শুক্রবার, ২৭ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

ক্ষতিপূরণের টাকার জন্য কাড়াকাড়ি

নেপালে বিমান ট্র্যাজেডি

জুলকার নাইন

ক্ষতিপূরণের টাকার জন্য কাড়াকাড়ি

নেপালে দুর্ঘটনায় বিধ্বস্ত ইউএস বাংলার বিমানে নিহত যাত্রীদের কিছু স্বজন ক্ষতিপূরণের অর্থ পাওয়ার জন্য রীতিমতো কাড়াকাড়ি শুরু করেছেন। নিহতরা বড় অঙ্কের ক্ষতিপূরণ পাবেন শোনার পরপরই নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু করেছেন কমপক্ষে তিন পরিবারের  স্বজনরা। একই পরিবারের স্বজনরা একে অপরের বিরুদ্ধে বিষোদগারও করছেন প্রকাশ্যে। সন্তানরা অভিযোগ করছেন, বছরের পর বছর কোনো খোঁজখবর না থাকলেও এখন টাকার জন্য সামনে চলে আসছেন চাচা-খালা-ফুফু সবাই। আবার একপক্ষ আরেক পক্ষের অগোচরে টাকার জন্য বিভিন্ন অফিসে যোগাযোগ করেছেন এমন ঘটনাও ঘটেছে বেশ কয়েকটি। অবশ্য ক্ষতিপূরণের পরিমাণ ও কারা পাবেন সেটা পুরোপুরি আইন অনুসারে আদালতে নির্ধারণ হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা যায়, বিমান দুর্ঘটনায় নিহত বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডের (বিডিবিএল) রাজশাহী শাখার অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার ও রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আখতারা বেগম অবসরের পর প্রথমবার বিমানে বিদেশ সফরে গিয়েছিলেন। সেখানেই ভাগ্য বিড়ম্বনায় এতিম হয়ে যায় তাদের দুই মেয়ে নাজনীন আক্তার কাঁকন ও নারগিস আক্তার কনক। এদের মধ্যে বড় মেয়ে বিবাহিত হলেও ছোট মেয়ে এখনো অবিবাহিত। বাবা-মা বেঁচে থাকতে যে স্বজনরা একদিনও খোঁজ নেননি এই দুই  বোনের, এখন ক্ষতিপূরণের টাকার ভাগ নিতে তারাই  দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। সেই স্বজনদের সংখ্যাও কম নয়। এর মধ্যে নিহত নজরুল ইসলামের ৯ ভাই-বোন এবং আখতারা বেগমের ৫ ভাই-বোন রয়েছেন। মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশ অনুসারে, দুই মেয়েসহ নিহত দম্পতির সম্পদের অংশীদার হয়েছেন মোট ১৬ জন। বাংলাদেশে এই অধ্যাদেশই সম্পত্তি বণ্টনের ক্ষেত্রে প্রচলিত।  যোগাযোগ করা হলে নিহত দম্পতির মেয়ে নাজনীন আক্তার কাঁকন বলেন, ক্ষতিপূরণের অর্থের জন্য যে ল’ ফার্মকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তারা আমাদের কাছ  থেকে ওয়ারিশের সার্টিফিকেট, ডেথ সার্টিফিকেট, আমাদের দুই বোনের ন্যাশনাল আইডি কার্ড ইত্যাদি চেয়েছে। এখন বলা হচ্ছে অন্য স্বজনরাও এই টাকার অংশ পাবেন। তাদেরও কাজগপত্র ইউএস-বাংলা এবং দায়িত্ব পাওয়া ল’ ফার্ম থেকে চাওয়া হয়েছে। কিন্তু এটা আসলে তো ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাওয়ার কথা। পরিবার বলতে তো শুধু আমরা দুই বোন। কিন্তু এখন নাকি ইসলামী আইন অনুযায়ী দেওয়া হবে। ল ফার্ম থেকে আমার চাচা, চাচাতো ভাই-সবার কাগজপত্রই চেয়েছে। আমরা ইউএস বাংলা ও ল ফার্মকে বলেছি, আমার চাচারা, আমার চাচাতো ভাইয়েরা কেউ তো কোনোদিন আমাদের লালন-পালন করেনি। তবে কেন তারা এই  টাকার অংশ পাবেন।’ কাঁকনের অভিযোগ, এটা তো আমার আব্বুর সম্পত্তিও না। ইসলামী আইন অনুযায়ী, তবে কেন তারা পাবেন। এই বিষয়ে আমরা বারবার  যোগাযোগ করেছি।

তবে তারা একই কথা বলেছে যে, এটা বাংলাদেশের ইসলামিক আইন অনুযায়ীই হবে, কারও কিছু করার নেই। আর আমার আম্মুর অংশ পাবেন আমার খালা ও মামারা। কিন্তু এই অংশ যদি আমার খালা বা মামারা ছেড়ে দেয়, তবে দিতেও পারে। কিন্তু অন্যরা যদি না ছাড়ে তবে আমাদের কারও কিছুই করার নেই।’

দম্পতির ছোট মেয়ে নারগিস আক্তার কনকের বক্তব্য, ‘আমাদের খোঁজ নিতে কেউ কোনোদিন আসেনি। আমার বাবা-মা মারা যাওয়ার পরে যখন ওরা ক্ষতিপূরণের টাকা পাওয়ার কথা শুনেছে, তখনই তারা নানা রকম  দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে। এমনকি আমাদের না জানিয়ে তারা নাকি ইউএস-বাংলার অফিসেও যোগাযোগ করছে।’

এর আগে ইউএস বাংলা এয়ারলাইনসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান আসিফ জানিয়েছেন, বিধ্বস্ত হওয়া ইউএস-বাংলা উড়োজাহাজের ইন্স্যুরেন্সের লোকাল এজেন্ট সাধারণ বীমা ও সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্স। সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি পুনঃবীমা অংশের অর্ধেক সাধারণ বীমা করপোরেশন ও বাকি অংশ বীমা ব্রোকার  কে এম দাস্তুর অ্যান্ড কোংয়ের মাধ্যমে বিদেশে পুনঃবীমা করেছে। সাধারণ বীমা করপোরেশনও কে এম দাস্তুর অ্যান্ড কোংয়ের মাধ্যমে বিদেশে পুনঃবীমা করেছে। ইউএস-বাংলার ধ্বংস হওয়া ওই বিমানটি বৈদেশিক  নেতৃস্থানীয় পুনঃবীমাকারী লন্ডনভিত্তিক এক্সএল ক্যাটলিন ও অন্যান্য পুনঃবীমাকারীর সঙ্গে পুনঃবীমা করা আছে। নিহত প্রত্যেক পরিবার ৫০ হাজার ডলারের কম পাবেন না। আর আহতদের কার কত দিন চিকিৎসা  লেগেছে তার ওপর ভিত্তি করে ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়া হবে। তিনি জানান, ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছে, তিনি প্রত্যেকটা পরিবারের সঙ্গে  যোগাযোগ রাখছেন। এ বিমান দুর্ঘটনায় আহত-নিহত সবার নাম-ঠিকানা তাদের কাছে আছে। ইন্স্যুরেন্সের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিদ্যমান আইন অনুযায়ী সাকসেশন সার্টিফিকেট দিতে হবে। এ বিষয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞাপনও দেওয়া হয়েছে। কী কী তথ্য লাগবে তা পরিবারগুলোকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর