সোমবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা
রাজধানীতে বিএনপির মিছিল

আদালতে আনা হয়নি খালেদা জিয়াকে

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বিএনপির প্রতিনিধি দলের সাক্ষাৎ

নিজস্ব প্রতিবেদক

কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গতকাল ‘আনফিট’ জানিয়ে আদালতে হাজির করেনি কারা কর্তৃপক্ষ। তার অনুপস্থিতিতে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার পরবর্তী যুক্তিতর্ক শুনানির জন্য আগামী ১০ মে দিন ধার্য করা হয়েছে। একই সঙ্গে খালেদা জিয়ার জামিনের মেয়াদও ওই সময় পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। গতকাল ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান এ আদেশ দেন। পুরান ঢাকার বকশীবাজারে কারা অধিদফতরের প্যারেড মাঠে স্থাপিত বিশেষ এজলাসে মামলাটির বিচার চলছে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। শুনানির শুরুতে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘এই মামলায় আজ (রবিবার) যুক্তিতর্ক শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। কিন্তু খালেদা জিয়াকে হাজির করা হয়নি। কারা কর্তৃপক্ষ যে কাগজ আদালতকে দিয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, খালেদা জিয়া আদালতে আসার জন্য আনফিট।’ কাজল আরও বলেন, ‘কারা কর্তৃপক্ষের উচিত তাকে আদালতে হাজির করা। এ নিয়ে তিনটি তারিখে তাকে হাজির করা হয়নি। আমরা হতাশ হচ্ছি।’ ভিডিও কনফারেন্স বিষয়ে দুদকের এই আইনজীবী আদালতকে বলেন, ‘আমরা দুই পক্ষই যদি একমত হই, তাহলে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আদালতের কার্যক্রম চলতে পারে। ভারতেও সম্প্রতি লালু প্রসাদের বিচার প্রক্রিয়া এভাবে হয়েছে।’ তবে খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া আদালতকে বলেন, ‘ভিডিও কনফারেন্সের বিষয়ে আমাদের ঘোর আপত্তি রয়েছে। এভাবে বিচার পরিচালনা হতে পারে না। প্রসিকিউশন থেকে বলা হচ্ছে খালেদা জিয়া আনফিট। কী কারণে আনফিট, তা বলা হয়নি।’ এ সময় সানাউল্লাহ মিয়া খালেদা জিয়ার জামিন বাড়ানোর আবেদন করলে দুদক তার বিরোধিতা করে। দুদকের আইনজীবী বলেন, খালেদা জিয়া কারাগারে আছেন। তার বিরুদ্ধে আদালতে হাজির করার পরোয়ানা রয়েছে। এমন অবস্থায় তার জামিন বাড়ানোর সুযোগ নেই। দুই পক্ষের শুনানি শেষে আদালত খালেদা জিয়ার জামিনের মেয়াদ আগামী ১০ মে পর্যন্ত বাড়ানোর আদেশ দেয়।

চিকিৎসকদের পরামর্শে খালেদার চিকিৎসা : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া আগে থেকেই কতগুলো রোগে ভুগছেন। আমাদের চিকিৎসকরা তার চিকিৎসা দিচ্ছেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তাকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তারপরও তিনি কয়েকজন চিকিৎসকের কথা বলেছেন যারা তার চিকিৎসা দিতেন। সরকার সেসব চিকিৎসকের পরামর্শ এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থাও নিয়েছে।’ খালেদা জিয়াকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নিতে বিএনপি নেতাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমদ গতকাল সকালে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কার্যালয়ে তার সঙ্গে দেখা করে এ দাবি জানান। এরপর মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে পরামর্শ করে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আসাদুজ্জামান খান বলেন, খালেদার পছন্দের চিকিৎসকরা এমআরআইসহ আরও কয়েকটি পরীক্ষার কথা বলেছেন। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার কৃত্রিম হাঁটু সংস্থাপিত রয়েছে। কৃত্রিম হাঁটু থাকলে সব মেশিনে এমআরআই করা যায় না। এ ধরনের মেশিন ইউনাইটেডে রয়েছে জানিয়ে দুই নেতা সেখানকার কথা বলেছেন। এ বিষয়ে আমাদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেব। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেতাদের বলেছি, যা যা প্রয়োজন আমরা তাই করছি এবং সামনে যা প্রয়োজন হবে, জেলকোড অনুযায়ী হবে। জেলকোডের বাইরে যদি কিছু করতে হয় তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কতগুলো রোগে তিনি আগে থেকেই ভুগতেন। তার চিকিৎসার জন্য যা প্রয়োজন হবে, সেই ব্যবস্থাই নেব। খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হবে কি না- জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তার যে চিকিৎসা তিনি তো কোনোটার জন্য ঘন ঘন বিদেশে যাননি। এমন নজির আছে? নেই। উনি দেশে থেকেই চিকিৎসা নিয়েছেন। আমাদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা তার চিকিৎসা করছেন এবং তাদের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছি।’ তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার চাহিদা এবং পছন্দ মতোই তার স্বজন এবং দলের নেতারা দেখা করতে পারছেন। উনি মাঝে মাঝে বলছেন, তিনি সবার সঙ্গে দেখা করবেন না। উনাকে যেন তালিকা আগে পাঠিয়ে দেওয়া হয়- সে অনুযায়ী উনি যার সঙ্গে দেখা করতে চান, নিয়ম অনুযায়ী দেখা করার ব্যবস্থা করা হয়।

অবিলম্বে মুক্তি দিয়ে সুচিকিৎসার দাবি : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে মুক্তি দিয়ে সুকিচিৎসার দাবি জানিয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেছেন, ফাঁসির আসামিদের যেভাবে রাখা হয়, খালেদা জিয়ার মতো একজন নেত্রীকে সে রকম একটি নির্জন কারাগারে রাখা হয়েছে। তিনি এমনিতেই নানা রোগে আক্রান্ত, তার ওপর স্যাঁতসেঁতে নির্জন কারাগারে রাখার কারণে তিনি আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা ও নিঃশর্ত মুক্তি দাবিতে ‘বিশিষ্ট চিকিৎসক সমাজ’ আয়োজিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। প্রফেসর ডা. এ কে এম আজিজুল হকের সভাপতিত্বে ও প্রফেসর ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনের পরিচালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য দেন প্রফেসর ডা. সিরাজউদ্দীন আহমেদ, প্রফেসর ডা. রফিকুল কবির লাবু, প্রফেসর ডা. আবদুল কুদ্দুস, প্রফেসর ডা. মোস্তাক রহিম স্বপন, প্রফেসর ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, প্রফেসর ডা. আবদুস সালাম, প্রফেসর ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু ও ডা. সাইফুদ্দিন প্রমুখ। নজরুল ইসলাম খান বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে দীর্ঘদিন ধরে যে চিকিৎসকরা চিকিৎসা দিয়ে আসছেন, তাদের দেখার সুযোগ করে দেওয়া হোক। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক। ‘হায়াত-মউতের মালিক আল্লাহ’- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের এমন বক্তব্য উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, যখন খালেদা জিয়া এমন অসুস্থ, যখন তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না, তখন এ ধরনের বক্তব্য ইঙ্গিত বহন করে। আমরা সাবধান করে দিতে চাই, খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা না হলে, তার স্বাস্থ্যের যদি আরও অবনতি ঘটে, তার পুরো দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। দেশের জনগণ এই অপরাধের জন্য সরকারকে কখনো ক্ষমা করবে না।

ফখরুলের নেতৃত্বে বিক্ষোভ : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে রাজধানী ঢাকায় গতকাল বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। মিছিল-পূর্ব বক্তৃতায় তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ। তাকে সুচিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না। অবিলম্বে তাকে মুক্তি দিয়ে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হোক। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি এ বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করে। দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় হোসেন মার্কেটের সামনে থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভ মিছিলটি মধ্য বাড্ডায় গিয়ে শেষ হয়। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ঢাকা মহানগর বিএনপি উত্তরের সাধারণ সম্পাদক আহসানউল্লাহ হাসান, সহসভাপতি মুন্সি বজলুল বাসিদ আঞ্জু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামীম পারভেজ, সাংগঠনিক সম্পাদক আনোরুজ্জামান আনোয়ার, যুবদল সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের ভূইয়া জুয়েল, জাসাস সাধারণ সম্পাদক হেলাল খান, ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টনসহ কয়েক হাজার নেতা-কর্মী এতে অংশ নেন। মিছিলে নেতা-কর্মীরা ‘খালেদা জিয়ার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’ এ ধরনের নানা রকম স্লোগান দেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর