বৃহস্পতিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

কীভাবে লন্ডনে আছেন তারেক

পরিবারের কেউই বাংলাদেশের ভোটার নন

নিজস্ব প্রতিবেদক

কীভাবে লন্ডনে অবস্থান করছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তা নিয়েই আলোচনা চলছে বিভিন্ন মহলে। বিএনপি বলছে, তারেক রহমান বৈধ কাগজপত্র নিয়ে অবস্থান করছেন সে দেশে। কিন্তু পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের মতে, একটা দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় পেতে হলে মূল দেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করতে হয়। তারেক রহমান তাই করেছেন। অ্যাসাইলাম সিকাররা (আশ্রয়প্রার্থী) রাষ্ট্রবিহীন বা স্টেটলেস থাকেন। তারা যে দেশের লোক সেদেশে বাঞ্ছিত নন বা সে দেশে যেতে চান না। এই কারণে তারা পাসপোর্ট সমর্পণ বা হ্যান্ডওভার করেন। তারেক রহমান ঠিক তাই করেছেন।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, খালেদা জিয়া ছাড়া তার পরিবারের অন্য কোনো সদস্য বাংলাদেশের ভোটার নন। এমনকি তারেক রহমানের জাতীয় পরিচয়পত্রেরও কোনো সন্ধান পায়নি কমিশন। আর পাসপোর্ট অধিদফতর বলছে, জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় তারেক রহমান পাসপোর্টের জন্য কোনো আবেদনই করতে পারবেন না। বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, ২০১৪ সালের ২ জুন তারেক রহমান তার বাংলাদেশি পাসপোর্ট যুক্তরাজ্য সরকারের হোম অফিসে সমর্পণ করেন। তারেকের পাসপোর্ট সমর্পণ নিয়ে বিতর্ক শুরু হওয়ার পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলন করে স্বীকার করেন যে, ২০১২ সালে তারেক রহমান ব্রিটেনে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেছিলেন এবং এক বছরের মধ্যেই সেটি গৃহীত হয়। সেই সূত্রে তারেক যুক্তরাজ্য সরকারের হোম অফিস থেকে একটি ট্রাভেল ডকুমেন্ট নিয়ে এখন সেখানে চলাফেরা করছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, তারেক রহমান ২০১২ সালে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে আবেদন করার সময় তাকে যুক্তরাজ্যের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ভিসা অথরিটির কাছে নিজের অবস্থান তুলে ধরতে হয়েছিল, যার মেয়াদ শেষ হচ্ছে চলতি বছরেই। এখন তাকে যুক্তরাজ্যে বসবাসের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ক্যাটাগরি বেছে নিয়ে সেটেলমেন্ট করতে হবে। জানা গেছে, যুক্তরাজ্যে ছয়টি ক্যাটাগরিতে বসবাসের সুযোগ রয়েছে, যার দুটি তারেক রহমানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এর একটি ক্যাটাগরি হচ্ছে, প্রোটেক্টেড বা স্টেটলেস এবং অন্যটি ডুয়েল সিটিজেন। দ্বিতীয় সুযোগটি গ্রহণ করলে তারেক রহমানের জন্য যুক্তরাজ্য সরকারের আইনগত সহযোগিতা পাওয়ার ক্ষেত্রটি সীমিত হবে। যদি কেউ যুক্তরাজ্যে বসবাস করে সে  দেশের সরকারের কূটনৈতিক সহযোগিতা ও সুরক্ষা চায় তাহলে তাকে প্রোটেক্টেড ক্যাটাগরি বেছে নিতে হবে। কারণ ডুয়েল সিটিজেনদের যুক্তরাজ্য সরকার সাধারণত কোনো রকম আইনগত ও কূটনৈতিক সহযোগিতা দেয় না। পাসপোর্ট অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মাসুদ রেজওয়ান গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছেন, তারেক রহমান মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের (এআরপি) জন্য নতুন করে কোনো আবেদন করেননি। তারেক সেটা করতেও পারবেন না বলে জানান ডিজি। কারণ তার জাতীয় পরিচয়পত্র নেই। তিনি আরও জানান, তারেক তার পুরনো পাসপোর্ট দূতাবাসে জমা দিয়েছেন, সেটা তারা শুনেছেন। অপরদিকে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া ছাড়া তার পরিবারের অন্য কোনো সদস্য বাংলাদেশের ভোটার নন। তারেক রহমানের পাসপোর্ট নিয়ে আলোচনার শুরুর পর কমিশন অনুসন্ধান চালিয়ে তার জাতীয় পরিচয়পত্রের কোনো সন্ধান পায়নি। এমনকি তারেক রহমানের স্ত্রী জোবায়দা রহমান, কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথিও ভোটার হননি বলে তথ্য দিয়েছেন জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগের কর্মকর্তারা। নির্বাচন কমিশনের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারেক রহমান ছবিসহ ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হননি। তার জাতীয় পরিচয়পত্রও হয়নি। তবে তারেক রহমানের মা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ২০০৮ সালের ২৯ নভেম্বর ক্যান্টনমেন্টের ঠিকানায় ভোটার হয়েছেন।

সর্বশেষ খবর