রবিবার, ২৯ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা
নির্বাচনে সরগরম দুই সিটি

খুলনায় একমঞ্চে পাঁচ মেয়র প্রার্থী

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত রাখার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক। অন্যদিকে বিএনপির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু উন্নয়নের পাশাপাশি ‘গ্রিন ক্লিন খুলনা’ গড়ার অঙ্গীকার করেন। আর জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী শফিকুর রহমান বেকারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত মেয়র প্রার্থী মো. মুজ্জাম্মিল হক মাদকমুক্ত সমাজ গঠন ও সিপিবির মিজানুর রহমান বাবু খুলনার বন্ধ হওয়া কল-কারখানা চালু করতে কাজ করার কথা বলেন। গতকাল সকালে খুলনার শহীদ হাদিস পার্কে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) জেলা ও মহানগর কমিটি আয়োজিত ‘জনগণের মুখোমুখি’ অনুষ্ঠানে পাঁচ মেয়র প্রার্থী এসব কথা বলেন। দর্শকদের প্রশ্নোত্তর পর্ব, সংক্ষিপ্ত কথামালা আর প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র প্রার্থীদের বক্তব্যে অনুষ্ঠানটি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে পাঁচ মেয়র প্রার্থী হাত উঁচিয়ে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী পরিবেশ বজায় রাখার অঙ্গীকার করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সুজনের খুলনা জেলা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক জাফর ইমাম। এতে স্বাগত বক্তৃতা করেন সুজনের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কুদরত-ই খুদা। পুরো অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সুজনের কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক ভোটারদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আমি ২০০৮ সাল থেকে সিটি করপোরেশনের পাঁচ বছর মেয়র ছিলাম। ওই সময় জলাবদ্ধতা দূর করতে কাজ করেছি। আমি ময়ূর নদীসহ ২২টি খাল অবমুক্ত করার জন্য প্রকল্প তৈরি করে এডিবির প্রায় আড়াই শ কোটি টাকার কার্যক্রম শুরু করি।’ তিনি বলেন, ‘কথার চেয়ে আমি কাজে বেশি বিশ্বাস করি। খুলনার মানুষ, খুলনার রাজপথ সাক্ষী দেবে ব্রিটিশ, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের যারা যখন ক্ষমতায় ছিলেন তাদের থেকে ওই পাঁচ বছরে অনেক টাকা আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে এনেছি এবং খুলনার উন্নয়নে ব্যয় করেছি।’ তালুকদার আবদুল খালেক বলেন, ‘সবার পক্ষে দেশের উন্নয়ন করা সম্ভব হয় না। সে জন্য পুনরায় আমাকে নির্বাচিত করলে আমি খুলনার অসমাপ্ত কাজ ও তিলোত্তমা-পরিচ্ছন্ন নগরী গড়ে তুলতে কাজ করব।’ অন্যদিকে পাল্টা বক্তব্যে বিএনপির নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ‘আমার বক্তব্য খুবই পরিষ্কার—স্বপ্ন দেখাব আমরা, স্বপ্ন বাস্তবায়ন করব আমরা। এমন স্বপ্ন দেখাব না, যা সিটি করপোরেশনের কাজ নয় এবং সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন কখনই হবে না। সেই ধূম্রজাল সৃষ্টি আমার দায়িত্ব নয়।’ তিনি আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের দিকে ইঙ্গিত করে প্রশ্ন তোলেন, ‘বিগত দিনে ইজিবাইকের স্টিকার-বাণিজ্য কারা করেছেন তা নগরবাসী জানেন। আমি নাম উল্লেখ করতে চাই না, গত ৯ বছরে ইজিবাইকের চাঁদা কারা তুলেছেন, কারা এই অর্থ লুটপাট করেছেন। সেই অর্থ ফিরিয়ে দেওয়া হোক এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা উচিত।’ মেয়র প্রার্থী মঞ্জু বলেন, ‘গত কয়েক দিনে পত্র-পত্রিকায় নাম এসেছে, খুলনায় কারা মাদকের সঙ্গে জড়িত। রাজনৈতিক দল থেকে তাদের বহিষ্কার করতে হবে।’ ঘুষমুক্ত প্রশাসন গড়ে তোলার অঙ্গীকার করে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী শফিকুর রহমান মুশফিক বলেন, ‘উচ্চশিক্ষা শেষে চাকরির ব্যবস্থা না হলে যুবকদের মধ্যে হতাশা দেখা দেয়। অনেক ক্ষেত্রে তারা মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। আমি নির্বাচিত হলে বৈষম্য রাখব না। যুবকরা ঘুষমুক্ত চাকরি যাতে পায়, সে ব্যবস্থা করব।’ মাদকমুক্ত সমাজ গড়ে তুলতে সবার সহযোগিতা কামনা করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী মাওলানা মো. মুজ্জাম্মিল হক বলেন, ‘আমরা যদি যুবকদের মানসিক অবস্থার পরিবর্তন করতে পারি, আমরা যদি তাদের মনের উন্নয়ন করতে পারি, আদর্শ যুবক-যুবতী ও আদর্শ সমাজ গড়ে তুলতে পারি, তাহলে নিশ্চয়ই খুলনা মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত শহরে পরিণত হবে।’ আর নির্বাচিত হলে সর্বপ্রথম খুলনার বন্ধ কল-কারখানা চালুর প্রতিশ্রুতি দিয়ে সিপিবির প্রার্থী মিজানুর রহমান বাবু বলেন, ‘মেয়র নির্বাচিত হলে আমি সিটি করপোরেশনকে জবাবদিহিমূলক স্বশাসিত স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলব।’

জনসংযোগে তালুকদার খালেক : আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক গতকাল সকালে নগরীর খালিশপুরে ৭, ৮ ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডে জনসংযোগ ও মতবিনিময়কালে শ্রমিকবান্ধব শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, নির্বাচিত হলে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন-ভাতা দ্রুত পরিশোধের ব্যবস্থা করা হবে। শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণে যা কিছু করা প্রয়োজন তা-ই করা হবে। এ সময় নৌকা প্রতীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে লিফলেট বিতরণ করা হয়। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও নির্বাচনের সমন্বয়কারী এস এম কামাল হোসেন, নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম, থানা সভাপতি এ কে এম সানাউল্লাহ নান্নু, সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম বাশার, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা এস এম আবদুল জলিল, মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ আবদুর রউফ, হাজী শরিয়ত উল্লাহ বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক শেখ জাহিদুজ্জামান, ডা. এস এম মুজিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।  এর আগে তিনি জলাবদ্ধতা নিরসন ও মাদকমুক্ত আধুনিক পরিচ্ছন্ন নগরী গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ৩১ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেন।

ভোটারদের দুয়ারে মঞ্জু : বিএনপির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু গতকাল সকালে নগরীর বৈকালী মোড়-বাজার এলাকা, হাদিস পার্ক, ডাকবাংলা, ফেরিঘাট, খানজাহান আলী রোড, শান্তিধাম, সিমেট্রি রোড ও পিকচার প্যালেস মোড় এলাকায় গণসংযোগ করেন। এ সময় তিনি দখল হয়ে যাওয়া খালসমূহ দখলমুক্ত করে এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটিয়ে নগরীর জলাবদ্ধতা দূর করার অঙ্গীকার করেন। মঞ্জু বলেন, জনসাধারণের চলাচলের সুবিধার্থে ফুটপাথগুলো দখলমুক্ত করার পাশাপাশি হকারদের লাইসেন্স প্রদান এবং সপ্তাহে এক দিন একটি করে সড়ক হকারদের ব্যবসার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে, যাতে স্বল্প আয়ের নগরবাসী ন্যায্য মূল্যে কেনাকাটা করতে পারেন। গণসংযোগকালে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট লতিফুর রহমান লাবু, অ্যাডভোকেট বজলার রহমান, সিরাজুল ইসলাম, স ম আবদুর রহমান, জাহিদুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট ফজলে হালিম লিটন, অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম, শেখ আবদুর রশিদ, আবু হোসেন বাবু, জহর মীর, অ্যাডভোকেট ইমতিয়াজ আলম বাবু, আবুল কালাম আজাদ, কাজী শাহনেওয়াজ নীরু, নিঘাত সীমা, মিসেস মনি, হায়দার তরফদার প্রমুখ।

আলোচনায় শ্রমিক ভোট : পাটকল শ্রমিকদের মজুরি কমিশনসহ ১১ দফা দাবি না মানা হলে খুলনার সাতটি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের ২৫ হাজার শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা ভোট দিতে যাবেন না বলে জানিয়েছেন শ্রমিকনেতারা। পাটকল সিবিএ-নন-সিবিএ শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক দ্বীন ইসলাম বলেন, ‘পকেটে টাকা নাই, পেটে ভাত নাই, সংসার চলছে না। তিন মাস মজুরি পাই না। সাত পাটকলের শ্রমিকদের প্রায় ১০০ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। বার বার শুধু প্রতিশ্রুতিই পাই। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, নির্বাচনে আমরা শ্রমিকরা এবার ভোট দিতে যাব না।’

সর্বশেষ খবর