শুক্রবার, ২৭ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা
আইনশৃঙ্খলা নিয়ে ইসির বৈঠক

আগের রাতে সিল মারলেই অ্যাকশন থাকবে না সেনা

গোলাম রাব্বানী

নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করা হবে না। দুই সিটিতে ভোটের আগের রাতে সিল মারা বা ব্যালট ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলে তাত্ক্ষণিক অ্যাকশনে যাওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কোনো কর্মকর্তা অনিয়ম বা পক্ষপাতিত্ব করলে তাকে বরখাস্ত করা হবে।

গতকাল আসন্ন দুই সিটি নির্বাচন সামনে রেখে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের বৈঠকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আসন্ন গাজীপুর-খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশন বলেছে, গাজীপুর-খুলনাসহ স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন হবে না। বিজিবি-র‌্যাব-পুলিশসহ পর্যাপ্তসংখ্যক আধা সামরিক বাহিনী থাকবে। এ ছাড়া অপপ্রচার ও গুজব ছড়ানো রোধে সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রণের চিন্তাও করছে কমিশন। বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, দুই সিটি নির্বাচন সামনে রেখে সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ, শ্রমিক অসন্তোষ, সন্ত্রাসী গ্রেফতার, বস্তিতে বিশেষ অভিযান, গাজীপুরের ভিআইপি রিসোর্টে বহিরাগতদের অবস্থান নজরদারি করার বিষয়ে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে শিল্প-কারখানায় ভোটের দিন সাধারণ ছুটি রাখার বিষয়ে গার্মেন্ট মালিকদের সঙ্গে সভা করার জন্য বলা হয়েছে। সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, শ্রমিক অসন্তোষের বিষয়ে বিশেষ নজর রাখতে হবে। কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হবে। বৈঠকে অংশগ্রহণকারী একাধিক কর্মকর্তা জানান, আইনশৃঙ্খলা সভায় নির্বাচন কর্মকর্তাদের শৃঙ্খলা  ও নিয়ন্ত্রণের আইন তথা ‘নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন-১৯৯১’ এর কথা উল্লেখ করে একজন নির্বাচন কমিশনার সবাইকে বলেছেন, ‘এই আইন রয়েছে। এবারে তা প্রয়োগ করা হবে।’ তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কোনো কর্মকর্তা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত হলে বা কেউ নির্বাচন কমিশন বা রিটার্নিং অফিসারের নির্দেশ না মানলে তাকে তাত্ক্ষণিক বরখাস্ত, বাধ্যতামূলক অবসর, পদাবনতি, বেতন-পদোন্নতি দুই বছরের জন্য স্থগিত করাসহ শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।

সেনা মোতায়েন হবে না : গাজীপুর ও খুলনা সিটি নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করা হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। প্রয়োজনে র‌্যাব-পুলিশ-বিজিবির অতিরিক্ত সংখ্যক সদস্য নিয়োজিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সাংবিধানিক এ সংস্থাটি। গতকাল এ দুই সিটি নির্বাচনের আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক বৈঠক শেষে এ তথ্য জানান ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। তিনি বলেন, আমরা আগে থেকেই বলে আসছি যে কোনো স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন হবে না। বিজিবি-র‌্যাব-পুলিশসহ আধা সামরিক বাহিনী থাকবে পর্যাপ্ত সংখ্যক। প্রয়োজনে দেশের যে কোনো এলাকা থেকে আরও বেশি সংখ্যক নিরাপত্তা সদস্য আনা হবে। তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যেক ওয়ার্ডে ম্যাজিস্ট্রেট থাকবে, একটি পুলিশের মোবাইল টিম থাকবে, দুই ওয়ার্ড মিলে স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে, প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি র‌্যাবের মোবাইল টিম থাকবে, প্রতি তিন ওয়ার্ডে একটি বিজিবির টিম থাকবে।  গতকাল বেলা ১১টা থেকে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে এ সভায় চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিভাগীয় কমিশনার, খুলনা-গাজীপুরের প্রশাসন-পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তা, রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। এক প্রশ্নের জবাবে সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানান, কমিশনের প্রতি তাদের (বিএনপি) আস্থা রয়েছে বলেই  ভোটে অংশ নিচ্ছে। সিইসি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, দল ও প্রার্থীসহ সবাইকে বলেছে-প্রচারে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা হবে। গাজীপুরের পুলিশ সুপারকে প্রত্যাহারে বিএনপির দাবির বিষয়ে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনতে হবে। সেখানে তিনি (এসপি) অসহযোগিতা করছে কিনা- দেখতে হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার বিষয়ে কোনো রিপোর্ট আসেনি। তফসিল ঘোষণার পর থেকে গত ২৭ দিনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কোনো অবনতি হয়েছে বলে প্রতিবেদনও আসেনি। আইনশৃঙ্খলা বৈঠকেও বাহিনীপ্রধানরা সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাস দিয়েছেন। দুই সিটিতে স্বল্প পরিসরে ইভিএম ব্যবহারের কথা থাকলেও গতকাল পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট কেন্দ্র নির্ধারণ হয়নি বলে তিনি জানান।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ন্ত্রণ : দুই সিটি নির্বাচন সামনে রেখে অপপ্রচার ও গুজব ছড়ানো রোধে সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রণে বিটিআরসি ও অপারেটরদের সঙ্গে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার রেশ ধরে সাংবিধানিক সংস্থাটি এ নিয়ন্ত্রণারোপ করতে চাইছে। ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। ভোটেও অপপ্রচার ও গুজব ছড়ানোর শঙ্কা রয়েছে। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে অপপ্রচার ও গুজব ছড়ানো যাতে না করা হয় সে জন্য কীভাবে সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করা যায় বা গুজব ছড়ানো বন্ধ করা যায়- তা নিয়ে মতবিনিময় করা হবে। এদিকে ভোটের দিন ভোট কেন্দ্র থেকে সরাসরি সম্প্রচার ও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়িয়ে সুশৃঙ্খলভাবে কাজ করার বিষয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে বসবেন বলে জানান ইসি সচিব। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগে কোথাও কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। আমরা চাই- মিডিয়া ও নির্বাচন কর্মকর্তাদের মধ্যে যেন ভুল বোঝাবুঝি না হয়। সে জন্য গণমাধ্যমের সঙ্গে মতবিনিময় করা হবে।

চার দিন মাঠে থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী : প্রতি কেন্দ্রে সাধারণ ও গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় ২২ থেকে ২৪ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। পুলিশ-এপিবিএন-আনসার ব্যাটালিয়ন নিয়ে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স গাজীপুরে ১৯টি ও খুলনায় ১০টি টিম; র‌্যাব-এর ৫৭টি টিম গাজীপুরে ও খুলনায় ৩১টি টিম; বিজিবি থাকবে গাজীপুরে ২৯ প্লাটুন; খুলনায় ১৬ প্লাটুন। নির্বাহী হাকিম থাকবেন সব মিলিয়ে গাজীপুরে ৮৬ জন; খুলনায় ৪৯ জন। বিচারিক হাকিম গাজীপুরে ১৯ জন ও খুলনায় ১০ জন।

দুই সিটির নির্বাচনকে গুরুত্বের  সঙ্গে দেখা হচ্ছে :  প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, সংসদ নির্বাচন অতি সন্নিকটে। সেটাকে সামনে রেখে ও ঢাকার পাশে আয়তনের দিক থেকে বড় সিটি করপোরেশন গাজীপুর এবং খুলনায় সিটি নির্বাচন।

এই নির্বাচনগুলোকে কমিশন অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে। গতকাল আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বৈঠকের শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে সিইসি বলেন, আশা করছি আপনাদের কাছ থেকে অনেক পরামর্শ পাওয়া যাবে। বিগত দিনে সিটি নির্বাচনসহ অন্যান্য নির্বাচন আপনাদের সহযোগিতায় সফল হয়েছে। এই নির্বাচনও সফল হবে বলে আশা করছি। গতকাল সিইসির সভাপতিত্বে নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে বেলা ১১টায় বৈঠক শুরু হয়, চলে দুপুর পর্যন্ত। এ সভায় চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, বিভাগীয় কমিশনার, খুলনা-গাজীপুরের প্রশাসন-পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তা, রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর