শিরোনাম
সোমবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

একই টেস্টের বাহারি দর

মাহবুব মমতাজী

দেশে বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে রোগীর রোগ নির্ণয়ে নমুনা পরীক্ষার ফি নিয়ে চলছে নৈরাজ্য। একই নমুনা পরীক্ষার ফি প্রতিষ্ঠানভেদে একেক রকম। একই এলাকায় পাশাপাশি অবস্থান থেকেও দামে রয়েছে ভিন্নতা। মন্ত্রণালয় কিংবা স্বাস্থ্য অধিদফতরের নীতিমালা না থাকায় রোগীদের রোগ নিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা এ ধরনের নানা অপকর্মে লিপ্ত রয়েছেন। কিন্তু এ নিয়ে কোনো মাথাব্যথাই নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। যদিও আগামী ৮ মে অটোমেশন উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে সারা দেশের বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোকে একটি নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে আনা হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা। গবেষকরা বলছেন, অভিজাত এলাকায় বাসা ভাড়া বেশি এবং কম অভিজাত এলাকায় ভাড়া কম। সে বিবেচনায় একটু দামে কমবেশি হতে পারে, কিন্তু আকাশ-পাতাল কোনোভাবেই হতে পারে না। এর মূল সমস্যা হলো কোনো নিয়মনীতি নেই, যুগোপযোগী আইন নেই। ১৯৮৪ সালের আগের অধ্যাদেশ দিয়েই চলছে বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলো। জানা গেছে, বেসরকারি যে কোনো প্রতিষ্ঠানে কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট (সিবিসি) বা রক্তের সাধারণ নমুনা পরীক্ষার খরচ সর্বনিম্ন ৩০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৭৫০ টাকা পর্যন্ত। তবে এই নমুনা পরীক্ষার প্রকৃত মূল্য হওয়ার কথা ২০ থেকে ৩০ টাকা। আরও জানা গেছে, সরকারি হাসপাতালে রক্তের সিবিসি পরীক্ষায় খরচ পড়ে ৫০ টাকা, আর যে কোনো বেসরকারি হাসপাতাল কিংবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে খরচ পড়ে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা। সরেজমিন দেখা গেছে, রাজধানীর কাকরাইলে অবস্থিত ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে রক্তের সিবিসি পরীক্ষার চার্জ ৪০০ টাকা। এখান থেকে খানিকটা দূরে যাত্রাবাড়ীর শহীদ ফারুক রোডে তুলনামূলক নিম্নমানের প্রিমিয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারেও চার্জ ৪০০ টাকা। তার পাশেই অবস্থিত আল-বারাকা ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড হাসপাতালে চার্জ ৪৯৫ টাকা। এখান থেকে একটু পশ্চিমে অবস্থিত আশা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চার্জ ৩০০ টাকা। এর সংলগ্ন সমকাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সিবিসি এবং ব্লাড ফিল্মের প্যাকেজ মূল্য ৫০০ টাকা। পু্রান ঢাকার মিটফোর্ড এলাকায় অবস্থিত মুনলাইট, মডার্ন, আল আরাফাহ, ডক্টরস ক্লিনিক ও নিউ ঢাকা হাসপাতালে গলাকাটা নমুনা ফি নেওয়া হয়। সেখানে সিবিসি পরীক্ষার ফি ৪৫০ টাকার বেশি। অন্যান্য পরীক্ষার ফি সরকারি হাসপাতালের তুলনায় নেওয়া হয় তিনগুণ বেশি। এ ব্যাপারে প্রিমিয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ম্যানেজার ফিরোজ আলম বলেন, আমাদের বিভিন্ন পরীক্ষার মূল্য বিভিন্ন ধরনের। মেশিন-প্রযুক্তি ও কোয়ালিটির ওপর নির্ভর করে দাম। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত তিনভাবে এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য যন্ত্রপাতি কেনা হয়। যেমন- নগদ টাকা দিয়ে, কিস্তিতে এবং রি-এজেন্ট এগ্রিমেন্ট প্ল্যানে। যেসব যন্ত্রপাতি রি-এজেন্ট এগ্রিমেন্ট প্ল্যানের মাধ্যমে কেনা হয়, সেগুলোর রি-এজেন্ট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান থেকে কেনার বাধ্যবাধকতা থাকে। যে কারণে পরীক্ষার মূল্যমানের তারতম্য হয়। এমনকি অধিকাংশ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে টাঙানো নেই মূল্য তালিকা। এরা নিজের মন মতো নিয়ে থাকে নমুনা পরীক্ষার ফি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ আবদুল হামিদ বলেন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে দামের ভিন্নতা ছাড়াও রয়েছে কিছু চিকিৎসকের কমিশন বাণিজ্য। যে কারণে এক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের রিপোর্ট আরেক ডায়াগনস্টিক সেন্টার রেসপেক্ট করে না। তাদের নমুনার রিপোর্টও হয় ভিন্ন ভিন্ন। জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল-ক্লিনিক) ডা. কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন এ প্রতিবেদককে বলেন, বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোকে নিয়মের মধ্যে আনার একটি প্রক্রিয়া আগামী ৮ মের পর থেকে শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। আর নমুনা পরীক্ষার মূল্য নির্ধারণের জন্য আরেকটি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে ২০২২ সালের ৩০ জুনের মধ্যে। যেখানে আমরা এ, বি ও সি ক্যাটাগরিতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভাগ করে একটি সনদ প্রদান করব। একই সঙ্গে তাদের পরীক্ষার মূল্য নির্ধারণও করে দেব। ক্যাটাগরি অনুযায়ী বিভিন্ন নমুনা পরীক্ষার ফি কম-বেশি হবে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর