মঙ্গলবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

শাহরিয়ার আলম আবারও বললেন তারেক রহমানের পাসপোর্ট নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

শাহরিয়ার আলম আবারও বললেন তারেক রহমানের পাসপোর্ট নেই

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্ত্রী-কন্যাসহ তার নিজের পাসপোর্ট যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সমর্পণ করেছেন। ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেগুলো লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশনে পাঠিয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় গুলশানে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তিনি জানান, মেয়াদোত্তীর্ণ ওই পাসপোর্টগুলো এখন ঢাকায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আছে। বর্তমানে তারেক রহমানের কাছে পাসপোর্ট নেই।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, তারেক রহমান ২০০৮ সালে তার পাসপোর্টের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেন। তখন সেটির মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। এরপর আর মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেননি। পরে ২০১৪ সালের ২ জুন যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সপরিবারে পাসপোর্ট জমা দেন তারেক রহমান। প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশি হিসেবে তার কাছে এখন কোনো বৈধ ট্রাভেল ডকুমেন্ট নেই। দ্বৈত নাগরিক হতে হলে তারেক রহমানকে পুনরায় বাংলাদেশি পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে হবে বলেও জানান তিনি। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শাহরিয়ার আলম বলেন, আমার হিসেবে তারেক রহমান এখন আর বাংলাদেশের নাগরিক নন। কেননা তার কাছে জাতীয় পরিচয়পত্র অর্থাৎ যেটাকে ‘ডি-ফেক্টো’ বলা হয় সেটিও নেই। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালে তারেক রহমান যখন বিদেশে যান তখন বায়োম্যাট্রিক বা স্মার্টকার্ডও চালু ছিল না। সুতরাং তার কাছে সেটিও নেই। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশি হিসেবে পাসপোর্টই তার একমাত্র পরিচয়পত্র। কিন্তু তিনি সেটি রিনিউয়ের জন্য আবেদন না করে সমর্পণ করে এসেছেন। এ সময় বিএনপিকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে তারেক রহমানের রিনিউ আবেদনের কপি দেখানোর আহ্বান জানান প্রতিমন্ত্রী।

লিগ্যাল নোটিস প্রসঙ্গে শাহরিয়ার আলম বলেন, অন্তত এই ব্যাপারটি ভালো লাগছে যে— তিনি আদালতের আশ্রয় নেওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। অর্থাৎ, বাংলাদেশের আদালত ও বিচার ব্যবস্থার প্রতি তিনি আস্থাশীল। কিন্তু আমার প্রশ্ন হলো— যে আদালত তারেক রহমানকে হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে, আশ্রয় চাইলে সেই আদালত তাকে আশ্রয় দেবে কিনা। তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সরকার বদ্ধপরিকর বলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা অব্যাহতভাবে ব্রিটিশ সরকারের কাছে বিষয়টি বলছি। এবারও সেদেশের সরকারের সঙ্গে বৈঠক করেছি। তবে যুক্তরাজ্য সরকার সেটি করছে না। তারা তাদের নিজ দেশের আইনের দোহাই দিচ্ছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা পাল্টা জবাব দিয়েছি। বলেছি উন্নত দেশগুলো যদি বড় বড় আসামির সেইফ হোম হয়, যদি তাদের সুরক্ষা দেয়, তাহলে এটি আমাদের দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বাধা হয়ে দাঁড়াবে। সংবাদ সম্মেলনে তারেক রহমানের মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্ট লন্ডনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়াসহ বিভিন্ন প্রমাণপত্র গণমাধ্যমের কাছে তুলে ধরেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। সম্প্রতি লন্ডনে এক অনুষ্ঠানে শাহরিয়ার আলম বলেন, তারেক রহমান বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বর্জন করেছেন। তিনি পাসপোর্ট জমা দিয়েছেন। এ বক্তব্যের পর লন্ডনে পলাতক তারেক রহমান গতকাল পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে আইনি নোটিস পাঠান। ওই নোটিসে প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য বানোয়াট দাবি করে ১০ দিনের মধ্যে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে বলা হয়। তা না হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান। তবে নোটিসটি এখনো পাননি বলে দাবি করেন শাহরিয়ার আলম। তিনি বলেন, নোটিস পেলে জবাবের বিষয়টি দেখব। 

তারেক রহমানের বৈধ বাংলাদেশি পাসপোর্ট  থাকলে দেখাক : লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বাংলাদেশি বৈধ পাসপোর্ট প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। গতকাল বিকালে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমন্ডির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বিএনপির বক্তব্য আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে না নিলেও, তথ্যগত দিক থেকে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। তারেক রহমান যদি নাগরিকত্ব বর্জন না করেই থাকেন, তাহলে বৈধ পাসপোর্ট প্রদর্শন করুক।

আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, তারেক রহমান ১/১১-এর সময় মুচলেকা দিয়ে বিদেশে যাওয়ার পরে একবার তিনি বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে পাসপোর্ট নবায়ন করেছেন। এরপর তিনি ব্রিটেনের হোম অফিসের মাধ্যমে হাইকমিশনে তাঁর পাসপোর্ট সারেন্ডার করেন। তিনি বলেন, মূলত তারেক রহমান বাংলাদেশের পাসপোর্ট সারেন্ডার করেছেন এবং তিনি ব্রিটেনে এখন কী স্ট্যাটাসে আছেন, এটা আপনারা সবাই জানেন। বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে স্বপন বলেন, জিয়া পরিবার ধ্বংসের চক্রান্ত করা হচ্ছে বলে সরকারের প্রতি হাস্যকর-মনগড়া অভিযোগ করেছেন রিজভী। প্রকৃতপক্ষে জিয়া পরিবার ধ্বংসের নায়ক স্বয়ং তারেক রহমান। জিয়া পরিবার ধ্বংসের কোনো অভিপ্রায় সরকার বা আওয়ামী লীগের নেই। তিনি বলেন, দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত এবং আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের মদদদাতা তারেক রহমান। সেই দল ধ্বংসের জন্য অন্য কোনো শক্তির প্রয়োজন নেই। আওয়ামী লীগ প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। এ সময় বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে ‘হাইড্রোলিক টকিং ডল’ আখ্যা দিয়ে স্বপন বলেন, ‘প্রতিদিন মিডিয়ার সামনে শব্দসন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছেন। সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন্নাহার চাপা, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন, উপদফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, নির্বাহী সদস্য আনোয়ার হোসেন, ইকবাল হোসেন, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্না, ছাত্রনেতা গোলাম সারওয়ার কবির প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর