সোমবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

স্টেট ডিপার্টমেন্টের রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান তথ্যমন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্টেট ডিপার্টমেন্টের রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান তথ্যমন্ত্রীর

তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, একতরফাভাবে তৈরি মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মানবাধিকার প্রতিবেদন মনগড়া, ভিত্তিহীন ও কূটনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত। সরকারের কোনো ভাষ্য না নিয়ে তৈরি করা এ প্রতিবেদন তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। প্রকাশিত এ প্রতিবেদন নিয়ে গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে নিজের দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে তিনি আলাপ করেন। তথ্যমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকার একতরফাভাবে বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর বার্ষিক প্রতিবেদন দিয়ে আসছে। এটা তাদের একতরফা পদক্ষেপ। যে সব দেশের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকার প্রতিবেদন দেয়, সৌজন্যমূলকভাবেও সেসব দেশের সরকারের বক্তব্য বা মতামত নেয় না। এটি কূটনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত। ইনু বলেন, বাংলাদেশের ওপর প্রতিবেদন তৈরির আগে তথ্য মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আইন মন্ত্রণালয়ের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য নেওয়া উচিত ছিল। তা না করে এ ধরনের মনগড়া ভিত্তিহীন প্রতিবেদন আমরা সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করছি।

তিনি বলেন, রিপোর্টে যে বেসরকারি সংস্থাগুলোর বরাত দেওয়া হয়েছে তাদের বক্তব্যও পরস্পরবিরোধী। এদের মধ্যে একটির নাম ‘অধিকার’। ২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকায় হেফাজতের সমাবেশ শেষে তারা হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছিল বলে প্রতিবেদন দেওয়ার পর তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে তালিকা চাওয়া হয়েছিল। ‘অধিকার’ তালিকা দিতে ব্যর্থ হয়। এমনকি পরবর্তীতে তারা গুটিকয় ব্যক্তি নিখোঁজ এবং নিহত হয়েছিল বলে দাবি কমরছিল— তাদেরও জীবিত ও সুস্থ অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল। এমন এনজিওর বরাতে তৈরি প্রতিবেদন সঠিক হওয়ার কথা নয়। তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশে প্রিন্ট ও অনলাইন গণমাধ্যম খুবই সরব এবং নিঃসংকোচে মত প্রকাশ করে বলে রিপোর্টে স্বীকার করে নেওয়ার পরও বলা হয়েছে সরকারবিরোধী বক্তব্যের জন্য তাদের সঙ্গে সরকারের নেতিবাচক সম্পর্ক। এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। সমালোচনার জন্য কোনো গণমাধ্যমের সঙ্গে সরকারে নেতিবাচক আচরণের ঘটনা নেই। এদেশের গণমাধ্যম জীবন্ত এবং সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কথা বলার অধিকারের ওপর কোনো সরকারি নিয়ন্ত্রণ নেই। সাংবাদিক কেউ নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করেন বা কেউ দমন পীড়নের আতঙ্কে আছেন, এমন অভিযোগও নেই। তথ্যমন্ত্রী বলেন, রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্রের লাইসেন্স আইন অনুযায়ী প্রকৃত উদ্যোক্তাদের দেওয়া হয়, রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়। যে কোনো রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক সংগঠনকে সভা-সমাবেশ করতে হলে বিশ্বের সব দেশের মতো এখানেও অনুমতি নিতে হয়। আর জামায়াতে ইসলামী একটি রাজনৈতিক দল। কোনো এনজিও নয়। তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিচার বিভাগ স্বাধীন। সরকারের হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা নিজেই নিজেকে বিতর্কিত করে অবসর নিয়েছেন। তার বিষয়ে মার্কিন ওকালতি দুঃখজনক। তথ্যমন্ত্রী প্রতিবেদনে উল্লিখিত বিচারকদের ঘুষ গ্রহণের অভিযোগের তীব্র প্রতিবাদ জানান। তিনি বলেন, এ দেশের আইনে ঘুষ খাওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই, খেলে শাস্তি হয়। বিচারক এবং আদালতের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ঘুষের অভিযোগ এলে তদন্ত হয়। প্রতিকার হয়। মার্কিন প্রতিবেদনের এ ঢালাও মন্তব্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনার দায়মুক্তির বিধান বাংলাদেশে নেই। অতীতের সামরিক-স্বৈরশাসন আমলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড ও আরও কিছু অপরাধের জন্য দায়ীদের দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। শেখ হাসিনার সরকার সে দায়মুক্তির বিধান বাতিল করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে তদন্ত হয়, শাস্তি হয়, কারও দায়মুক্তি নেই।

সর্বশেষ খবর