সোমবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

তিন রোডে ১২টিই অবৈধ

জয়শ্রী ভাদুড়ী

দুই পাশে মুদি দোকান মাঝখান দিয়ে গুড হেলথ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যাওয়ার রাস্তা। গলিপথে সিমেন্ট আর সুড়কি দিয়ে মেরামত কাজ করছে মিস্ত্রী। লাফঝাঁপ দিয়ে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ভিতরে গিয়ে দেখা গেল        তথ্য ডেস্কে একজন নারী ও পুরুষ বসে আছেন। আবাসিক ভবনের নিচ তলায় তিন রুমে গ্লাস দিয়ে ছয় রুম বানিয়ে তৈরি করা হয়েছে ডায়াগনস্টিক সেন্টার। মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সিরিঞ্জ-তুলা, নোংরা ল্যাব রুম। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর মোহাম্মদপুরের হুমায়ুন রোডে গড়ে ওঠা এই গুড হেলথ ডায়াগনস্টিক সেন্টার মেয়াদ পার হলেও লাইসেন্স নবায়ন না করেই সেবার নামে চালিয়ে যাচ্ছে বাণিজ্য। শুধু এই হাসপাতালই নয় এই এলাকারই পাশের বাবর রোড, খিলজি রোডে লাইসেন্স নবায়ন না করেই হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালনা করছে আরও ১১টি প্রতিষ্ঠান। এগুলো হলো : বিটিএস হাসপাতাল, নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা হাসপাতাল মানসিক ও মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র, ভাইটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মালিহা হাসপাতাল, ন্যাশনাল ডায়াগনস্টিক কমপ্লেক্স, রয়্যাল মাল্টিস্পেশালিটি হসপিটাল, ইবাদ মেডিকেল ল্যাব, জয়িতা নীড় মেডিকেল সেন্টার, সেইফ হাউস মানসিক ও মাদকাসক্ত হাসপাতাল, শেফা হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং সেবিকা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এর মধ্যে সেবিকা জেনারেল হাসপাতাল নবায়নের কাগজপত্র স্বাস্থ্য অধিদফতরে জমা দিয়েছিল। কিন্তু হাসপাতাল পরিদর্শনে এসে স্বাস্থ্য অধিপ্তরের কর্মকর্তারা বেশ কিছু অসঙ্গতি পাওয়ায় সেসব সমস্যা পূরণের পর নবায়নের আবেদন করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে আর কোন যোগাযোগ না করে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছে এই হাসপাতাল। জানা গেছে, সকল হাসপাতাল ও ডায়গনস্টিক সেন্টারের অনুমোদন দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর। নবায়নও করে তারাই। প্রতি বছর ৩০ জুনের মধ্যে হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে লাইসেন্স নবায়ন করতে হয়। লাইসেন্স নবায়নের ক্ষেত্রে হাসপাতালের পর্যাপ্ত জনবল, যন্ত্রপাতি, হালনাগাদ পরিবেশ ছাড়পত্র, আয়কর সনদ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র দেখা হয়। এরপর হাসপাতাল পরিদর্শন করে যাবতীয় কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে অনুমোদন দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর। ১৯৮২ সালের দ্য মেডিকেল প্র্যাকটিস অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিকস অ্যান্ড ল্যাবরেটরিজ (রেগুলেশন) অর্ডিন্যান্সের ৮৪ ধারায় বলা আছে, কোনো হাসপাতালে রোগী প্রতি ফ্লোর স্পেস থাকতে হবে ন্যূনতম ৮০ বর্গফুট। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অপারেশন থিয়েটারের পাশাপাশি নিশ্চিত করতে হবে শয্যাসংখ্যার বিপরীতে নির্দিষ্টসংখ্যক চিকিৎসক ও নার্স। সেই সঙ্গে অপরিহার্য হিসেবে ঘোষিত যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদির ব্যবস্থা থাকলেই কেবল কার্যক্রম চালাতে পারবে বেসরকারি কোনো হাসপাতাল। কিন্তু এসব শর্ত পূরণ না করেই সেবার নামে প্রতারণা করে চলছে এসব হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) অধ্যাপক ডা. কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, যেসব হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার লাইসেন্স নবায়ন করেনি তারা অবৈধভাবে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছে। আমরা এসব অবৈধ প্রতিষ্ঠানের তালিকা র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) ও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে দেবো। তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এসব হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অধিকাংশ রোগীই জাতীয় অর্থপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (পঙ্গু হাসপাতাল), হৃদরোগ ইনস্টিটিউট, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জাতীয় কিডনী ইনস্টিটিউট এন্ড হাসপাতাল, ঢাকা শিশু হাসপাতাল, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড হাসপাতাল, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালসহ রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি ও বিশেষায়িত হাসপাতাল থেকে ভাগিয়ে নিয়ে আসা। অবৈধ হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সঙ্গে যোগসাজশ করে দালালরা রোগীদের সরকারি হাসপাতাল থেকে নিয়ে আসে। কয়েকগুণ বেশি দামে বেড ভাড়া ও প্যাথলজির ফি দিয়ে রোগীরা বাধ্য হন এখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে। নোংরা পরিবেশ এবং মানহীন ল্যাবে উচ্চ দামে টেস্ট করাতে হয় রোগীদের। ডায়াগনস্টিক সেন্টারে  হোল অ্যাবডোমেন (সম্পুর্ন পেট) অ্যাল্ট্রাসনোগ্রাফে নেওয়া হচ্ছে এক হাজার থেকে ১৫শ’ টাকা। অথচ একই টেস্টে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নেওয়া হয়েছে মাত্র ৫শ’ টাকা। সরকারি থেকে দ্বিগুণ-তিনগুণ দামে একই টেস্ট মাহহীন সরঞ্জামে করাচ্ছেন রোগীরা। এভাবে দিনের পর দিন প্রতারক চক্র রোগীদের জিম্মি করে চালিয়ে যাচ্ছে ব্যবসা। অবৈধ এসব হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে র‌্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেন, খাবার, ওষুধ এবং হাসপাতাল এই তিনটি বিষয়কে আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি। অবৈধ হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে আমরা নিয়মিতভাবে অভিযান পরিচালনা করি। লাইসেন্স নবায়ন না করে সেবার নামে রোগীদের প্রতারণা করছে এমন হাসপাতালের তালিকা স্বাস্থ্য অধিদফতর আমাদের দিলেই আমরা অভিযান চালাব।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর