেয়েছে। ছাত্রীদের উদ্দেশে সাবিতা রেজওয়ানাকে সেখানে বলতে শোনা যায়, হলে অনেকে বিভ্রান্তিকর পোস্ট দেয়। ইনটেলিজেন্স সেল দেখবে যে কারা কারা বিভ্রান্তিকর পোস্ট দিচ্ছে। আই ডোন্ট ওয়ান্ট অ্যানি ইনভলভমেন্ট। এরপর এই হলে ছাত্রলীগ যদি গণ্ডগোল করে আমাকে বিচার দেবে। জেনারেল মেয়ে গণ্ডগোল করলে আমাকে বিচার দেবে। এখন থেকে হলে সিট হল প্রশাসন দেবে। এর বাইরে আর সিট হবে না। তিনি বলেন, হলে যদি আর কেউ বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করে বা তোমরা কোনো পোস্ট দেওয়ার চেষ্টা কর হলকে বিভ্রান্ত করার জন্য, তাহলে কিন্তু আমরা সরকারকে বলব...আমার নলেজের বাইরে আমার ভিডিও যে আপলোড করে সেটা কিন্তু ক্রাইম। আজকে আমি বলে দিলাম সেটা কিন্তু সাইবার ক্রাইম...আই ওয়ান্ট টু বি লাউড অ্যান্ড ক্লিয়ার। কারও কিছু প্রশ্ন আছে?’ জবাবে ছাত্রীরা কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ছাত্রলীগ নেত্রী ইশরাত জাহান এশাকে কেন্দ্র করে যা যা ঘটেছে, তাতে হলের দুই হাজার ছাত্রী সম্পৃক্ত ছিল বলে উল্লেখ করেন। তখন সাবিতা রেজওয়ানা বলেন, ‘দুই হাজার মেয়ে কিছু করেনি। আমার সিসিটিভি ফুটেজে আছে কারা কারা করেছে। দুই হাজার মেয়ে স্বাক্ষর দাও, আমি বিশ্ববিদ্যালয়কে দেব। আমি দুই হাজার মেয়ের ছাত্রত্ব বাতিল করে দেব।’ আমার শিক্ষকরা দেখেছে, সিসিটিভিতে প্রমাণ আছে কারা মেরেছে। তোমরা যদি মেরে থাক, নাম লেখ। ওই দিন যেটা হয়েছে, সেটা অপপ্রচার। ওই মেয়ে যার পা কেটেছে, সে নিজে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। ওর (মোর্শেদা) শুধু পা-ই কেটেছে। এই মেয়েটাকে (এশা) যে পরিমাণ মারা হয়েছে, সেটা কী বিচারে মারা হয়েছে? যে মেয়ে ভয় পেয়েছে, সে নিজে বলেছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর