প্রবল আন্তর্জাতিক চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত মিয়ানমারের সামরিক সরকার নতি স্বীকারের পথে রয়েছে বলে পর্যবেক্ষকদের ধারণা। এ অবস্থায় তারা বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফেরত নিতে জাতিসংঘকে সম্পৃক্ত করার বিষয়েও ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করছে।
বিবিসি জানিয়েছে, রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে ক্রমাগত টালবাহানার পর মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি গত মঙ্গলবার রাতে এক বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, ‘নিরাপদ প্রত্যাবাসনের জন্য জাতিসংঘকে সম্পৃক্ত করার এখনই উপযুক্ত সময়।’ এ ছাড়া জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সফরকারী প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ওইদিন সন্ধ্যায় এক বৈঠকের পর সু চির অফিস থেকে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। তাতে বলা হয়, শরণার্থীরা যাতে নির্ভয়ে রাখাইনে ফিরতে পারে— তা নিশ্চিত করা তার সরকারের পক্ষে সুবিধা হবে, যদি বিদেশিদের এই প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করা যায়। সু চি বলেন, ‘এ ব্যাপারে জাতিসংঘ উন্নয়ন সংস্থা (ইউএনডিপি) এবং জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) সঙ্গে একটি চুক্তি করার বিষয়ে আলোচনা চলছে।’ নিরাপত্তা পরিষদ প্রতিনিধি দলের সফরের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে করে সু চি তার বিবৃতিতে এমন কথাও বলেছেন যে, ‘এটি একটি মোড় ঘোরানো ঘটনা। গণতান্ত্রিক মিয়ানমারে সহিংসতার কোনো স্থান নেই। যারা ঘরবাড়ি হারিয়ে পালিয়েছেন, তাদের ফিরিয়ে আনতে আমাদের জোর চেষ্টা করতে হবে। সহিংসতার মূল কারণগুলো দূর করতে হবে।’ এই বিবৃতিকে মিয়ানমারে বিবিসির সংবাদদাতা নিক বিক অং সান সু চির অবস্থানে গুরুত্বপূর্ণ একটি পরিবর্তন হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ব্রিটেনের রাষ্ট্রদূত বিবিসিকে বলেছেন, সফরকারি কূটনীতিকরা সু চি এবং মিয়ানমারের সেনাপ্রধানকে স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘রাখাইনে নির্যাতন, হত্যা এবং ধর্ষণের ঘটনাগুলোর বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত না করলে আন্তর্জাতিক আদালতে (আইসিসি) বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’ এদিকে গত সপ্তাহে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের একটি অনুসন্ধানী রিপোর্টে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের ধর্ষণ এবং হত্যার ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য-প্রমাণ জোগাড় করা হচ্ছে, যাতে ভবিষ্যতে মিয়ানমারের সেনা-কর্মকর্তাদের আইসিসিতে বিচার হলে সাক্ষ্য-প্রমাণ হাজির করা যায়। বিবিসির সংবাদদাতা মনে করছেন, এই হুমকি মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ তৈরি করছে। জাতিসংঘের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বিবিসিকে নিশ্চিত করেছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে এবং তার বিশ্বাস অদূর ভবিষ্যতে একটি চুক্তি হতে পারে। তবে তিনি বলেন, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে কয়েক মাস সময় লেগে যেতে পারে।