সোমবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

ফিতে আকাশ পাতাল ব্যবধান

মাহমুদ আজহার

রাজধানীর গুলশান-২ এ লেক পাড়ে আর এ হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগে প্রেগন্যান্সি টেস্টের  জন্য ফি ১১০০ টাকা। একই টেস্ট করাতে উত্তর বাড্ডায় প্রগতি সরণিতে পপুলার ডায়াগনস্টিকে খরচ পড়ে ৮০০ টাকা। উত্তর বাড্ডায় ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও কনসালটেশন সেন্টার এবং বাড্ডা জেনারেল হাসপাতালে ফি ৫০০ টাকা। এ ছাড়া বাড্ডা ও শাহজাদপুরের বিভিন্ন প্যাথলজি বিভাগে একই বিষয়ে ফির মধ্যে তারতম্য রয়েছে। শুধু প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগেই নয়, অর্থোপেডিক্স, মনোরোগ, চর্ম ও যৌন, অ্যান্ডোক্রাইলজি, নিউরোমেডিসিন, নিউরো সার্জারি, সনোলজিস্ট, নাক, কান ও গলা, গ্যাস্ট্রোলজি, জেনারেল সার্জারি ও সার্জিক্যাল অনকোলজি, জেনারেল ফিজিশিয়ান, মেডিসিন বিভাগ, কার্ডিওলজি, ইউরোলজি, শিশু রোগ, প্যাথলজিসহ বিভিন্ন রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় একেক ডায়াগনস্টিকে একেক ধরনের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। বাড্ডা, শাহজাদপুর ও গুলশানে প্রায় ২০টি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সরেজমিন ঘুরে এ তথ্য জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, ‘পুঁজিবাজারের ধর্ম হচ্ছে প্রতারণা। তাই ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো যে যার মতো করে দাম বসাচ্ছে। এ ক্ষেত্রেও সরকারের ব্যর্থতাকে দায়ী করব। সরকারের উচিত হবে, চিকিৎসাসেবার প্রতিটি বিভাগেই সুনির্দিষ্ট দাম নির্ধারণ করে দেওয়া। বিশেষ করে ওষুধের দাম কী হবে, ডায়াগনস্টিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার দাম কী হবে, আইসিইউ এ কী দাম হবে তা সরকারকেই নির্ধারণ করে দিতে হবে। এটা না করলে স্বাস্থ্যখাতে নৈরাজ্য চলতেই থাকবে।’

সরেজমিন গুলশান, বাড্ডা ও শাহজাদপুরে আর এ হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মেডিকেয়ার, ইউনিটি ল্যাব, প্রগতি মেডিকেল, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার লি., ডগমা হসপিটাল লিমিটেড, ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টার, বাড্ডা জেনারেল হসপিটাল, প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট স্পেশালাইজড ক্লিনিক, হাইকেয়ার মেডিকেল অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টার, এইসএএফএ জেনারেল হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মেডিলিংক হসপিটাল, এশিয়ান জেনারেল হসপিটাল, উপসম হসপিটাল, মা ও শিশু হসপিটাল, ল্যাব এইড হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে খোঁজখবর নেওয়া হয়। এর মধ্যে খ্যাতিমান গুটিকয়েক ছাড়া বাকিগুলোর কোনো অনুমোদন নেই। এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নানা রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় বিভিন্ন ধরনের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।

গ-১১, শাহজাদপুরে প্রগতি মেডিকেল সেন্টার দিনের বেলায় অধিকাংশ সময় বন্ধ থাকে। গতকালও দুপুর ১২টায় বন্ধ দেখা গেছে। একটি দুর্গন্ধযুক্ত গলির মধ্যে কয়েক রুমের মেডিকেল সেন্টার খুলে বসা হয়েছে। এই মেডিকেল সেন্টারের বিশাল এক নেমপ্লেটে ডা. এস এম মোস্তাফিজুর রহমানের নাম দেখা যায়। তাতে লেখা রয়েছে চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ। মেডিকেল সেন্টারের অনুমোদন আছে কি না জানতে চাইলে ফোনে ডা. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, এটা তিনি বলতে পারবেন না। মেডিকেল সেন্টারের মালিক বলতে পারবে। তবে তার বিরুদ্ধে সরকারি অনুমোদনহীন যৌন ওষুধ প্রেসক্রাইপট করার অভিযোগ রয়েছে। তার প্রেসক্রাইপ করা ‘বেগাস পাম’ নামে একটি অনুমোদনহীন যৌন ওষুধ পাশেই একটি সুনির্দিষ্ট ফামের্সিতে পাওয়া যায়, যা চড়া মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই ওষুধ সব জায়গায় পাওয়া যায়। পাশেই ইউনিটি ল্যাবে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে,  দোতলায় একটি ফ্লোরে ডায়াগনস্টিক সেন্টার খুলে বসা হয়েছে। কোনো রোগী নেই। শুধু কয়েকটি রুমে চিকিৎসকের নেমপ্লেট ঝুলছে। সরকারি অনুমোদন আছে কি না জানতে চাইলে একজন বলেন, তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। হাইকেয়ার মেডিকেল অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টারে ঘুরে কোনো রোগী দেখা যায়নি। তবে হাইকেয়ার মেডিকেল অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টারের বিরুদ্ধে নানা নেতিবাচক অভিযোগ রয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর