শুক্রবার, ২৭ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

অচল যন্ত্রাংশে সচল বাজার

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

অচল যন্ত্রাংশে সচল বাজার

ফেলনা— তবুও ফেলনা নয়। সোনার মতোই দামি। বগুড়ায় পুরনো যন্ত্রাংশের বাজার— এ বাস্তবতাই সৃষ্টি করেছে। কৃষিজমির বন্ধ বা অচল হয়ে পড়া ট্রাক্টর, শ্যালো মেশিন, ডায়নামা কিনে নিয়ে তা পার্টস বাই পার্টস খুলে বিক্রি করছে এই যন্ত্রাংশের বাজার। এখানে প্রতিদিনই বিক্রি হচ্ছে লাখ লাখ টাকার যন্ত্রাংশ। সংশ্লিষ্টরা জানান, চাহিদা সৃষ্টি হওয়ার কারণে প্রতিদিন কমপক্ষে ২০ জেলায় পুরনো যন্ত্রাংশগুলো বিক্রি হয়। উত্তরের জেলাগুলোয় কৃষিকাজের জন্য পুরনো যন্ত্রাংশের পার্টস কেনাবেচা করে কৃষির খরচ সাশ্রয়ীও করা সম্ভব হয়েছে। সব মিলে চাহিদার কারণেই গড়ে উঠেছে পুরনো যন্ত্রাংশের বিশাল বাজার। বগুড়া শহরের শাপলা সুপার মার্কেট, রেলওয়ে হকার্স মার্কেট, গোহাইল রোড, বিআরটিসি মার্কেট এলাকায় অচল হয়ে পড়া পাওয়ার টিলার, শ্যালো মেশিন ও জেনারেটর কেনাবেচা হয়। একটি নষ্ট বা অচল হয়ে যাওয়া পাওয়ার টিলার বিক্রি হয় ১৮ হাজার থেকে ২২ হাজার টাকায়। আর নতুন পাওয়ার টিলার ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার ওপরে। কৃষিকাজের জন্য ব্যবহূত বিভিন্ন আকারের শ্যালো মেশিন ও জেনারেটর বিক্রি হয় ধারণক্ষমতার ওপর। জেলায় অচল হয়ে পড়া পাওয়ার টিলার ও শ্যালো মেশিন বেশি কেনাবেচা হয়। বগুড়া, নাটোর, নওগাঁ, জয়পুরহাট, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, রংপুর, কুড়িগ্রাম, পাবনাসহ উত্তরের ১৬ জেলার পাশাপাশি, ঢাকার ধোলাইখাল, চট্টগ্রাম পোর্ট, যশোর থেকেও পুরনো শ্যালো মেশিন ও পাওয়ার টিলার সংগ্রহ করা হয়। পুরনো পাওয়ার টিলার ও শ্যালো মেশিন এবং জেনারেটর ভাঙাড়ি হিসেবে কিনে নেন বগুড়ার ব্যবসায়ীরা। পরে এগুলো পার্টস বাই পার্টস খুলে ভালো ও সচল পার্টসগুলো তারা বিক্রি করছেন কৃষকের কাছে। কৃষক কৃষিকাজের জন্য পুরনো এই যন্ত্রাংশগুলো ব্যবহার করছেন। পুরনো শ্যালো মেশিন ও পাওয়ার টিলার পার্টস খুলে বিক্রি করা হয় কমপক্ষে ২০০ দোকানে। পাওয়ার টিলার ও শ্যালো মেশিনের পাশাপাশি কিছু কিছু পুরনো জেনারেটরও বিক্রি হয়। ১৮ থেকে ২২ হাজার টাকায় ভাঙাড়ি হিসেবে কেনা পাওয়ার টিলার পার্টস খুলে বিক্রি হয় সর্বোচ্চ ৩৫ হাজার টাকায়। আর শ্যালো পার্টস বিক্রি হয় আকারভেদে। বগুড়ায় গড়ে ওঠা এই পুরনো যন্ত্রাংশের মার্কেট এখন সুবিশাল। প্রতিদিন গড়ে বিক্রি দাঁড়ায় ১০ লাখ টাকার ওপরে। স্থানীয় ও উত্তরের বিভিন্ন জেলার কৃষক এর ক্রেতা। যন্ত্রাংশ বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উত্তরের সব জেলা থেকে পুরনো, ভাঙা, অচল শ্যালো ও পাওয়ার টিলার ভাঙাড়ি হিসেবে কিনে নেওয়া হয়। আবার সচল পুরনো মেশিনও দরদামের মাধ্যমে কেনা হয়। এ মেশিনগুলো বগুড়ায় নিয়ে এসে পার্টস খোলা হয়। খুলে বিক্রি হয় ৫০ শতাংশ ছাড়ে। আবার কোনো কোনো পার্টস বিক্রি হয় ৩০-৪০ শতাংশ ছাড়ে। কিছু পার্টস স্থানীয়ভাবেও তৈরি হয়। তবে এগুলো থেকে পুরনো আসল পার্টসই দীর্ঘস্থায়ী হয়। সে কারণে পুরনো পার্টসের চাহিদা বেশি। বগুড়া শহরের শাপলা সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম জানান, পাওয়ার টিলার নতুনের দাম অনেক বেশি। এর কোনো পার্টস নষ্ট হয়ে গেলে সহজে পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও আসল যন্ত্রাংশের মতো হয়ে ওঠে না। সে কারণে বগুড়ার এই পুরনো যন্ত্রাংশের দোকানে পুরনো যন্ত্রাংশের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে। মার্কেটের শ্রমিক আল আমিন জানান, পুরনো একটি গিয়ারবক্স বিক্রি হয় ২ হাজার ৮০০ টাকায়, আর নতুন ৪ হাজার ৬০০ টাকায়। পাওয়ার টিলারের একটি যন্ত্রাংশ ড্যানিশ বোর্ড পুরনো ৮০০ টাকা, নতুনটা ১৮০০ থেকে ১৯০০ টাকা। নতুনের চেয়ে পুরনোগুলো আসল ও বেশিদিন সচল থাকে। সে কারণে কৃষক এই পুরনো যন্ত্রাংশই বেশি কেনেন। শুধু বগুড়া নয়, উত্তরের ১৬ জেলার সঙ্গে যমুনাপারের টাঙ্গাইল জেলা, ময়মনসিংহ অঞ্চল থেকেও কৃষক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা কৃষিকাজের জন্য বিভিন্ন পার্টস কিনতে আসেন। বগুড়ার শেরপুর উপজেলার গাড়িদহ এলাকার কৃষক ফরিদ হোসেন জানান, কৃষিকাজের জন্য শ্যালো ও পাওয়ার টিলারের পুরনো যন্ত্রাংশই বেশি কাজ দেয়। নতুন বেশির ভাগই দীর্ঘস্থায়ী হয়ে ওঠে না। পুরনো যন্ত্রাংশের বিক্রেতা আলম মিয়া জানান, পুরনো যন্ত্রাংশের যেই দোকানে যত বেশি ইনভেস্ট, তার বিক্রিও তত বেশি। তার দোকানে গড়ে ১০ হাজার টাকার বেশি বিক্রি হয়। শাপলা সুপার মার্কেটের মেশিনারিজ ব্যবসায়ীরা জানান, এ মার্কেটগুলো থেকে ফোনে যোগাযোগের মাধ্যমেও চাহিদামতো দেশের বিভিন্ন এলাকায় যন্ত্রাংশ পাঠানো হয়। বাংলাদেশ এগ্রিকালচার মেশিনারি মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন বগুড়া জেলা শাখার উপদেষ্টা ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক আযম টিকুল জানান, অ্যাসোসিয়েশনে প্রায় ৩৫০ জন সদস্য রয়েছেন। এর মধ্যে পুরনো কৃষিযন্ত্রাংশ বিক্রেতা রয়েছেন প্রায় ২০০। এসব দোকানে পুরনো পাওয়ার টিলার, শ্যালো মেশিন ও কিছু জেনারেটরের পার্টস পাওয়া যায়। তবে কৃষিকাজে ব্যবহার হয় এমন যন্ত্রাংশের চাহিদা সবচেয়ে বেশি।

সর্বশেষ খবর