বুধবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা
তারেকের পাসপোর্ট বিতর্ক চলছেই

রাজনৈতিক আশ্রয় নিতে পাসপোর্ট জমা : বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ‘পাসপোর্ট ও নাগরিকত্ব বর্জন’ সংক্রান্ত পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দেওয়া তথ্য সঠিক নয় বলে দাবি করেছে

বিএনপি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিশ্বের বিভিন্ন বরেণ্য রাজনীতিবিদের মতো বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন এবং তিনি সেটা পেয়েছেন। শারীরিকভাবে সুস্থ হলে এবং দেশে আসতে চাইলে তিনি আবারও পাসপোর্ট ফেরত চেয়ে আবেদন করবেন। সেটি তিনি করতে পারবেন। সুতরাং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী যে তথ্য দিয়েছেন, তা মোটেও সঠিক নয়। গতকাল রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বেলা সোয়া ১১টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কথা বলেন।

এ সময় বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু, আবদুল আউয়াল মিন্টু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, দলের আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, তারেক রহমানের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ইস্যুতে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের প্রকাশিত নথিতে ১৩টি বড় ভুল রয়েছে। এই নথিকে ‘রহস্যজনক’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, নথির যেসব স্থানে ‘ভুল’ করা হয়েছে, ব্রিটিশ সরকারের পক্ষে এ ধরনের ভুল করা অস্বাভাবিক ও হাস্যকর। সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর নথিতে থাকা ‘অসঙ্গতি’ তুলে ধরে তার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, তারেক রহমান যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন এবং তিনি সঙ্গত কারণেই সেটা পেয়েছেন। এর পেছনের কারণ হচ্ছে— সরকারের প্রধান ও তার দলের নেতা এবং মন্ত্রীদের বক্তব্যই প্রমাণ করে, বর্তমানে দেশে তার (তারেক রহমানের) জীবন নিরাপদ নয়। এ জন্য তিনি রাজনৈতিক আশ্রয় নেন এবং ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে পাসপোর্ট জমা দেন। সুতরাং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী যে তথ্য দিয়েছেন, তা মোটেও সঠিক নয়। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

‘সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকায় ফিরে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তার বাসায় সংবাদ সম্মেলনে তারেকের মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্টের কপি এবং ব্রিটিশ হোম অফিসের একটি নথি দেখান।’ এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, নথির শুরুতেই ডিপার্টমেন্টের নাম ভুল লেখা হয়েছে। চিঠিতে লেখা আছে, ‘বাংলাদেশ অ্যাম্বাসি’। যা হওয়ার কথা ‘হাইকমিশন অব বাংলাদেশ’। এতে বড় করে টেলিফোন নম্বর ও ফ্যাক্স নম্বর দেওয়া আছে, যেটা পুরোপুরিই ‘আনকমন’ (অস্বাভাবিক) একটি বিষয়। কারণ ব্রিটিশ চিঠির মধ্যে এগুলো থাকে না। এ ছাড়া চিঠিতে ‘ডিয়ার স্যার’ লেখার পরিবর্তে ‘ডিয়ার স্যারস’ লেখা আছে। চিঠির ওপরে চারটি পাসপোর্টের কথা বলা হলেও নিচের দিকে আবার একটি মাত্র পাসপোর্টের কথা উল্লেখ করা হয়। চিঠির শেষাংশে ‘ফেইথফুলি’র এফ বড় হাতের অক্ষর দিয়ে লেখা হয়েছে। ব্রিটিশরা এটা কখনোই লিখবে না। চিঠিতে যিনি স্বাক্ষর করেছেন, তার কোনো নামও সেখানে নেই। এসব বিবেচনায় প্রতিমন্ত্রীর চিঠি নিয়ে যথেষ্ট রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, লন্ডন সফরের একমাত্র অর্জন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সংগ্রহ করা তারেক রহমানের ২০০৮ সালে ইস্যুকৃত পাসপোর্টের ৩টি পাতা এবং ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র বিভাগের অসংখ্য ভুলে ভরা এক লাইনের রহস্যজনক একটি চিঠির ফটোকপি। কী বিচিত্র এই সরকার! কী দুর্বল তাদের অপকৌশল! বিষয়টি নিয়ে যা হচ্ছে, তা উদ্দেশ্যমূলক অপপ্রচার ছাড়া আর কিছুই নয়। আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে স্পষ্ট ভাষায় দেশবাসীকে জানাতে চাই, তারেক রহমান জন্মসূত্রে বাংলাদেশের একজন গর্বিত নাগরিক। তিনি তার এই প্রিয় দেশের নাগরিক ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন। বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, তারেক রহমান সাময়িকভাবে বিদেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে সঙ্গত কারণেই তা পেয়েছেন। এই প্রক্রিয়ার স্বাভাবিক অংশ হিসেবেই তিনি যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র বিভাগে তার পাসপোর্ট জমা দিয়েছেন। সে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী, তার পাসপোর্ট জমা রেখে তাকে ট্রাভেল পারমিট দেওয়া হয়েছে। কাজেই এই মুহূর্তে বাংলাদেশের পাসপোর্ট তার কোনো কাজেও লাগছে না। যখনই তিনি দেশে ফেরার মতো শারীরিকভাবে সুস্থ হবেন, তখনই তিনি দেশের অন্যান্য নাগরিকের মতোই পাসপোর্টের জন্য আবেদন জানাতে এবং তা অর্জন করতে পারবেন। কাজেই সে ফ জমা রাখার জন্য ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র বিভাগ থেকে তারেক রহমানের পাসপোর্ট লন্ডন হাইকমিশনে পাঠানোর যে তথ্য প্রচার করা হচ্ছে, তার দ্বারা কোনো আইন কিংবা যুক্তিতেই প্রমাণ হয় না যে, তিনি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করেছেন। মির্জা ফখরুল বলেন, আসলে দেশের জনগণ এখন দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ও অব্যাহত ঊর্ধ্বগতিতে বিপর্যস্ত। গুম-খুন-চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ। শেয়ারবাজার ও ব্যাংক লুটেরাদের বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ। এই সময় অপরাজনীতি দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা হচ্ছে। এতে জনগণের ক্ষোভের মাত্রা আরও বাড়বে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, তারেক রহমান তার আইনজীবীর মাধ্যমে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে যে আইনি নোটিস পাঠিয়েছেন, দেশের মানুষ তার জবাবের অপেক্ষা করছে। প্রতিমন্ত্রীর এ ধরনের বক্তব্যের ব্যাখ্যা করে মির্জা ফখরুল বলেন, মূলত আমরা যখন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি ও গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের আন্দোলন করি, তখনই জনগণের চোখ ভিন্ন দিকে নিতে চেষ্টা করে আওয়ামী লীগ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর