সোমবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

নেপাল দুর্ঘটনায় ত্রুটি ছিল না ইউএস বাংলা ফ্লাইটের

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে নেপালের তদন্ত কমিশনের দেওয়া প্রাথমিক প্রতিবেদনে অসঙ্গতি রয়েছে বলে মনে করে বাংলাদেশের বেসরকারি বিমান পরিবহন সংস্থা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস। গতকাল ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে ইউএস বাংলার সিইও ইমরান আসিফ বলেছেন, সবার প্রতি আস্থা রেখে বলছি, রিপোর্টে যেসব বিষয় কভার করার            কথা ছিল— তা হয়নি। রিপোর্ট মানছি না— তা বলব না। তবে রিপোর্টে অসঙ্গতিপূর্ণ কিছু বিষয় রয়েছে। সেই সঙ্গে নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ যে দুই মিনিটের মধ্যে উদ্ধারকর্মী পৌঁছার কথা বলেছেন সে বিষয়ের সঙ্গেও অসম্মতি জানিয়েছেন ইউএস বাংলার সিইও। তিনি বলেছেন, প্রতিবেদনেই বলা হয়েছে ইউএস বাংলার বিমানের কোনো ত্রুটি ছিল না। সেই সঙ্গে আমরা বলতে চাই পাইলটেরও কোনো ত্রুটি ছিল না।

ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইকাও) নিয়ম অনুযায়ী যে কোনো দুর্ঘটনার পর এক মাসের মধ্যে একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন দিতে হয়। সে অনুযায়ী গত ৯ এপ্রিল ৫ পৃষ্ঠার একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে নেপাল সরকারের গঠিত তদন্ত কমিশন। এতে বলা হয়, ত্রিভুবনের রানওয়ে, ট্যাক্সিওয়ে ও অবতরণক্ষেত্র ওই মডেলের উড়োজাহাজ নামার জন্য উপযুক্ত ছিল। অগ্নিনির্বাপণ কর্মী ও উদ্ধারকর্মীরা নিয়ম অনুযায়ী দুর্ঘটনার দুই মিনিটের মধ্যেই জ্বলন্ত বিমানটির কাছে পৌঁছে উদ্ধার কাজ শুরু করেছিলেন। প্রতিবেদনের এ অংশটি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে ইউএস-বাংলার সিইও ইমরান আসিফ বলেন, স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী ও আহত বিমান যাত্রীদের কাছ থেকে আমরা যা জেনেছি তাতে আমাদের ধারণা যে প্রকৃতভাবেই দুই মিনিটের মধ্যে উদ্ধারকর্মীরা নিয়োজিত হয়ে থাকলে হতাহতের সংখ্যা অনেক কম হতো। রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ইউএস বাংলা এয়ারলাইনসের সিইও ইমরান আসিফ আরও বলেন, অত্যন্ত দুঃখজনক- দুর্ঘটনার পর বিভিন্ন গণমাধ্যমে কিছু বিভ্রান্তিকর তথ্য ও ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। যা মোটেও সত্য নয়। বলা হয়েছে বিমানটি পুরনো ছিল, পাইলট আবিদকে জোর করে পাঠানো হয়েছে, তিনি অবসাদগ্রস্ত ছিলেন। এসব তথ্য সঠিক নয়। ক্যাপ্টেন আবিদ দুর্ঘটনার আগে সর্বশেষ রিপোর্টে ফ্লাইংয়ের জন্য ফিট ছিলেন। তার মেডিকেল রিপোর্ট ছিল ‘ক্লাস ওয়ান’। বাংলাদেশের পাইলটদের মধ্যে ১২ জন ডিসিপি পাইলট আবিদ তাদের অন্যতম। ইউএস-বাংলার পাইলটের ফ্লাইং মনিটরিং করার জন্য এফডিএম ডিপার্টমেন্ট রয়েছে। এফডিএম পর্যালোচনা করে ক্যাপ্টেনের কোনো অসঙ্গতি থাকলে ব্রিফ করে। প্রয়োজনে ইন্সট্রাক্টরের মাধ্যমে আরও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে। তবে আবিদের ক্ষেত্রে এর প্রয়োজন হয়নি। তাকে জোর করে ফ্লাইটে পাঠানো হয়নি। তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ ছিলেন। বিমানেও কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি ছিল না।

ইউএস-বাংলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইমরান আসিফ বলেন, দুর্ঘটনার এক মাস পর নেপাল সিভিল এভিয়েশন অথরিটি প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন মাধ্যমে আপনারা জেনেছেন দুর্ঘটনার আগে বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে পাইলটকে বিভ্রান্তিকর নির্দেশাবলি দেওয়া হয়েছিল। সেই টাওয়ার থেকে ইউএস-বাংলার  বৈমানিকদের ল্যান্ডিং ক্লিয়ারেন্স দেওয়ার পর সেই ক্লিয়ারেন্স বাতিল না করেই এয়ারক্রাফটটিকে অন্যত্র হোল্ডিং করতে বলা হয় এবং একই সময় অন্য এয়ারলাইনসের ফ্লাইট অবতরণ করতেও দেওয়া হয়। একটি ফ্লাইটকে দেওয়া ল্যান্ডিং ক্লিয়ারেন্স বাতিল না করেই অন্য ফ্লাইটকে অবতরণ বা উড্ডয়ন করতে দেওয়া আন্তর্জাতিক নিয়মের ব্যত্যয়। দুর্ঘটনার সময় নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) কক্ষে দায়িত্ব পালন করা ছয়জনকে বদলি করার বিষয়টি তদন্ত প্রতিবেদনে না আসার বিষয়টিও সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা হয়। এ বিষয়ে ইমরান আসিফ বলেন, তাঁদের কেন বদলি করা হয়েছে, তা আমরা জানি না। তবে গাফিলতি ছাড়া এমন পদক্ষেপ নেওয়া স্বাভাবিক নয় বলেই আমরা মনে করি। প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে এ বিষয়ে কিছুই প্রকাশ করা হয়নি।’ দুর্ঘটনায় নিহত যাত্রীদের ক্ষতিপূরণের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, নিহত-আহত প্রত্যেক যাত্রীর বীমা প্রথম সারির আন্তর্জাতিক বীমা প্রতিষ্ঠান দিয়ে নিশ্চিত করা আছে। বীমা কোম্পানির সঙ্গে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের উত্তরাধিকারীরা আদালত থেকে উত্তরাধিকার সনদ জমা দিলে সঙ্গে সঙ্গেই তাঁরা ক্ষতিপূরণ পাবেন। আহত ব্যক্তিদেরও এ ক্ষেত্রে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।

ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস যাত্রী নিরাপত্তা নিশ্চিতে বহরে থাকা সব উড়োজাহাজের রক্ষণাবেক্ষণে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয় উল্লেখ করে তিনি জানান, এ জন্য কানাডা, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের ১৭ জন প্রকৌশলী কাজ করেন প্রতিষ্ঠানটিতে। এ ছাড়া ইউএস-বাংলায় কাজ করেন ৬২ জন বাংলাদেশি প্রকৌশলী। বাংলাদেশে এভিয়েশন খাতে আর কোনো উড়োজাহাজ সংস্থার এত বেশিসংখ্যক দেশি-বিদেশি প্রকৌশলী নেই। ইমরান আসিফ বলেন, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস বাংলাদেশের পরিচয় বহনকারী একটি প্রতিষ্ঠান। এ দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও সম্ভাবনা ধারণ করেই আমাদের পথচলা। অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায় আমরা হতোদ্যম হলেও ভেঙে পড়িনি। দুর্ঘটনার পরেও সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আমরা হতাহত ব্যক্তিদের উদ্ধার, চিকিৎসা ও দেশে ফিরিয়ে আনতে সচেষ্ট ছিলাম। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের ড্যাশ এইট-৮ কিউ ৪০০ উড়োজাহাজ ১২ মার্চ নেপালে বিধ্বস্ত হয়। এতে ৬৭ যাত্রী, ৪ জন ক্রুসহ মোট ৭১ জন ছিলেন। দুর্ঘটনায় ২৬ বাংলাদেশিসহ মোট ৫১ জন প্রাণ হারান।

সর্বশেষ খবর