সোমবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

রোগী বাগিয়ে নিতে সক্রিয় দালালচক্র

আলী আজম

নুরুন্নাহার বেগম একজন গৃহিণী। থাকেন রাজধানীর শ্যামপুর থানা এলাকায়। স্বামীর অমতে সন্তান গ্রহণ করায় পরিবারে অশান্তি দেখা দেয়। ফাটল ধরে স্বামী-স্ত্রীর বন্ধনে। ভুল করেছি বলেও মন গলাতে না পেরে সন্তান  ফেলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সন্তানের বয়স তখন প্রায় তিন মাস। যেই সিদ্ধান্ত সেই কাজ। খুব কাছের এক স্বজনকে নিয়ে চলে আসেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। আর এখানে এসেই দালালদের খপ্পরে পড়েন। সেখান থেকে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় নাজিমউদ্দিন রোডের চৌধুরী ক্লিনিকে। পথেই ২০ হাজার টাকা দামদর ঠিক করে ফেলেন এক নারী দালাল। ওই দালাল ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ থেকে ৫০% কমিশন নিয়ে কেটে পড়েন। বিপদে পড়েন নুরুন্নাহার বেগম। প্রথমে তিনি ক্লিনিক কর্তৃপক্ষকে ২০ হাজার টাকা দেন। কিন্তু সব মিলিয়ে তার খরচ হয় ২৮ হাজার টাকা। আড়াই ঘণ্টা বসিয়ে রাখার পর এক ডাক্তার তার অপারেশন করেন। এতে তিনি ভীষণ কষ্ট পান। এই বুঝি তার প্রাণ গেল। তিনি বুঝতে পারেন এটা ক্লিনিক নয় যেন মরণ ফাঁদ। পরে অনেক ব্যথা নিয়ে গতকাল তিনি ক্লিনিক ত্যাগ করেন। এভাবে নুরুন্নাহারের মতো রোগীদের ভাগিয়ে নিতে ঢামেক হাসপাতালকে ঘিরে অর্ধশত নারী দালাল সক্রিয় রয়েছেন। যারা ইমার্জেন্সি ও আউটডোর বিভাগে সর্বদা উতপেতে থাকেন। তারা যে কোনো রোগে আক্রান্ত রোগীদের ভাগিয়ে নিতে পটু। নানা ধরনের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার ফাঁদে ফেলছেন। আর এসব রোগীকে নামসর্বস্ব হাসপাতাল বা ক্লিনিকে বুঝিয়ে দিয়েই মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। গতকাল দুপুরে পুরান ঢাকার নবাব কাটারা রোডের চৌধুরী জেনারেল হাসপাতাল, চানখাঁরপুল জেনারেল হাসপাতাল, নাজিম উদ্দিন রোডের চৌধুরী ক্লিনিক এবং হোসনী দালান রোডের আরাফাত জেনারেল হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে দেখা যায় বিভিন্ন অনিয়ম। কেউ জামা খুলে রিসিভশনের চেয়ারে আবার কেউবা মেতেছেন খোস গল্পে। রোগীর সংখ্যা তুলানামূলক কম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই চারটি হাসপাতালই অবৈধ। এর মধ্যে চৌধুরী জেনারেল হাসপাতালে র‌্যাব কয়েকবার অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু ওই হাসপাতালটি থেমে থাকেনি। এসব হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ওয়ার্ড বয়, ওটি বয়, ওটি সিস্টাররা কাজ করেন। তারাই বিভিন্ন ধরনের অপারেশন করে থাকেন। বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষায়ও অনভিজ্ঞ লোক। তবে অভিজ্ঞতা থেকেই তারা এসব কাজ করছেন বলে দাবি করেন। জানা গেছে, চৌধুরী ক্লিনিকের মালিক নিলুফার ইয়াসমিন। চৌধুরী জেনারেল হাসপাতালের মালিকও তিনি। তবে তার ছেলে নয়ন চৌধুরী এবং নিলুফার মেয়ের জামাই মাসুদুর রহমানও এই হাসপাতালের মালিক। চানখাঁরপুল জেনারেল হাসপাতালের মালিক শফিকুর রহমান, হাফিজ উদ্দিনসহ কয়েকজন। এ ছাড়া আরাফাত জেনারেল হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক ডা. মতিন। এসব হাসপাতাল ও ক্লিনিকে কর্মরতরা জানান, ঢামেক হাসপাতালকে ঘিরে মনোয়ারা, পারুল, লাইলি-১ ও ২, জুলেখা, রওশনআরা-১ ও ২, বিলকিস, বানুসহ অর্ধশতাধিক নারী দালাল সক্রিয় রয়েছে। তারা রোগী ভাগিয়ে এসব হাসপাতালে নিয়ে আসেন। পরে চুক্তি অনুযায়ী ৩০-৫০ শতাংশ টাকা নিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া বাচ্চা চুরি করে অল্প দামে বিক্রি করছে এসব নারী দালাল চক্র। এসব বাচ্চা আবার চড়া দামে বিক্রি করছেন হাসপাতাল ও ক্লিনিক মালিকরা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর